আমের পুষ্টিগুণ

ডা. মুর্তুজা বেগম
বর্তমান মৌসুম পাকা আমের। উচ্চমাত্রার চিনি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ‘সি’ বসতি গড়েছে এই ফলে। ভিটামিন সি সব রকমের চর্মরোগের বিরুদ্ধে উৎকৃষ্ট হাতিয়ার। চুল সুন্দর রাখতেও এর অবদান
গুরুত্বপূর্ণ। আর ভিটামিন এ চোখের মাংসপেশ্লিায়ু, শিরা-উপশিরার পুষ্টি জোগায়। ছোটদের রাতকানা রোগ এবং বড়দের চোখে ছানি পড়া, চোখ ওঠা, চোখের অভ্যন্তরীণ রক্তচাপ কমে যাওয়া এ সমস্যাগুলো হয় অনেক কারণের জন্য। তার মধ্যে ভিটামিন এর অভাব অন্যতম। আমের ভিটামিন এ গর্ভস্থ শিশুদের জন্যও উপকারী। শিশুর চোখের গঠন মাতৃগর্ভ থেকেই হয়ে যায়। গর্ভবতী মহিলারা নিঃসন্দেহে খেতে পারেন আম। তবে যাঁদের মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁরা আম খাবেন না। আম খুব দ্রুত রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তবে যাঁদের ডায়াবেটিস নিয়মিত নিয়ন্ত্রিত, তাঁরা খেতে পারেন এবং অবশ্যই পরিমাণে অল্প খাবেন। আমে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন দেহের øায়ুগুলোকে করে শক্তিশালী। মস্তিষ্কের øায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে রাখে সতেজ। ঘুম আসতে সাহায্য করে। আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। আঁশ-জাতীয় সবজি, ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, মুখের ব্রণ প্রতিরোধ করে।
তারুণ্য বজায় রাখতে এর ভূমিকা অপরিসীম। এতে খনিজ লবণের উপস্থিতিও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। দাঁত, নখ, চুল মজবুত করার জন্য আমের খনিজ লবণ উপকারী ভূমিকা পালন করে।
আম ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট জরুরি। কাঁচা ও পাকা দুই ধরনের আম ভীষণ উপকারী। তবে কাঁচা আম রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়ায় না, কিন্তু পাকা আম রক্তে দ্রুত চিনির পরিমাণ বাড়ায়। কাজ করার শক্তি বাড়ানোর জন্য আম ভীষণ জরুরি ফল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। মোটা ব্যক্তি ও কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা আম কম খাবেন। কারণ, আম দ্রুত মোটা করে। আর এতে পটাশিয়াম বেশি থাকার জন্য কিডনির সমস্যা হবে। পাঠক, খেয়াল রাখুন, ডায়রিয়া চলাকালে আম খাবেন না। এতে ডায়রিয়া আরও বেড়ে যাবে। আর আমের আচারের তুলনায় টাটকা আমই বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ।এই মৌসুমের সবজি কচুর লতি। প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে এই সবজিতে। প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গর্ভস্থ অবস্থা, খেলোয়াড়, বাড়ন্ত শিশু, কেমোথেরাপি পাচ্ছে—এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি ভীষণ উপকারী। এতে ক্যালসিয়াম রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে। এই সবজিতে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি। এই আঁশ খাবার হজমে সাহায্য করে, দীর্ঘ বছরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যেকোনো বড় অপারেশনের পর খাবার হজমে উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে এটি। দেহের বর্জ্য বের করার জন্য চাপ দিলে যেকোনো অপারেশনের পর সেলাইয়ের স্থান দুর্বল হতে পারে।