ঈদের আগে কক্সবাজারে হুন্ডির আগ্রাসন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঈদের আগেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে পর্যটন শহর কক্সবাজারের হুন্ডি ব্যবসা। উপজেলা এমনকি গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে হুন্ডির আগ্রাসন। জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ সর্বত্র একই চিত্র। বিশেষ করে চকরিয়া ও পেকুয়ায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান সনামে বেনামে দীর্ঘদিন
ধরে অবৈধভাবে হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এবারের ঈদকে সামনে রেখে এ ব্যবসা এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বিভিন্ন লোকজনের কাছে কৌশলে পৌঁছে দিয়ে এসব হুন্ডি ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ফলে প্রতি বছর সরকার কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ৫০ হাজার প্রবাসী সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, ওমান, ব্র“নাই, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, লন্ডন, আমেরিকা ও মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে চাকরিসহ, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে প্রবাস জীবনযাপন করছে। চলতি রমজান মাসের শুরুতে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ওই প্রবাসীরা পরিবার পরিজনের কাছে টাকা পাঠাতে হুন্ডির আশ্রয় নিচ্ছে। এতে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোয় সরকারও হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। ইতিমধ্যে প্রবাসী কর্তৃক হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো টাকা নিয়ে স্থানীয় হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বেশ কবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে। এনিয়ে গড়িয়েছে নানা ঘটনা মামলা-হামলা। গত ৮ জানুয়ারি ঢেমুশিয়ার মোস্তাক আহমদের পুত্র জাকের হোসেন হুন্ডির ৪৫ লাখ টাকা নিয়ে চিরিংগা এলে চকরিয়া শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থেকে একদল ছিনতাইকারী লুট করে। গত ২৩ জুন জিদ্দাবাজার এলাকা থেকে হুন্ডি ব্যবসায়ী আহমদ নবীর কাছ ৩৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। পৌরসভার বিপণী বিতানগুলোতে ১২টি ট্রাভেল এজেন্সিসহ কাপড়ের দোকান, মুদির দোকান, দর্জির দোকান, কসমেটিক্সের দোকান ও ফোন-ফ্যাক্সের দোকানের আড়ালে এসব হুন্ডি ব্যবসা চলছে। এদের মধ্যে মুষ্টিমেয় লোক সরকারি ও ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করলেও অধিকাংশ প্রবাসী হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠায় পরিবারের কাছে।

জানা যায়, চকরিয়া শপিং কমপ্লেক্সের আজিজিয়া ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল, থ্রি স্টার ট্রাভেল এজেন্সি, আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্স হুন্ডি এনামের মালিকানাধীন মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, রুপসী ক্লথ স্টোর, নিউ সুপার মার্কেটের মোস্তাকের মালিকাধীন র‌্যাভলন স্টোর, ফাঁসিয়াখালীর মৌলভি হান্নান, মৌলভি মান্নান, জয়নাল ফকির, মগবাজারের রফিকুল ইসলাম ওরফে সবজি রফিক, থানা রাস্তার মাথার নাঈম মটরস, কৈয়ারবিলের ছোয়ালিয়া পাড়ার মহিউদ্দিনের চালের দোকান, খিলছাদকের ফরহাদ, হাজিয়ানের আবুল কালাম, দক্ষিণ লক্ষ্যারচরের মটরপার্টস ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম, পূর্ব বড় ভেওলার বুড়ি পাড়ার হারুন, হালকাকারার মৌলভি আনোয়ার, জসিম মাস্টার, সওদাগরঘোনার ওসমান, বুড়িপুকুর মাছঘাটার বাবু সওদাগর, জসিম মাষ্টারের ছেলে রুমেল, পালাকাটার আনোয়ার, পূর্ব বড় ভেওলার মৌলভি জয়নাল, পৌরএলাকার ১নং ওয়ার্ডের আনছারী, জাহাঙ্গীর স্টোর (সুতার দোকান), বাবুমিয়া বাজারের টালি পয়েন্ট ক¤িপউটারের দোকান, নিউ মার্কেটের সম্রাট স্টোরসহ অর্ধশতাধিক প্রতিষ্টান এসব হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে গেলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ওইসব হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। এ ধরনের হুন্ডি ব্যবসা চলতে থাকলে সরকার হারাবে বিপুল রাজস্ব আর প্রতারিত হবে প্রবাসী পরিবারের লোকজন।

চিরিংগা পৌর শহরের এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, প্রায় সব ব্যাংকে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর সুবিধা রয়েছে। শুধু মাত্র দ্রুত সময়ে পাওয়ার জন্য প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেন করছে।