২ থেকে ৯ লাখ টাকায় সুপারিশ দিচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা

ডেস্ক রিপোর্ট : দুই দিনের মাথায় যেখানে পরীক্ষার ফলাফল কম্পিউটারের মাধ্যমে দেয়া সম্ভব সেখানে এক মাসেরও বেশি সময় চলে গেলেও পরিবার পরিকল্পনা পরিদপ্তরের ২ লাখেরও বেশি চাকুরি প্রার্থীর ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে না। পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত রেখে চাকুরি দিতে উৎকোচ আদায়ে বড় ধরনের দুর্নীতি চলছে পরিদপ্তরে।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মচারি নিয়োগে এ ধরনের অনিয়ম চললেও দেখার কেউ নেই। ঢাকা ট্রিবিউন

অথচ প্রার্থীরা যে অপটিক্যাল মার্ক যাচাইপত্রে পরীক্ষা দিয়েছেন তা পরীক্ষা করতে দুই দিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু ফলাফল বের না করে গোপনে ওই সাড়ে ৫ হাজার কর্মচারীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার একটা অপকৌশল বের করেছে পরিবার পরিকল্পনা পরিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারিরা। প্রার্থীদের মধ্যে এমন সন্দেহ স্বাভাবিকভাবেই ঘুরপাক খাচ্ছে যেহেতু বিরাট সংখ্যক লোকবল নিয়োগ করা হচ্ছে পরিদপ্তরটিতে।

গত ২১, ২২ ও ২৮ জুন পরিবার পরিকল্পনা পরিদপ্তরে বিভিন্ন পদে ৫ হাজার ৫৯৪টি পদে লোকবল নিয়োগে পরীক্ষা নেয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয় ৭০ মার্কে এবং চূড়াšত্ম নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষায় বরাদ্দ রয়েছে ৩০ নম্বর। কিন্তু ‘জুন ক্লোজিং’ এর জন্যে পরিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারিরা এতই ব্য¯ত্ম যে তারা ওই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কাজ করার ফুরসত পাচ্ছেন না। তবে পরিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে কিংবা আগষ্টের প্রথম দিকে ফলাফল দেয়া সম্ভব হবে। 

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতির মাধ্যমে পয়সা কামিয়ে নেয়ার অপকৌশলে  বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পর্যšত্ম জড়িত হয়ে পড়েছেন। নিজ এলাকার লোকজনের চাকরি দিতে সংসদ সদস্য, সচিব থেকে শুরু করে এমনকি উপদেষ্টারা নিজেদের পকেট ভারী করার অভিপ্রায়ে পরিদপ্তরের ওই সাড়ে ৫ হাজারের বেশি লোকবল নিয়োগে বিলম্ব প্রক্রিয়ায় অবদান রাখছেন। অথচ হাজার হাজার চাকুরি প্রার্থী প্রতিদিন পরিদপ্তরের কাওরান বাজারের অফিসে এক বুক আশা নিয়ে প্রতিদিন ঘুরঘুর করছেন, খোঁজ নিচ্ছেন কবে পরীক্ষার ফলাফল নোটিশ বোর্ডে টানানো হবে। এদের অনেকের আবেদন পত্রে প্রভাবশালী রাজনীতিক থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যের সুপারিশ রয়েছে যা আদায়ে তাদের বি¯ত্মর পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে এক একটি পদের জন্যে সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গণমান্য ব্যক্তিরা তাদের আবেদন পত্রে সুপারিশ দিয়েছেন। ২০১১ সালে পরিবার পরিকল্পনা পরিদপ্তরে ৬ হাজার লোকবল নিয়োগে এমনি দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছিল। তবে পরিদপ্তরের প্রশাসন পরিচাল ড. মাহবুবুর রহমান যিনি ওই পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন তিনি দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, লোকজন সবসময় লোকবল নিয়োগে এধরনের অর্থ আদায়ের গন্ধ খুঁজে পায়। আর পরিদপ্তরে কর্মরত ৫৪ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারির মধ্যে কেউ লোকবল নিয়োগে উৎকোচ আদায় করছে কী না তা খুঁজে বের করা কঠিন ব্যাপার। পরিদপ্তরের লোকবল তাদের সাধ্যমত নিয়োগ প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করতে যথারীতি কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে সরকারের তরফ থেকে ১৬ টি উপজেলায় নতুন কোড নম্বর দেয়ায় ওই পরিদপ্তরটির নিয়োগে পরীক্ষার খাতায় তা লেখা হয়নি বলে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটছে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা দাবি করছেন। তবে তা নেহাতই অজুহাত বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু পরীক্ষা পত্রে ওই ১৬ জেলার প্রার্থীদের খাতায় পুরাতন কোড নম্বর লেখা থাকায় তা কম্পিউটার রিডিং’এর ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করছে যা দূর করার জন্যে পরিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন