বিজয়ের মাসে দেশকে এগিয়ে নেয়ার শপথ নিই

আজ ১ ডিসেম্বর। বাঙ্গালির গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের মাসের প্রথম দিন। এবার ১৬ ডিসেম্বরে পালিত হবে স্বাধীনতার ৪২তম বছর। ১৯৭১ সালের এ মাসে বাঙ্গালি জাতির জীবনে নিয়ে এসেছিল মহান এক অর্জনের আনন্দ। সেই আনন্দ স্বাধীন হওয়ার, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নামে মানচিত্র বরাদ্ধ করার। তাই ডিসেম্বর আমাদের বাঙালি জাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। হাজার বছরে বাঙালির জীবনে এই ডিসেম্বর যেমনি বীরত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের পাতায় এ দিনটি অন্যন্য স্মরনীয়। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দেশ স্বাধীন করার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল সর্বস্তরের বাঙ্গালি। সে যুদ্ধের সমাপ্তি আসে ডিসেম্বরে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তসাগর পেরিয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালীর প্রতিরোধ যুদ্ধ এ মাসেই বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান লাভ করে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন অরেকটি দেশ। আর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সূচিত হয় বিজয়।

আর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও তাদের শৌর্যবীর্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ ডিসেম্বরকে পালন করা হয় ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে।

১৯৭১ সালে ডিসেম্বর মাসটি ছিল ঘর ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া বীরযোদ্ধাদের সদর্পে গৃহে প্রত্যাবর্তনের মাস। মুক্তিপাগল বাঙালি এ মাসেই পান তাদের চির প্রতীক্ষিত চূড়ান্ত বিজয়। প্রতিটি নাগরিক পায় স্বাধীন ভূখন্ডে জীবন মরণের শেষ ঠিকানা। মুক্ত হয় পরাধীনতার জিঞ্জির থেকে।

এ মাসের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে কোণঠাসা করতে শুরু করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। নিশ্চিত পরাজয় টের পেয়ে এ জাতি যেন কখনোই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতো না পারে সেজন্য ১৪ ডিসেম্বর হানাদারদের এদেশীয় দোসররা নির্বিচারে হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। এই মাস আমাদের শোক আর বেদনারও স্মৃতি বহন করে। তাই ডিসেম্বর শুধু বিজয়ের আনন্দে ভেসে যাওয়ার দিন নয়। এই মাস অনেক বেদনা আর শোকের স্মৃতিরও। বিজয়ের আনন্দে শুধু আত্নহারা হলে চলবেনা। ফিরে তাকাতে হবে দেশের তরে আত্নোৎসর্গকারী ব্যক্তিদের দিকে। না হলে বড়ই স্বার্থপরতার পরিচয় হবে।

খুব একটা মামুলি পদ্ধতিতে দেশ স্বাধীন হয়নি। দিতে হয়েছে চরম মূল্য। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এ মাসেই বিজয় অর্জিত হয় বাঙালির। ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্সের মাঠে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এরই মাধ্যমে অনুষ্ঠানিক যাত্র বিজয়ের। এ দিনে বিজয়ের নেপথ্যে থাকা বীর বাঙালীদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। মাগফিরাত কামণা করছি তাদের আত্নার। সমবেদনা জ্ঞাপন করছি স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিপক্ষের আঘাতে পঙ্গুত্ববরণকারীদের পরিবারের প্রতি। মহান আল্লাহর দরবারে তাদের জন্য কামণা করছি উত্তম জাজা।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও বর্নাঢ্য আয়োজনে পালিত হবে বিজয়ের মাসের প্রতিটি বিশেষ দিবস। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে থাকবে নানা কর্মসূচি। প্রাণের গভীর থেকে সারা মাসজুড়েই ঘরে ঘরে বাজবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’

ডিসেম্বর হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেমে অনুপ্রাণীত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্লাটফর্ম। সকলে মিলে মিশে দেশকে এগিয়ে নেয়ার শপথ নিই। মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সকল শহীদ এবং গাজী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রইলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন