কক্সবাজারসহ দেশের ১৭ জেলা চরম ঝুঁকিপূর্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের ১৭টি জেলাকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। হরতালসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি চলাকালে এসব এলাকার পুলিশ স্টেশন ও সরকারদলীয় লোকজনের বাড়িঘরে হামলা এবং লুটপাট হতে পারে বলে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া হামলা চালানো হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজসহ নানা স্থাপনায়। সম্প্রতি এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে ওইসব এলাকায় সার্বক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটা উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করারও সুপারিশ করা হয়। 
ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, যশোর, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, গাজীপুর, টেকনাফ, পটুয়াখালী, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, খাগড়াছড়ি, ফরিদপুর ও পাবনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া যে কোনো সহিংস পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২৪ অক্টোবরের পর রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে ওইসব এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের লোকজন নাশকতা চালাতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর পুলিশ সুপার ও ডিসিদের জরুরি ভিত্তিতে তার কপি পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী সেসব এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু এলাকায় নাশকতামূলক কর্মকা- ঘটে গেছে। তবে সামনের দিনগুলোতে যাতে নতুন করে আরো বড় ধরনের কোনো নাশকতা ঘটতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে সব জেলার এসপিদের জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার মূল পরিকল্পনায় রয়েছে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। তারা হরতালসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজের পাটাতন খুলে ফেলা ও রেললাইন উপড়ে ফেলে ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার ছক এঁকেছেন। এর ধারাবাহিতকায় সদ্যসমাপ্ত ৬০ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে লালমনিরহাটে রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়। নারায়গঞ্জে আগুন দেয়া হয় ট্রেনের ইঞ্জিনে। হরতালের প্রথম দিনে জয়পুরহাটে আগুন দেয়া হয় ট্রেনের একাধিক বগিতে। এত কয়েকজন আহত হন।
সূত্র মতে, সামনের দিনগুলোতে কয়েকটি জেলা পর্যায় থেকে ঢাকামুখী রাস্তার প্রধান ব্রিজ ভেঙে ফেলা ও রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার পরিকল্পনা রয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। ইতোমধ্যে এসব জেলায় নতুন মুখের শিবির ক্যাডারদের সক্রিয় করা হয়েছে। নাশকতা সম্পন্ন করার জন্য গোপনে তৈরি করা হয়েছে একাধিক কমিটি ও উপ-কমিটি। মজুদ করা হয়েছে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র। শিবিরের নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকজনকে দেয়া হয়েছে নতুন মোবাইল ফোনসেট ও নাম্বার। এই নাম্বারগুলো শুধু নাশকতার কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে। আর এসব পরিকল্পনা করা হচ্ছে খোদ রাজধানী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বসে। এরপর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত যোগাযোগ করা হচ্ছে, ফেসবুক, টুইটার ও বস্নগসহ নানা ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে। 
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে চোরাগোপ্তা হামলা কমিয়ে দিয়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে জামায়াত-শিবির। নানা প্রচারণার পাশাপাশি কিছুদিন নিশ্চুপ থেকে তারা সঞ্চয় করছে পর্যাপ্ত শক্তি। এমপি-মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসভবনে হামলা, পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার তথ্য-প্রমাণ ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা সংগ্রহ করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ১৮ দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টা হরতালের আগের দিন ও হরতালের প্রথম দিন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এসকে সিনহা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, আইন ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিচারপতি জিনাত আরা, যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, একাত্তর টিভি, মোহনা টেভি, ভোরের কাগজ, ঢাকা জজকোর্ট, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়, র‌্যাবের গাড়ি, যাত্রীবাহী ফেরিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও বাসাবাড়িতে বোমা এবং ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সহিংস ঘটনা ঘটে। এতে হতাহত হয়েছে অনেকে। এসব ঘটনার পরই জানমাল রক্ষায় মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।
তবে দলের উচ্চ পর্যায় থেকে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের খালি হাতে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছেথ 'যেখানেই থাকুন দল বেঁধে থাকুন। আহতদের চিকিৎসার দিকে খেয়াল রাখুন। সাধারণ ওষুধপত্র (যেমনথব্যান্ডেজ কাপড়, এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, রক্ত বন্ধ হওয়ার তরল ওষুধ প্রভৃতি) সঙ্গে রাখুন।' পুলিশের বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছেথ 'এখন তো আর আগের মতো লাঠিপেটা নেই। চারদিকে গুলি আর গুলি। তাই পুলিশ ঠেকাতে ককটেল চার্জ করুন। যেখানেই থাকুন কৌশল অবলম্বন করুন।'যাযাদি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন