‘অফ যা পিপল, বাড়িত যা পিপল, ফালতু পিপল’


শামস্ সয়ূজ : বাদশাহ হুমায়ুন একবার বলেছিলেন, ‘রাজ্য হলো এমন এক সুন্দরী রমণী যাকে চুমু খেতে হলেও সুতীক্ষ্ম তরবারি প্রয়োজন।’ আর সেই রাজ্যের ক্ষমতার লোভে মদমত্ত আমাদের শাসকেরা নেমে পড়েছেন রক্তের হোলিখেলায়। কবি শামসুর রাহমান স্বদেশকে তবু চলতে দেখেছিলেন ‘অদ্ভুত উটের’ পিঠে। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা যে কার পিঠে সওয়ার হয়েছি তা-ও বোঝার উপায় নেই। স্বদেশ হাঁটছে না দৌড়চ্ছে, নাকি থেমে রয়েছে তা-ও অজানা। চারিদিকে ধোঁয়াশা। বারুদ আর আগুনের ধোঁয়া, সাথে ব্যাথায় কাতর হয়ে পানিতে ঝাপসা চোখ। এসব কিছু মেনেই আমরা আমজনতা বা ‘ম্যাঙ্গো পিপল’ অপেক্ষাই রয়েছি পিতৃপ্রদত্ত প্রাণটা খোয়ানোর।

  
গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল প্রদত্ত গণতন্ত্রের সেই বিখ্যাত সংজ্ঞা, Democracy is a government of the people, by the people and for the people  এর এদেশীয় বর্তমান সংস্করণটি যেন, ‘অফ যা পিপল, বাড়িত যা পিপল, ফালতু পিপল’। কিংবা চলমান বোমাবাজির উৎসবের মাধ্যমে পালনরত হরতালের সংস্করণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ‘বার্ন দ্য পিপল, ঘ্যাচাং দ্য পিপল, ফালতু পিপল’। জনগণের জন্য আন্দোলনরত কিংবা সেই জনগণের হিতকামনায় আন্দোলন রহিতের সর্বনাশা চেষ্টায় রত আমাদের রাজনীতিবিদেরা মেতেছেন ধ্বংসের খেলায়।
  
গণতন্ত্র রক্ষার ধুয়ো তুলে তারা আগুন জ্বালছেন। আর সেই আগুনে পুড়ছে স্বদেশ, পুড়ছে অগণিত যানবাহন, পুড়ছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। আর দেশবাসীর জীবন! প্রজননপ্রিয় জাতির কাছে এ আর এমন কী ? হীরক রাজার দেশের সেইসব আমজনতার মতো আমরাও যেন জপছি অমোঘ বাণীÑ ‘যায় যদি যাক প্রাণ, গণতন্ত্র বহমান’।
  
শাসক দল জনগণের অধিকার তথা গণতন্ত্র রক্ষায় অতীতে হরতাল দিয়েছিল, বিরোধী দলও সেই একই অজুহাতে তাদের কোটা পূরণ করতে চায়। আর তাদের এসব মার-কাটারি হিসাব-নিকাশের যাঁতাকলে পড়ে চিড়ে-চ্যাপ্টা সেইই আমজনতা অর্থাৎ ম্যাঙ্গো পিপল।
  
সর্বশেষ, গত ক’দিনের হরতালে বোমার আঘাতে যেসব ক্ষুদে প্রাণ ঝরে গেছে কিংবা আরও যারা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে অপেক্ষা করছে অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তিলাভের তাদের কথা ভেবেই হয়তো ওপার বাংলার বিখ্যাত গায়ক কবীর সুমন তার এক গানে গণতন্ত্রের হর্তা-কর্তাদের বলেছিলেন, ‘শাবাস বড়দের দল এইতো চাই, ছোটরা খেলবে আসুন আমরা বোমা বানাই।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন