আরো পোশাক কারখানা ধসের আশঙ্কা : জরিপ

এ কে আজাদ : 
বাংলাদেশের বেশির ভাগ পোশাক কারখানাই ধসে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে। দেশের পাচ ভাগের তিন ভাগ অর্থাৎ ৬০ শতাংশ কারখানাই ধসে পড়তে পারে। সাম্প্রতিক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে বৃটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’।


এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের এক দল প্রকৌশলী ছয় শতাধিক ভবনের ওপর একটি জরিপ চালায়, যেগুলোতে ৩ হাজারের বেশি পোশাক কারখানা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশ ভবনই ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।’

গার্ডিয়ান ছাড়াও জি নিউজ, নিউস্ট্রাক ইন্ডিয়া, ইনঅ্যাজিস্ট, টপিক্স, অলওভার ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডসহ বেশ কয়েকটি আšত্মর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদনটি ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। 

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ এপ্রিল ঢাকার অদূরে সাভারে নয় তলা রানা প্লাজা ধসে পড়ে ১১শ’র ও বেশি (১১৩০ জন) পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। এদের অধিকাংশ নারী শ্রমিক, যারা যুক্তরাজ্যের বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রাইমার্কের মতো কোম্পানির জন্য কাপড় তৈরি করতো। আর এই রানা ভবন ধস ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্যোগ।

এতে বলা হয়, এই শিল্প দুর্যোগের পর বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা শিল্প কারখানার ওপর একটি জরিপ চালায়। তাতে দেখা যায় দেশের তিন-পঞ্চমাংশ পোশাক কারখানাই ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

জরিপে বলা হয়, পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য পোশাক তৈরি বাংলাদেশের এমন লাখ লাখ পোশাক শ্রমিকের জীবন ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ, যা পশ্চিমা খুচরা বিক্রেতাদের গভীর উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। অবশ্য রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় বহুসংখ্যক শ্রমিকের শ্রমিকের প্রাণহানির পর দেশটির পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নতির চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। বাংলাদেশে উৎপাদিত ৮০ শতাংশের বেশি পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে। বাংলাদেশে মোট শিল্প শ্রমিক রয়েছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন। এর মধ্যে শুধু পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন, যাদের বেশির ভাগই নারী। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

প্রকৌশলী দলের প্রধান প্রফেসর মেহেদি আনসারির বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, ‘বাংলাদেশের পোশাক কারখানা রয়েছে এমন ভবনগুলোর ৬০ ভাগই ধসের আশঙ্কায় রয়েছে। তবে এর মানে এই না যে, আগামী সপ্তাহে বা আগামী মাসেই এগুলো ধসে পড়তে পারে। এর অর্থ হচ্ছে- এগুলো সংস্কার করা না হলে তা হবে দায়িত্বহীনতার সামিল।’

বলা হয়, ব্যবস্থাপকরা বিপদ সংকেত যেমন-ফাঁটল ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন নয়। যেমনটি ঘটেছিল গত ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পড়ার আগে। ভবনে ফাঁটল দেখা দেয়ায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে চায় নি। কিন্তু তাদেরকে বলা হয়েছিল- এতে চিšত্মার কোনো কারণ নেই এবং তাদেরকে কাজে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

বুয়েটের এই গবেষক দল তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর ওপর সরেজমিন জরিপ চালিয়েছে। পাশাপাশি তারা ভবনের মূল নকশা ও মাটিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে। গবেষক দলটি জানায়, ৫ হাজারের বেশি পোশাক কারখানাও অনুমতি থাকলেও সক্রিয় রয়েছে ৩ হাজারের কিছু বেশি কারখানা। এগুলোর অধিকাংশই রাজধানী ঢাকায়। আর এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে এমন সব ভবনে যেগুলো আগে কোনো আবাসিক ভবন বা অফিস ছিল।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় পুলিশি তদšেত্ম দেখা যায়, গত ২০০৬ সালে পাঁচ তলায় ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। প্রফেসর আনসারি বলেন, পাঁচ তলা বিশিষ্ট ওই ভবনের নকশা ও অবকাঠামো সঠিক ছিল। কিন্তু পরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অবৈধভাবে ভূয়া কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করে এর ওপর আরো তিন তলা বর্ধিত করা হয়। আর এই বর্ধিত ভবনের অতিরিক্ত বোঝাই’র এর কারণেই ভবনটি ধসে পড়ে।

এই ভবন ধসের ঘটনায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত করা হয়েছে। তদšেত্ম দেখা যায়, সে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতার প্রভাব খাঁটিয়ে (সোহেল রানা) স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে বর্ধিত ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়।

ধসের পর তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়, বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহৃত জেনারেটরের কম্পনের ফলেই ভবনটি ধসে পড়েছে। তাছাড়া রাজধানী ঢাকা ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের যেসব ভবনে পোশাক কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, এগুলোতে মূলত শিল্প কারখানা হিসেবে ব্যবহারের জন্য নির্মাণ করা হয়নি, যা এখন বড়ই উদ্বেগের বিষয় দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ ভবনগুলোই নির্মাণ করা হয়েছে কোনো নিয়ম কানুন ছাড়াই।

প্রফেসর আনসারি বলেন, ‘দেশে আরো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন (যেগুলোতে পোশাক কারখান রয়েছে) থাকতে পারে। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের সঠিক জানা নেই। আমাদের গবেষণা দল এ নিয়ে কোনো আতঙ্ক ছড়াতে চায় না। সুতরাং আমরা বলবো- সাময়িকভাবে এগুলোতে কাজ চালানো যেতে পারে।’ গার্ডিয়ান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন