মিষ্টি পান চাষীদের মুখে অপূর্ব হাসি

মহেশখালীতে পানের বাম্পার ফলন

মোহাম্মদ সিরাজুল হক সিরাজ
মহেশখালীর ইতিহাসে নজির বিহীন জগৎ বিখ্যাত মিষ্টি পান বরজের বাম্পার ফলনের কি অপূর্ব দৃশ্য, হাসির ঝিলিক। আনন্দের মাঝে নজর কাড়ার মত আকর্ষণ করেছে।
মহেশখালীতে একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী। এই দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর জন বসতির সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষেরও অধিক। এর মধ্যে পৌরসভা মহেশখালী সহ তিনটি ইউনিয়নে পাহাড় নাই। সেগুলির মধ্যে কুতুবজোম ইউনিয়ন, ধলঘাটা ইউনিয়ন, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। আর বাদবাকী ৫টি ইউনিয়ন হলো গভীর অরণ্যে ঘেরা বিশাল ১২ নং পাহাড়। সেই বিশাল গভীর অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ে আছে- সেই ইউনিয়নগুলি হলো- ছোট মহেশখালী, শাপলাপুর, বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া। এই বড় বড় পাচটি ইউনিয়ন হলো ১২ নং পাহাড় এবং গভীর জঙ্গল ও অরণ্য। এই বিশাল পাহাড়ের অরণ্যে আছে হাজার হাজার ছোট বড় জগৎ বিখ্যাত মিষ্টি পানের রূপিত পান বরজ আছে। এদিকে শাপলাপুর ইউনিয়নের গভীর পাহাড়ের অরণ্যের ভিতরে মিষ্টি পানের ৯ হাজার ছোট বড় মিষ্টি পানের বরজ আছে বলে চাষী সূত্রে ও এলাকার জনপ্রতিনিধি আব্দুল কাদির প্রঃ ভাসা মেম্বার জানান। ছোট মহেশখালী ইউনিয়নে এলাকার জনপ্রতিনিধি ঠাকুরতলার মেম্বার নারায়ন চন্দ্র দে ও চাষীরা জানায় তাদের ইউনিয়নে ১০ হাজার উন্নত মানের জগৎ বিখ্যাত মিষ্টি পানের বরজ আছে বলে জানায়। বড় মহেশখালী ইউনিয়নে ৮ হাজার ৫ শত মিষ্টি পানের ছোট বড় পান বরজ আছে বলে জানায় স্থানীয় পান চাষীগণ ও এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেম্বারগণ। হোয়ানক ইউনিয়নে প্রায় খুবই উন্নত মানের বিখ্যাত মিষ্টি পানের ১১ হাজার বরজ আছে বলে স্থানীয় মেম্বার জনপ্রতিনিধি, পান চাষীরা জানায়। কালারমারছড়া ইউনিয়নে বিখ্যাত মিষ্টি পানের খুবই উন্নত মানের ১৩ হাজার উন্নত মানের বিশাল বিশাল পান বরজ আছে বলে জানায় স্থানীয় পান চাষীগণ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় চেয়ারম্যান আবুল কালাম ছিদ্দিকী। গভীর ১২ নং পাহাড়ী অরণ্যে পান বরজের মাটি পান চাষীদের সূত্রে জানা যায় এবং তারা বলেন পান বরজের মাটিগুলি ঘৃত ও লালচে রঙের গভীর পাহাড়ী অরণ্যে সর্বপেক্ষা ভাল জাতের উন্নত মানের পান জন্মায়। তবে সর্বজন জানায় সৃষ্টি কর্তারই অসীম রহমত দানের উপর এই মহেশখালীর পাহাড়ের মাটি ও জগৎ বিখ্যাত মিষ্টি পানের জন্ম, পান বরজ হয়। এই জগৎ বিখ্যাত মিষ্টি পানের বরজে বিপুল পরিমান খরচ হয়। বিভিন্ন রকম সত্যবাদিতা করে বিভিন্ন রকম সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় বলে জানান পান চাষীরা। যেমন এতে পান চাষীরা বলেন সর্ব প্রথমে পাহাড়ের ঢালু জায়গায় আটি করে ঐ আটিতে গোবর, সার, খৈল, শুকনা মাছের গুড়ি দিয়ে মাটি সঙ্গে মিশিয়া ঐ মাটি শুকাইতে হয়। এরপর বিভিন্ন ধরনের ঔষুধপত্র ও কীটনাশক জাতীয় মাটিতে মিশাতে হয়। এর ১০ দিন পর পবিত্র অবস্থায় পানের চারা রোপন করা হয়। পানের চারা রোপন করার পর পান বরজের চারিদিকে টেংরা যুক্ত ঘেরা দিয়া কোন ধরনের গরু, ছাগল বা অন্যান্য প্রাণী ঢুকিতে না পারে সেরকম ভাবে গিরিয়া রাখিতে হয়। এরপর প্রতিদিন রোদ্র উঠার সাথে সাথে পান গাছের চারাতে পানি দিতে হয়। পানের চারা একটু বড় হইলে উপরের দিকে ছনের ছাউনি দিতে হয়। যেন প্রখর রোদ্র পানের ক্ষতি করিতে না পারে। এরপর শুকনা করে গোবর ও খৈল অন্যান্য মিশিয়া পান গাছের চারাতে দিতে হয়। পান গাছ দুই হাত উচ্চ হইলে উলা গাছের উলা দিয়া বাঁশের কাঠি সাথে বাধিঁয়া দিতে হয়। এরপরে প্রতি তিন দিন পর পর বড় বড় পান গুলি তুলিয়া লইয়া আটি বাঁধিয়া বাজারে বিক্রী করে বলে পান চাষীরা জানায়। প্রতিটি পানের বিরার অর্থ কি? জানতে চাইলে? পান চাষীরা বলেন, চারটি পানে একটি গন্ডা হয়, ৪৫ গন্ডাতে এক বিরা বলা হয়। এই মিষ্টি পান বিক্রয়ের বাজার কোথায় কোথায় বসে চাষীদের থেকে জিজ্ঞাসা করিলে চাষীরা বলেন প্রধান পান বিক্রয়ের বাজার বসে বড় মহেশখালী নতুন বাজার মাঠে, কালারমার ছড়া বাজার মাঠে, হোয়ানক বাজার মাঠে, ছোট মহেশখালী লম্বা ঘোনা বাজার মাঠে, শাপলাপুর বাজার মাঠে, মহেশখালী পৌরসভার লামার বাজার মাঠে মিষ্টি পান বিক্রয়ের বাজার বসে। বড় বড় টুকরি করে পান ভর্তি করে ব্যবসায়ীরা পান লইয়া যায় ট্রাক গাড়ীতে করিয়া। চট্টগ্রাম, সাতকানিয়া, ঢাকা, সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পান ব্যবসায়ীরা মিষ্ঠিপান ক্রয় করে ট্রাক গাড়ীতে করিয়া পান লইয়া যায়। প্রতিটি শুক্রবার, সোমবার এই মিষ্ঠিপানের পান বিক্রয়ের ও পান ক্রয়ের বাজার বসে। সব চাইতে বেশি পান বিক্রী হয় এবং ক্রয় হয় বড় মহেশখালী নতুন বাজার মাঠে। অদ্য শুক্রবার ক্রয় ও বিক্রয় পান চাষীদের ও ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাইলে এই বাজারে কত টাকার পান ক্রয় বিক্রয় হয়? তারা বলেন, অনুমান দেড় কোটি থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার পান ক্রয় বিক্রয় হয় বলে জানায়। এই ভাবে অন্যান্য প্রতিটি বাজারে শুক্রবার আর সোমবারে এই মিষ্ঠি পান বিক্রী ও ক্রয় হবে বলে রাজনৈতিক নেতা সচেতন মহল বিভিন্ন পেশাজীবিরা জানায় ৯ কোটি টাকারও বেশি মিষ্ঠি পান মহেশখালীর প্রতিটি বাজারে শুক্রবার, সোমবারে ক্রয় বিক্রি হয়। পান চাষীরা মিষ্ঠিপান ছড়া দামে বিক্রী করিয়া আনন্দে উৎপুল্ল অবস্থায় দেখা যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৩ বৎসর আগে এই মহেশখালীতে এ ধরনের পানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। এই বর্তমান এরচেয়েও বেশি এ বৎসর হয়েছে। প্রতি পান বরজের চাষীদের হাসির কি অপুর্ব আনন্দ, যেদিকে তাকায় চারিদিকে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। চাষীদের সূত্রে আরো জানা যায় যদি সরকারীভাবে কোন অনুদান বা সাহায্য সহযোগিতা করলে বিদেশে কোন কোটি কোটি টাকার জগৎ বিখ্যাত মিষ্টি পান রপ্তানী করিতে পারিবে এবং দেশের বৈদেশিক আয়ও বৃদ্ধি পাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন