দণ্ডপ্রাপ্ত ১০, বিচারাধীন ৮

ঢাকা: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রায় তিন বছর ৭ মাসে ৯ম ও ১০ম অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন। সর্বশেষ ঘোষিত এ রায়ে রোববার বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াত নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিনকে একটি মামলায়ই মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে আরও ৮টি মামলার রায়।
এগুলোর মধ্যে ৬টি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা হলে একটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। 
একটি মামলার আপিল শুনানি চলছে। আরো ৪টির আপিল শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে আপিল বিভাগে। তবে বাকি ১টি মামলায় আপিল করা হবে এবং ১টি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পলাতক থাকায় আপিল করেননি।
বর্তমানে দুই ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে বিএনপি-জামায়াতের ৪ নেতা এবং আওয়ামী লীগের এক বহিষ্কৃত নেতার (জামায়াতের সাবেক রোকন) মোট ৫ মামলার। আরও ৩ বিএনপি-জামায়াত নেতার মামলার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তদন্ত চলছে ১১ জনের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছেন আন্তর্জাতিক ‍অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
সব মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন অথবা হতে যাচ্ছেন মোট ২৯ ব্যক্তি এবং দলগতভাবে জামায়াত।

আপিলে কাদের মোল্লার ফাঁসি
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে একটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে চূড়ান্ত এ রায় প্রদান করেছেন আদালত।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লাকে ৫টি অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ৩ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার দণ্ড বাড়িয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি আর ৪ মার্চ আসামিপক্ষ যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ থেকে খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেন। গত ১ এপ্রিল থেকে উভয়পক্ষের আপিলের একসঙ্গে শুনানি শুরু হয়ে ২৩ জুলাই শেষ হয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে।

ট্রাইব্যুনালের ৯ রায়

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাড়ে তিন বছরে ৯ মামলায় ১০ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত হয় প্রথম ট্রাইব্যুনাল। বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গত বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল। গঠনের পর প্রথম দু’বছর যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচারের গতি শ্লথ থাকলেও গত বছর এ প্রক্রিয়া গতি পায়।
এ পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬ মামলার রায়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ আর তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। 
ঘোষিত ৯টি রায়ের মধ্যে ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন ৭ জন। তারা হচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, পলাতক দুই জামায়াত নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার। এছাড়া জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছর, সাবেক মন্ত্রী বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমকে আমৃত্যু ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে।
ট্রাইব্যুনাল-২ ঘোষিত ৬টি মামলার মধ্যে ফাঁসির আদেশ দিয়ে রোববার আশরাফুজ্জামান ও মাঈনুদ্দিন, গত ১৭ জুলাই মুজাহিদ, ৯ মে কামারুজ্জামান ও ২১ জানুয়ারি বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে এবং গত ৯ অক্টোবর আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আলীম ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল-১ ঘোষিত তিনটি রায় দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে গত ১ অক্টোবর, গত ১৫ জুলাই ও ২৮ ফেব্রুয়ারি, যে তিন মামলায় সাকা চৌধুরীর ফাঁসি, গোলাম আযমের ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ ও সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হয়েছে। 
তাদের মধ্যে কাদের মোল্লার মামলায় আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে তাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সাঈদীর মামলার মাধ্যমে প্রথম ট্রাইব্যুনাল এবং বাচ্চু রাজাকারের মাধ্যমে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। সাঈদীর মামলাটি ছিল ট্রাইব্যুনালের ১ নম্বর মামলা। অন্যদিকে ৬টি মামলা আইন অনুসারে অথবা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনক্রমে স্থানান্তরিত হয় ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ।

আপিল শুনানি চলছে সাঈদীর

ঘোষিত অন্য ৫টি রায়ের মধ্যে সাঈদী ও গোলাম আযমের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেছেন রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষই। সাকা চৌধুরী, কামারুজ্জামান ও মুজাহিদ তাদের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার প্রেক্ষিতে আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।
সাঈদীর মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়েছে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে। প্রথমে শুনানি শুরু করে ট্রাইব্যুনালের ১২০ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শুনিয়েছেন আসামিপক্ষ। তারা সাক্ষ্য-প্রমাণভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপনও শুরু করেছেন। আগামী ১২ নভেম্বর ১২তম দিনের মতো শুনানির দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। অন্য মামলাগুলোর আপিল শুনানি শুরুর দিন ধার্যের অপেক্ষায় রয়েছে।
সাঈদীর মামলায় প্রমাণিত সব অভিযোগগুলোতে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ আর ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেছেন আসামিপক্ষ। একইভাবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সাজা অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে গোলাম আযমের ফাঁসির আরজি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ এবং ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ থেকে খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেছেন তিনি। সাকা চৌধুরী, কামারুজ্জামান ও মুজাহিদ আপিল করেছেন ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে। আব্দুল আলীমও শিগগিরই আপিল করবেন বলে জানা গেছে।
পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার প্রথম থেকেই পলাতক থাকায় আপিল করেননি। 

বিচার চলছে আরও ৫ জনের

দুই ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে বিএনপি-জামায়াতের আরও ৪ নেতা এবং আওয়ামী লীগের এক বহিষ্কৃত নেতার (জামায়াতের সাবেক রোকন)। 
তাদের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিচারিক কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও পক্ষে আসামিপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রোববার ৩ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে মামলার সর্বশেষ ধাপ যুক্তিতর্ক(আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন। এরপর মামলাটির রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করবেন ট্রাইব্যুনাল। 
নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ২৬ জন সাক্ষী। অন্যদিকে ৪ জন সাক্ষী নিজামীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেবেন বলে নির্ধারণ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
নিজামীর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট ১৬টি ঘটনায় অভিযোগ এনে বিচার চলছে।
বিচার চলছে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেনেরও, যিনি স্বাধীনতার পরে জামায়াতের রোকন ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জামায়াতের রোকন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক হোসেন। গত ১৬ মে মোবারকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন শেষে ২০ মে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের। এ পর্যন্ত ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে এবং আগামী ১২ নভেম্বর ১২তম ও শেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামল চৌধুরীকে আসামিপক্ষের জেরার দিন ধার্য রয়েছে। 
জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধেও চলছে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ। এ পর্যন্ত ২ জন সাক্ষী তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং আগামী ৬ নভেম্বর তৃতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২।
গত ১ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা এ কে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। জামায়াতের এই নেতাকে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ৪ ধরনের ১৩টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার ৫টি, গণহত্যার ৭টি এবং অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ১টি অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে ডা. মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সকল সহযোগী বাহিনীকে নেতৃত্ব দানের কারণে তিনি অভিযুক্ত হয়েছেন সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (উর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায়েও।
ইউসুফের বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার ৬ জন সাক্ষীসহ ৭১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য, দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাশেম আলীর বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্থানান্তরিত হয়েছে প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে। এ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন শুরু হবে ৭ নভেম্বর। গত ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-১। মীর কাশেম অভিযুক্ত হয়েছেন হত্যা, আটক, অপহরণ নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও লাশ গুমের মোট ১৪টি অভিযোগে। 
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার। গত ৯ অক্টোবর ১১টি মানবতাবিরোধী অপরাধে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। আগামী ১৭ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য(ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। 
গত ৫ ও ১৭ সেপ্টেম্বর দুই কার্যদিবসে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়।
খোকন রাজাকারের অনুপস্থিতিতেই তার বিচার শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। রাষ্ট্রীয় খরচে অ্যাডভোকেট আব্দুস শুকুর খানকে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 
গত ২৩ জুন হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দেশান্তর ও ধর্মান্তরিতকরণসহ ১১টি অভিযোগে খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউশন। ১৮ জুলাই এ অভিযোগ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন রাষ্ট্রপক্ষের মোট ৫০ জন সাক্ষী।

বিচার শুরুর অপেক্ষায় ৩ মামলা

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আটক জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানি চলছে। ইতোমধ্যেই অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি শেষ করেছেন প্রসিকিউশন। অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে আসামিপক্ষের শুনানিও শুরু হয়েছে এবং ১২ নভেম্বর শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।
গত ২৫ জুলাই এটিএম আজহারুলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৮ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি দাখিল করেন প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আজহারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে ৯ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। 
অপরাধের মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অপহরণ, গুরুতর জখম ও অগ্নিসংযোগ। এছাড়া সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিও (উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) আনা হয়েছে এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে।
অভিযোগগুলো প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষের ৩৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন ট্রাইব্যুনালে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সুবহানেরও বিচার শুরু হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানি শেষ করেছেন প্রসিকিউশন এবং শুরু করেছেন আসামিপক্ষ। আগামী মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর অসমাপ্ত শুনানি করবেন সুবহানের আইনজীবী। 
সুবহানের বিরুদ্ধে গত ১৯ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউশন।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগে সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রসহ ৮ ধরনের ৯টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে সুবহানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন তদন্ত সংস্থা। ওই দিনই তদন্ত সংস্থা তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেন। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৮৬ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউশন।
৯টি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তা ও জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ৪৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এ মামলায়।
আটক হয়ে জামিনে থাকা জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধেও তদন্ত শেষে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। 
গত ২২ সেপ্টেম্বর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছেন তদন্ত সংস্থা। প্রসিকিউশন এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করবেন ট্রাইব্যুনালে। কায়সারের বিরুদ্ধে আগামী ১০ নভেম্বর এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে প্রসিকিউশনকে আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২।
সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, আটক, ধর্ষণ, মুক্তিপণ আদায়, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রসহ ৯ ধরনের মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার ১২ জনসহ ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে, যার মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এমপিও রয়েছেন।
কায়সারের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ তদন্ত শুরু করে এ বছরের ২১ সেপ্টেম্বর শেষ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম।

তদন্তাধীন আরও ১২ মামলা

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বর্তমানে তদন্ত চলছে দলগতভাবে জামায়াত এবং ব্যক্তিগতভাবে আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে। যেসব আসামির বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলার তদন্ত কাজ চলছে তারা হলেন- চট্টগ্রামের রাউজানের বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের গিকা চৌধুরী, যশোরের মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, পিরোজপুরের জাতীয় পার্টি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার, বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরাজ মাস্টার, খুলনার আমজাদ মিনা, রাজশাহীর লাহার আলী শাহ, আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা জামালপুরের মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসেন ওরফে হাছেন আলী, মোঃ নাসির, আতাউর রহমান ননী এবং পটুয়াখালীর রুস্তম সিকদার।
তদন্তাধীন মামলার আসামি গিয়াসউদ্দিন কাদের গিকা চৌধুরী হলেন সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর ছোট ভাই। সাকা চৌধুরী ও মীর কাশেম আলীর ব্যাপারে চট্টগ্রামে তদন্ত করতে গিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য গিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ পান তদন্ত সংস্থা। অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে তদন্ত সংস্থা গত মার্চে চট্টগ্রামের রাউজান ও সাকা চৌধুরীদের বাড়ি গুডস হিলে যান।
২০১১ সালে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল চট্টগ্রামের রাউজানে যান। সে সময় এলাকার লোকজন তদন্ত দলের কাছে সাকা চৌধুরী ও গিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন। বিশেষ করে নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার সঙ্গে সাকা চৌধুরীর পাশাপাশি গিকা চৌধুরীর সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। 
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এ ঘটনায় রাউজান থানায় একটি মামলাও হয়েছিল। নূতন চন্দ্র সিংহের ছেলে চিত্তরঞ্জন সিংহের দায়ের করা মামলায় মুসলিম লীগ নেতা সাবেক স্পিকার ফজলুল কাদের ফকা চৌধুরী, তার দুই ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়।
অন্যদিকে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা সাবেক মন্ত্রী খুলনার একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে তদন্ত সংস্থা বাগেরহাটের সিরাজ মাস্টার ও খুলনার রূপসা এলাকার আমজাদ মিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ পান। 
এরপর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ মে বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার ডাকরা গ্রামে কালীমন্দিরে জড়ো হওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের তিন-চার হাজার নারী ও পুরুষের ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় কিরণ চন্দ্র চক্রবর্তী, বেলা রানী মণ্ডল, মারুময় ব্যানার্জিসহ ছয়-সাত শ’ মানুষ শহীদ হন। 
একই জেলার কচুয়া থানার মঘিয়া গ্রামে ১৫ জনকে হত্যা ও শাঁখারিকাঠি গ্রামে ৪০ জনকে হত্যার সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় একেএম ইউসুফ প্রধান আসামি। তার সহযোগী হিসেবে সিরাজ মাস্টার এসব অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শান্তি কমিটির সহ সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বারও মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে। 
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল সম্প্রতি দ্বিতীয় দফায় তদন্তে এসে তার সম্পৃক্ত থাকার সত্যতা পেয়েছেন। তিনি মঠবাড়িয়ার সূর্যমণি গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত। 
এছাড়া মঠবাড়িয়ার মেধাবী ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী গণপতি হালদার হত্যা ও উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত তুষখালী গ্রামের ৩৬০টি বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনায় তার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আবদুল জব্বার স্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধীদের সংগঠিত করেন। তার মদদে ও নির্দেশে শান্তি কমিটির নেতা ইস্কান্দার আলী মৃধার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর রাতে মঠবাড়িয়ার সদর ইউনিয়নের আঙ্গুলকাটা গ্রামের মিস্ত্রিবাড়ি ও হালদারবাড়িতে ৬০-৬৫ জন সশস্ত্র রাজাকার হানা দিয়ে ৩৭ জন হিন্দু লোককে ধরে নিয়ে যায়। সাতজনকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে বাকি ৩০ জনকে সূর্যমণি বেড়িবাঁধে নিয়ে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে ২৪ জন শহীদ হন। ভাগ্যক্রমে ছয়জন বেঁচে যান।
ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা জ্ঞানেন্দ্র মিত্র (৬২) বাদী হয়ে আবদুল জব্বার এবং ৬০-৬৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আশরাফ হোসেনের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে। জামালপুরে আলবদর বাহিনী গঠন করে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ রয়েছে আশরাফের বিরুদ্ধে। আশরাফ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে ময়মনসিংহ ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। এরপর তিনি জামালপুরে আলবদর বাহিনী গঠন করেন। তার এই আলবদর বাহিনীই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আশরাফের পর কামারুজ্জামান ময়মনসিংহ ছাত্রসংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন।
তবে তদন্ত শুরু না হওয়া মামলার সংখ্যা এর কয়েকগুণ। দেশের সাতটি বিভাগ থেকে আসা এসব মামলার সংখ্যা মোট পাঁচশ’ ৫৭টি। এসব মামলার আসামির সংখ্যা তিন হাজার একশ’ ৫৫ জন।
দলগতভাবে তদন্ত হচ্ছে জামায়াতের বিরুদ্ধেও
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে গত ১৯ আগস্ট থেকে তদন্ত করছেন আন্তর্জাতিক ‍অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। কয়েকজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে দেওয়া মামলার রায়ে ট্রাইব্যুনাল তার পর্যবেক্ষণে জামায়াতকে ক্রিমিনাল অর্গানিইজেশন (অপরাধী সংগঠন) বলার পর এ তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।
বিস্তৃত পরিসরে চলমান এ তদন্ত কার্যক্রমের মূল ফোকাস হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দলবদ্ধভাবে জামায়াতের সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ। তদন্ত করা হচ্ছে তাদের স্বাধীনতা-পরবর্তী অপকর্ম নিয়েও। 
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেব জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন।
মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি গত ১৮ আগস্ট নথিভুক্ত হলে পরদিন থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা অত্যন্ত সর্তকতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। জামায়াতের অতীত কার্যকলাপ, গঠনতন্ত্র, হাইকমান্ড ইত্যাদি বিষয়ের ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কর্মকাণ্ডের যেসব যেসব তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে সেগুলোসহ অতীত এবং বর্তমান সময়ে করা তাদের অপরাধগুলোই এ তদন্তে প্রাধান্য পাচ্ছে।

চলছে দ্বিতীয় পর্বের বিচার

মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম পর্বের বিচারের আওতায় রয়েছে জামায়াত-বিএনপির সাবেক-বর্তমান ৯ শীর্ষ নেতার মামলা। এসব মামলাগুলো থেকে ইতোমধ্যে আটটির রায় হয়েছে। ১টি মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সে মামলাটির রায়ও নভেম্বরের মধ্যেই আশা করা হচ্ছে।
মামলাগুলোর গতি-প্রকৃতি দেখে ওই মামলার রায়ও অক্টোবর মাসের মধ্যে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনের আগেই ৯টি মামলার সমন্বয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রথম পর্বের সমাপ্তি হতে পারে।
তবে ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় পর্বের বিচার শুরু হয়েছে। রোববার এ পর্বের মামলাগুলোর মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলাটির রায়ও ঘোষিত হয়েছে। চলছে অন্য ৪ মামলার বিচারিক কার্যক্রম। তদন্তাধীন আরও ৩টি মামলাও শিগগিরই আদালতে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৯টি রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোতে আরও গতি আনতে প্রসিকিউশনও বদ্ধপরিকর। প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, ৯টি রায়ের পর ট্রাইব্যুনালে মামলার চাপ অনেকাংশেই কমে গেছে। কাঙ্ক্ষিতভাবে গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী আরও ১ মামলার রায় নভেম্বর মাসের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে।
প্রসিকিউশন জানিয়েছেন, রায় ঘোষিত ৮ মামলা ও বিচারাধীন ১ মামলা অর্থাৎ শীর্ষ ৯ যুদ্ধাপরাধীর মামলাগুলোকে প্রথম পর্বের ধরা হয়।
অন্যদিকে রায় ঘোষিত, চলমান ও শুরুর অপেক্ষায় থাকা এবং তদন্তাধীন অন্য মামলাগুলোকে দ্বিতীয় পর্যায়ের মামলা ধরে সেগুলোতেও জোর আইনি লড়াই চালাচ্ছেন প্রসিকিউশন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন