হঠাৎ গণমুখী সরকার



বাংলানিউজ: হঠাৎই গণমুখী হয়ে উঠেছে সরকার। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গত সাড়ে চার বছরে দানা বাঁধা অনেক কঠোর আন্দোলন ও বিরূপ পরিস্থিতি শক্ত হাতে দমন করে এলেও হঠাৎ করেই যেন নরম হতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা।

আন্দোলন-সংগ্রামের দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ মেনে নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবি। যে সরকারের কাছে মাসের পর মাস মাথা খুটেও লাভ হয় নি, সেই সরকারই এখন মাথা তুললেই মেনে নিতে শুরু করেছে ছোট-বড় দাবি, আবদার। 

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কোন পক্ষ থেকে কোন দাবি উঠলে তা নিয়ে আলোচনারও যেন ঝুঁকি দিতে চাইছে না নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও সরকারের হাল ধরে থাকা ক্ষমতাসীনরা। 

গত দু’তিন দিনেই এমন নজির তৈরি হয়েছে বেশ কটি। ৠাবের গুলিতে পা হারানো লিমন হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৠাবেরই দু’টি মামলা প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্তে অটল থেকে হুট করেই প্রত্যাহার করে নিয়েছে দিন দু’তিন হলো। 

বিসিএসসহ সব ধরনের সরকারি চাকরির কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হতে না হতেই বলা হলো- ফল পুনর্বিবেচনা করা হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রবল আপত্তির মুখেও রমজানের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ১৭ দিন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর হুট করেই ব্যাক গিয়ার দিয়ে জানালো-ছুটি কমছে না রমজানে। 

অথচ, এই সরকারই গত সাড়ে চার বছরে অনেক কঠোর আন্দোলন উড়িয়েই দিয়ে এসেছে। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ঘটা বিডিআর বিদ্রোহের মতো বেসামাল পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে দক্ষ খেলোয়াড়ের মতো। পাত্তা দেয় নি বিরোধী দলের কোন আন্দোলন-সংগ্রামকে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হুসেইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হওয়ার পর সারা দেশে শুরু হওয়া জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব মাত্র দু’তিন দিনেই থামিয়ে দিয়েছিলো পাল্টা অ্যাকশনে। 

বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক আর ডিপ্লোমা নার্সদের মতো পেশাজীবীদের আমরণ অনশনে গলতে দেখা যায় নি সরকারকে। আশুলিয়া আর সাভারের শিল্পাঞ্চলে দফায় দফায় দানা বাধা অসন্তোষ ঠাণ্ডা করেছে ডাণ্ডা মেরে। 

ভাঙচুর আর জ্বালাও-পোড়াওয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হেফাজতকে ঢাকা ছাড়া করিয়েছে মাত্র ২০ কি ২৫ মিনিটে। 

আর লাগাতার হরতাল বা অবরোধ-রোডমার্চকে পাত্তাই দেয় নি ক্ষমতাসীনরা।

অথচ সেই কঠোর সরকারই হঠাৎ নরম সুরে গাইতে শুরু করেছে। হঠাৎই হয়ে উঠেছে গণমুখী। দাবি তুললেই কাজ হয়ে যাচ্ছে এখন। 

তাহলে কি কোটা বাতিলের দাবি সম্পূর্ণ মেনে না নিলেও এখন আংশিক মেনে নেবে সরকার পক্ষ? 

এটা হলেও কিন্তু মন্দ হয় না। যতোটুকু দাবি মানবে, আখেরে ততোটুকুই সরকা্রের লাভ। বিভিন্ন পেশা-শ্রেণি-সংগঠনের যেখানে যতো দাবি আছে মেনে নেওয়া্র প্রক্রিয়া শুরু করলে কার্যরত লাভবান হবে সরকার পক্ষই।
ইলেকশন আসছে। ক্ষমতাসীনরা বলেছে, ২৮ অক্টোবর সংসদ ভেঙে দেবে। তার মানে সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী আগামী জানুয়ারির মধ্যেই পরবর্তী নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তা সে যে ফরমেটেই হোক।

আর যদি নির্বাচন হয়, তাহলে সেই নির্বাচনের ভোট চাওয়ার আগে জনগণের যতো দাবি মেনে নেয় ততোই ভালো। ভোট চাওয়ার প্রেক্ষাপট রচনার জন্য এখন একের পর এক দাবি মানার নজির গড়ে সরকার পক্ষকে বলতে হবে- এই দেখো, আমরা তো তোমাদেরই প্রতিনিধি। তোমাদের জন্য ক্ষমতায় আছি। তোমাদের জন্যই ক্ষমতায় আসবো। তোমাদের দাবি পূরণেই জন্যই তো আমরা। 

সরকার কি এখন সেই পর্বটারই সূচনা করলো? এটাই কি তাদের হঠাৎ গণমুখী হয়ে ওঠার অন্তর্নিহিত কারণ?
যদি হয় তাহলে জনগণের লস নেই। আবার সরকারেরও লাভ। ক্ষমতাসীনরা যতো গণমুখী হয় ততোই মঙ্গল।