নরুল আমিন হেলালী
কক্সবাজার শহর থেকে শুরু করে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে শুধুমাত্র একবেলা খাবার জোগাড় করতে এই দরিদ্র পরিবারের শিশুরা দৈনিক ১০ তেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। চরম দারিদ্রের কারণে তাদের বাবা-মা তাদেরকে এধরনের কাজে ঠেলে দিতে বাধ্য হয়।
জেলা শহর ছাড়া প্রত্যেক উপজেলা হাঁট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিশুরা ধাতব কারখানা, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, প্লাস্টিক কারখানা, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, গাড়ির গ্যারেজ, ঝালাই কারখানা, রিক্সা মেরামত, মোটর সাইকেল ওয়ার্কশপ, গাড়ির টেম্পোর হেল্পার, হাড়ি-পাতিল বানানো, ইট ভাঙ্গানো, রিক্সা, টমটম, ভ্যান, ঠেলা গাড়ি চালানো, হোটেল- রেস্তোঁরা, বিভিন্ন দোকান-কর্মচারি থেকে শুরু করে ছোট ছোট কুটির শিল্পে বাধ্য হয়ে শৈশব বিক্রি করে চলেছে এসব শিশু শ্রমিকরা। তেমনি একজন ইট ভাটাতে ইট ভাঙ্গার কাজ করছে সুন্দর ফুট ফুটে ১২ বছরের শিশু আলাউদ্দিন। দেখা গেছে, ছোট ছোট নরম হাতে সে প্রতিনিয়ত ইট ভাঙছে। মাথার উপর ছেঁড়া তালি দেয়া একটি ছাতা আছে, তারপরও সে ঘামছে। রিক্সার টিউব কেটে হাতের আঙ্গুলগুলো বেঁধে রেখেছে। স্কুলে না গিয়ে ইট ভাঙ্গার মতো কঠিন কাজ করছ কেন জানতে চাইলে সে বলল, পেটে ভাত না থাকলে কি স্কুলে যাওয়া হয়। তরপর আরও কিছু জানতে চাইলে সে তার জীবনযুদ্ধের যে কাহিনী শুনালো তা বড়ই করুণ। বাবা থেকেও নেই। মা অসুস্থ, বাবা ৩ সন্তানসহ তার মাকে ফেলে আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। তাদের খোঁজ খবর নেয়না। মাও ইট ভাঙ্গার কাজ করত। কিন্তু তিনি এখন অসুস্থ। এই অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরতেই আলাউদ্দিন এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। সে এখন শৈশব বিক্রি করা শিশু শ্রমিক। তবে তার দু:খ একটাই সে বড়দের চেয়ে কম কাজ করেনা, তারপরও তার মজুরি বড়দের অর্ধেকের চেয়ে কম। শুধু আলাউদ্দিন নয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৯ সালের এক জরিপে জানা যায়, দেশের ৩৫ লাখের বেশি শ্রমিকের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১৩ লাখ শিশু। যা মোট শিশু শ্রমিকের ৪১ শতাংশ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের শিশু শ্রমিকরা প্রায় ৩৪৭ ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। এর মধ্যে ৪৭ ধরনের কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৩ ধরনের কাজকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্য একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ৬ থেকে ১৬ বছরের মোট ৪ লাখ ২০ হাজারের বেশি শিশু বাসাবাড়িতে কাজ করে। এদের শ্রমঘন্টা ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা। এই পরিসংখ্যানের বাইরে যে কত শত শিশু শ্রমিক আছে সে হিসাব বলা মুশকিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন