নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম, রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত

মোঃ ইউনুছ
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগিরা। ডাক্তার সংকট, প্রশাসনিক ও সচেতন মহলের তদারকির অভাবের কারনে উপজেলার প্রায়
৭০ হাজার জনসাধারণের অধিকাংই বেসরকারি ক্লিনিক ও পার্শ্ববর্তী রামু, কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছে। এতে করে হাসপাতালে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গা হেলিয়ে মাসের পর মাস গুনছেন। জানা গেছে, বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ডাক্তার রয়েছে মাত্র দুই জন। অধিকাংশ সময় টিএসও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকলেও অপর এক ডাক্তারও বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে রয়েছেন বাইরে। মূলত এ হাসপাতালে চিকিৎসা সহকারীরা সাধারণ রোগীদের কাছে ডাক্তার হিসেবে পরিচিত। ১৩ জুন সরেজমিনে ৩১ শয্যা হাসপাতালে পরিদর্শন করে দেখা যায়, পুরুষ ওয়ার্ডে রোগী রয়েছে একজন এবং মহিলা ওয়ার্ডে রয়েছে পাঁচজন রোগী। তবে হাসপাতালের রেজিষ্ট্রাট খাতায় দেখা যায় ২৫জন রোগীর নাম অর্ন্তভুক্তি রয়েছে। তবে কর্মরত সেবিকা এ প্রতিবেদকের কাছে অনেক রোগী চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে ত্যাগ করেছে বলে দাবী করেন। গত এক সপ্তাহ যাবত একই চিত্র লক্ষ করা যায় হাসপাতালে।
মহিলা ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে আসা রোপিয়া আক্তার ও ফাতেমা জানান, তারা দুই দিন ধরে তাদের শিশু ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করান। তবে চিকিৎসার জন্য আসলেও তাদের ছেলে সম্পুর্ণ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত বলে জানান। সকালে ও রাতে একজন চিকিৎসক এসে ভাল করে রোগী না দেখেই কাগজ (এডমিশন ট্রিটমেন্ট সিট) দেখে চলে যান। অপরদিকে রোগী নিয়ে আসা সুমি ও নূর জাহান জানান, অসহায় লোক হওয়ায় তারা সরকারী  হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছেন। তবে এখান থেকে সরকারী কোন ঔষধ তাদের দেওয়া হয়নি, চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন লিখে বাইরে থেকে ঔষধ নিয়ে আসার জন্য বলেছেন। এছাড়াও হাসপাতালে চিকিৎসক ও সেবিকাদের দুর্ব্যবহারের কথাও তারা এ প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন। রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষনিক ডিউটিরত সেবিকা প্রতিভা রাণী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি, বাঙালীরা উপকার স্বীকার করতে চায়না ভঙ্গিমা দেখিয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। সূত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালে প্রয়োজনমত চিকিৎসক না থাকায় গ্রমাঞ্চলের অসহায় সাধারণ রোগীরা বাধ্য হয়ে কক্সবাজারসহ অন্যত্র রোগী নিয়ে যেতে বাধ্য হন। মাঝে মধ্যে কোন চিকিৎসক থাকলেও জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করান না তারা। এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুপস্থিত দেখা যায়। 
অভিযোগ পাওয়া যায়, এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন এবং মাসের মধ্যে ১০-১২দিন অফিস করে পুরো মাসের বেতন উত্তোলন করেন। এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ রোকেয়া খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালে পর্যাপ্ত ঔষধ আছে দাবি করে তিনি বলেন, ঔষধ না পাওয়া এবং চিকিৎসা বঞ্চিত কেউ এ পর্যন্ত তাকে অভিযোগ করেননি। তাদের হাসপাতাল থেকে যে পরিমাণ ইনজেকশন ও এন্টিবায়োটিক ঔষধ রোগীদের দেওয়া হয় তা অন্য কোথাও দেওয়া হয়না। তবে অভিযোগর বিষয়টি তিনি ব্যাক্তিগতভাবে খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি সরকারি একটি দপ্তরে কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সাংবাদিক এবং প্রশাসন নিয়মিত তদারকি করলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন