প্রযুক্তি ডেস্ক: টুইটারকে কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। সম্প্রতি প্রযুক্তিবিষয়ক লেখক নিক বিলটন তাঁর লেখা ‘হ্যাচিং টুইটার: আ ট্রু স্টোরি অব মানি, পাওয়ার, ফ্রেন্ডশিপ অ্যান্ড বিট্রেয়াল’ বইটিতে এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছেন। প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ-বিষয়ক ব্লগ টেকক্রাঞ্চ এ তথ্য জানিয়েছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ছোট উদ্যোগগুলোকে হুমকি মনে করে গ্রাস করে ফেলে। তেমনি ১২০ কোটি ব্যবহারকারীর সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ আরেকটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট টুইটারকে কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
বিলটন লিখেছেন, জাকারবার্গ একবার নয় বরং দুইবার টুইটারকে কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবের মাধ্যমে একবার ও আরেকবার টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসিকে হুমকি দিয়ে।
টুইটারের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ডরসি সরে দাঁড়ানোর পর ২০০৮ সালের অক্টোবরে টুইটারের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা ইভ উইলিয়ামস ও বিজ স্টোনকে মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে বসার জন্য ফেসবুকের অফিসে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখনই টুইটারকে কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাকারবার্গ।
বিলটন আরও লিখেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে টুইটারকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার আগে জাকারবার্গ টুইটার কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়েছিলেন। টুইটারকে কিনে নেওয়ার জন্য ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ কয়েক মাস ধরে ডরসির সঙ্গে কথা বলে আসছিলেন। তখন ডরসিকে পাঠানো ফেসবুক কর্তৃপক্ষের মেইল থেকে বারবার প্রলোভন দেখাতো হতো। ই-মেইলে বারবার বলা হতো, ফেসবুক ও টুইটার উভয় কোম্পানির জন্যই এ বিষয়টি লাভজনক হতে পারে। এই ই-মেইলে বিভিন্ন কারণের পাশাপাশি ফেসবুকের স্পষ্ট হুমকিও ছিল যে, ফেসবুকের কাছে টুইটার বিক্রি না করলে টুইটারের মতোই আরেকটি সেবা নিজেরা চালু করবে ফেসবুক।
কিন্তু ডরসি প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে যাওয়ার পর জাকারবার্গের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। আর তখনই জাকারবার্গ আনুষ্ঠানিকভাবে উইলিয়াম ও স্টোনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় টুইটারের এ দুই কর্মকর্তা টুইটারের তখনকার আর্থিক মূল্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার বলে দাবি করেন। কিন্তু টুইটারের এত দর হাঁকার পরও এতে জাকারবার্গ খুব একটা অবাক হননি বলেই লিখেছেন নিক বিলটন। কেননা, ডরসি জাকারবার্গকে আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন টুইটার কিনতে চাইলে বিশাল অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
কিন্তু এত কিছুর পরও টুইটারকে কিনে নিতে পারেনি ফেসবুক। আর এর কারণ, টুইটার বোর্ডের কাছে পাঠানো উইলিয়ামের একটি ই-মেইল, যেখানে তিনি কোনো কোম্পানিকে বিক্রি করে দেয়ার পেছনে সম্ভাব্য তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন। নিক বিলটন তাঁর বইয়ে সেই ই-মেইলের উদ্ধৃতিও দিয়েছেন।
উইলিয়াম প্রথম কারণ দেখিয়েছেন, কোনো কোম্পানি বিক্রি করা যেতে পারে যদি তার দাম ভবিষ্যতে কোম্পানির মূল্য যত হতে পারে তার সমান হয়। কিন্তু তার যুক্তিতে টুইটারকে বিলিয়ন ডলার কোম্পানি বলে মনে করা হলেও মূলত টুইটারের মূল্য তার চেয়েও অনেক বেশি।
দ্বিতীয়ত, শক্তিশালী কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছ থেকে হুমকি এলে কোম্পানি বিক্রি করা যেতে পারে। কিন্তু উইলিয়ামের বিশ্বাস ছিল, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই টুইটারকে একেবারে শূন্যে পৌঁছাতে পারবে না।
আর তৃতীয়ত, দারুণ কোনো জায়গায় গিয়ে আরও ভালো কারও সঙ্গে কাজ করার সুযোগ এলেও কোম্পানি বিক্রি করা যায়, কিন্তু ফেসবুককে ‘অসাধারণ’ কোনো প্রতিষ্ঠান বলে টুইটারের কর্মকর্তাদের কাছে মনে হয়নি এবং ফেসবুকের ব্যবসা পদ্ধতি নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন টুইটারের কর্মকর্তারা।
উইলিয়ামের এই ই-মেইলের ফলে ২০০৮ সালে ৫০০ মিলিয়ন দাম ওঠার পরও মাত্র এক কোটি ১০ লাখ ব্যবহারকারীর কোম্পানি টুইটারকে ফেসবুকের কাছে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে বোর্ড।
টুইটার যে ফেসবুকের কাছে বিক্রি না হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা আর না বললেও চলে। উইলিয়াম ২০০৮ সালে যে দূরদর্শিতা দেখিয়েছিলেন তা সত্য প্রমাণ করে ২০১৩ সালে টুইটারের আইপিও বা ‘ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং’ অনুসারে এই কোম্পানির আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১.৯ বিলিয়ন ডলারে। ঠিক যেমনটা উইলিয়াম বিশ্বাস করেছিলেন।
বিক্রি না করলে টুইটারের মতো নিজেরাই আরেকটি সেবা চালু করবে ফেসবুক, এমন হুমকি দিলেও প্রায় দুই বছর পরও ফেসবুকের বাইরে স্বতন্ত্র কোনো সেবা ফেসবুক চালু করেনি। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কী জাকারবার্গের কাছ থেকে নতুন কিছু আশা করতে পারেন? সময়ই বলে দেবে এর উত্তর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন