মারাত্মক হুমকির মুখে সেন্টমার্টিন

কক্সবাজারবাণীঃ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অস্তিত্ব সঙ্কটে দ্বীপবাসী এবং জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের অস্বাভাবিক চাপ, শামুক-ঝিনুক ও প্রবাল আহরণ, পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকা- এবং বহুমাত্রিক দূষণের জন্য মূলত দ্বীপটি হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, ৯৪’র জলোচ্ছ্বাসসহ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এ দ্বীপে পানি ওঠেনি। ভাঙনের সমস্যাও তেমন একটা ছিল না। কিন্তু দ্বীপে বসতি শুরুর দীর্ঘ ২০০ বছর পর, গত মে মাসের শেষের দিকে মাত্র কয়েকদিনের বৃষ্টি আর পূর্ণিমার জোয়ারে হঠাৎ সেন্টমার্টিনে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। দ্বীপের চতুর্দিকে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের কবলে পড়ে দ্বীপের চারপাশে বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে যায়।
প্রথম দিনেই দ্বীপের আটটি বসতঘরসহ প্রায় ২১টি স্থাপনা পানিতে ধসে যায়। ভাঙনের কবলে পড়ে দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম অংশে অবস্থিত একমাত্র কবরস্থানটির ১৫০ ফুটেরও বেশি সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে গেছে। ফলে শঙ্কিত হয়ে পড়ে দ্বীপের বাসিন্দারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জোয়ারের পানি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে দ্বীপে চার পাশেই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বেশি ভেঙেছে উত্তর-পশ্চিম অংশে। এদিকে বিস্তৃর্ণ কেয়াবন সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের একমাত্র কবরস্থানটির প্রায় দেড়শ ফুটেরও বেশি সাগরে তলিয়ে গেছে। মাটি সরে যাওয়ায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িসহ আশপাশের কয়েকটি সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়াও দ্বীপে প্রবাল ও শৈবালযুক্ত পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটাচলা, অবাধে প্রবাল, শামুক, ঝিনুক আহরণ, অপরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার কারণে অব্যাহতভাবে দ্বীপের পানি ও মাটি দূষণ চলছে।


প্রাকৃতিক কেয়াবন ও ঝোপঝাড় ধ্বংস করা হচ্ছে। অবাধ চলাচল এবং প্রাকৃতিক আকার নষ্ট করে নিজেদের মতো করে ব্যবহারের কারণে ধ্বংস হচ্ছে বালিয়াড়ি। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল আমিন জানান, এ দ্বীপে মানুষের বসবাস শুরু হয় প্রায় ২০০ বছর আগে। এ ২০০ বছরের ইতিহাসে এ রকম জলোচ্ছ্বাস এবং ভয়াবহ ভাঙন এই প্রথম। তিনি জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপটি উত্তর-দক্ষিণ প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। কিন্তু ভাঙনের কবলে পড়ে বর্তমানে তিন কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে এবং ভাঙতে ভাঙতে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে এ দ্বীপটি। ভাঙনের কবলে পড়ে দ্বীপটি হারিয়ে যাবে বর্তমানে এমন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দ্বীপের সাধারণ মানুষ। তিনি জানান, দ্বীপটি রক্ষায় স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে সেন্টমার্টিনকে রক্ষার জন্য একটা নীতিমালা করা প্রয়োজন।


বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেন্টমার্টিন কনজারভেশন প্রকল্পে মার্কিন কোরাল বায়োলজিস্ট টমাস টমাসিকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৮৫০ জন পর্যটক পরিদর্শন করলে দ্বীপটির ক্ষতি হবে না। তবে আনুষঙ্গিক শর্ত হলো পর্যটকরা রাতে দ্বীপে অবস্থান করতে পারবে না এবং পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ করতে পারবে না। অথচ শীত মৌসুমে দিনে তিন থেকে চার হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যাচ্ছে, রাতে থাকছে। একই সঙ্গে তারা চালিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রম। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নানা কর্মকান্ডের প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি হুমকির মুখে পড়েছে। এখানকার জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে। এ দ্বীপে অবাধে প্রবাল আহরণ, কেয়াবন ধ্বংস এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বহুমাত্রিক দূষণ বন্ধ এবং শীত মৌসুমে পর্যটকদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করা না হলে এ দ্বীপের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।