ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টারে ভূয়া সার্জনের ভূল চিকিৎসায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এক প্রসূতি

ঈদগাঁও প্রতিনিধি
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওয়ের প্রাইভেট ক্লিনিক ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টার এন্ড হাসপাতাল নামের এক প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভূয়া সার্জনের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে এক প্রসূতি।
এনিয়ে ভূক্তভোগী স্বজনরা প্রতিবাদ জানালে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন প্রভাবশালীর শরনাপন্না হচ্ছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিগত ১ মাস পূর্বে ঈদগাঁও ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিনের ছোট ভাই রফিকের স্ত্রী আয়েশা বেগমের প্রসব বেদনা শুরু হলে বাজারস্থ ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টার এন্ড হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বজনরা। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেন শেখ ফারহানা নামের এক মহিলা ডাক্তার। স্বাভাবিকভাবে বাচ্চার প্রসব না হওয়াতে উক্ত চিকিৎসক সার্জন না হওয়ার পরও অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তান প্রসব করান। পরে প্রসূতিকে হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে রিলিজ করে দিলে সে বাড়িতে চলে যায়। ২/৩ দিন পর থেকে অপারেশনস্থলে প্রচন্ড ব্যাথা-বেদনা শুরু হলে পরপর একাধিকবার উক্ত ডাক্তারের নিকট গেলেও সে বার বার ভাল হয়ে যাবে মর্মে অভয় দিয়ে আরো কিছু ঔষধপত্র লিখে দেয়। এভাবে প্রায় ১ মাস অতিবাহিত হলেও কোন প্রকার উন্নতি না হয়ে প্রসূতি আয়েশা শয্যাসায়ী হয়ে পড়ে এবং তার শরীর থেকে বের হওয়া দূর্গন্ধে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অতিষ্ট হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে বাজারের অপর প্রাইভেট ক্লিনিক ঈদগাঁও সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক ডাক্তার তৃণা সাহার শরনাপন্ন হন। এতে চিকিৎসক প্রসূতির অপারেশন স্থল পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান পূর্বের চিকিৎসক বাচ্চা প্রসবের সময় অপারেশনের স্থানে যে একটি প্যাড দিয়েছিল তা অপারেশন শেষে বের করে না ফেলেই সেলাই করে দেয়াতে তা ওই স্থানে রয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ওই প্যাড থেকে যাওয়াতে তাতে পচন শুরু হয়। যার কারণে প্রসূতি দিনদিন মুমুর্ষ হয়ে হয়ে পড়ে। আর কয়েকদিন দেরী হলে সে মারাও যেতে পারত বলে চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের জানিয়েছে বলে তারা জানান। এ ঘটনা জানার পর রোগীর আত্মীয় স্বজন ক্ষুদ্ধ হয়ে ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানালে কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে তাদের ম্যানেজের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত মোটা অংকের টাকার মাধ্যমে তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে বলে জানান। অপরদিকে এ বিষয়ে সত্যতা জানতে চিকিৎসক তৃণা সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলে পূর্বের ডাক্তারের ভূল চিকিৎসার কারণে মহিলার এ পরিণতি। আর কয়েকদিন দেরী হলেই মহিলাটির মৃত্যু হওয়ার আশংকা ছিল বলে জানান। অপরদিকে ভূল চিকিৎসার অভিযোগ উঠা ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডাক্তার ফারহানার সাথে সরাসরি দেখা করতে হাসপাতালে গেলে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি সে ঢাকায় অবস্থান করছে এবং তার মোবাইল নাম্বার চাইলে সে বিভিন্নভাবে এড়িয়ে যায়। এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক এহেছানুল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে সে উক্ত ঘটনা তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবী করেন। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ কাজল কান্তি বড়–য়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই নামের কোন সার্জন ঈদগাঁওয়ের কোন ক্লিনিকে তাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নেই। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এদিকে এলাকার সচেতন মহল ও ভূক্তভোগীদের অভিযোগ কয়েক বছর ধরে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় নীতিমালার তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে জনসেবার নামে এসব অপচিকিৎসা করে গ্রামের সাধারণ লোকজনদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তাই তারা এসব চিকিৎসক ও লোকজনদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরী হস্তেক্ষেপ কামনা করেছেন।