চাঁদরাতে শতকোটি টাকার ইয়াবা পাচারের আশংকা

* স্থল, নৌ ও আকাশপথের সমান ব্যবহার।
* সেবন ও বাণিজ্যে শতাধিক পুলিশ সদস্য।
* শীর্ষ ডিলার, এজেন্ট ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা সম্রাটরা অধরা।
* মিয়ানমারে ৩৭ কারখানা।

ফরিদুল মোস্তফা খান: কক্সবাজার ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মরত প্রায় শতাধিক পুলিশ সদস্য ভয়ংকর মাদক ইয়াবা সেবন ও বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছে। এই চক্রে সীমান্ত শহর টেকনাফ ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে আগে কর্মরত ছিলেন, এখন বদলি হয়ে অন্য জেলায় চাকরি করেন সেরকম অগণিত পুলিশ সদস্যের নাম পাওয়া যাচ্ছে। এতে এক শ্রেণির বিপথগামী ওসি, এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরাও রয়েছে।
জানা গেছে, রক্ষকের সরকারি কর্মে নিয়োজিত এসব ভক্ষকদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি ও বিভিন্ন থানায় কর্মরত অগণিত দূর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যের নাম।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, রাতারাতি বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়ার নেশায় কক্সবাজার জেলায় দিন দিন ইয়াবা সেবন ও বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়া পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি কিছু অসৎ বিজিবি সদস্যসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ক্রমশ এর তালিকা দীর্ঘ করছে। আকারে ছোট, বিক্রিতে প্রচুর দাম, সেবনে মুখে কোন দূর্গন্ধ নেই সহ নানা যৌক্তিক কারণে মুহুর্তেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দূর্নীতিবাজরা এতে জড়িয়ে পড়ছেন। রাতারাতি স্বর্গবিলাসে এই পথে যারা একবার পা দেন, তারাও অন্যান্য সাধারণ ব্যবসায়ীর মত আর ফিরে আসতে পারেন না সুপথে। বদলি কিংবা অন্য কোন কারণে এই চক্রের সদস্যরা কক্সবাজার ছেড়ে দেশের যেখানেই যাক না কেন, ঠিকই ভয়ংকর এই মাদক সেবন ও ব্যবসার লালসায় বার বার ছুটে আসেন কক্সবাজারে। কেউ কেউ বিলাসবহুল প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করে পর্যটক সেজে সিভিলে মাসিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক ও ক্ষেত্র বিশেষ প্রতি রাতেই সীমান্ত শহর টেকনাফ ও কক্সবাজারে তাদের সুবিধাজনক স্থানে রঙ-বেরঙের গাড়িতে চড়ে নাটকীয় অভিযান উৎকোচ আদায় এমনকি বান্ডেল বান্ডেল ইয়াবা নিয়ে চ¤পট দেন বলে জানা গেছে। 
সূত্র জানায়, বিপথগামী এসব পুলিশ সদস্যদের উক্ত অনৈতিক কাজে অঞ্চল ভিত্তিক কিছু দালাল ও সোর্স সবসময় তাদের সহযোগিতা করে। বিনিময়ে তারা হরদম আয় করছেন বাণ্ডেল বাণ্ডেল নগদ টাকা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ইদানিং প্রায় প্রতি রাতেই সীমান্ত শহর টেকনাফ,  সাবরাং, কাটাখালী, লেদা ও পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিভিন্ন মধু ¯পটে ভিড় জমান কক্সবাজারের বাইরে অন্য জেলায় কর্মরত বেশকিছু অসৎ পুলিশ সদস্য। সেখানে সবচেয়ে বেশি এই ভয়ংকর কাজটি করে নির্বিঘেœ ফিরে যান, যারা ইতোপূর্বে এই জেলার বিভিন্ন ¯পটে চাকুরির সুবাধে উক্ত কর্মে জড়িত ছিলেন।
অনুসন্ধানকারী টিম আরো জানান, বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে কর্মরত এসআই সোহেল, এএসআই আনিছ, এসআই ইমনসহ প্রায় শতাধিক পুলিশ সদস্য রয়েছে। যারা একেক সময় একেক ধরনের নামি দামি গাড়ি ব্যবহার করে গভীর রাতে প্রায় প্রতিদিনই টেকনাফ-কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থান থেকে বস্তা বস্তা ইয়াবার চালান উদ্ধার করে নামে মাত্র কিছু জমা দিয়ে বাকিগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে। সূত্র মতে, দূর্নীতিবাজ সদস্যদের কাছ থেকে এই ট্যাবলেটটি ক্রয় করলে অন্যান্য ব্যবসায়ীর চাইতে কম দামে পাওয়া যায় বলেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাঘা বাঘা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের কানেকশন রয়েছে। সম্প্রতি এরকম একজন পুলিশ সদস্যের বড় একটি ইয়াবার চালান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে। তবে সরকারি চাকুরি ও মানবিক কারণে ওই সময় সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা ট্যাবলেটগুলো কেড়ে নিয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেন। পুলিশ নামের নিজ বাহিনীর কলঙ্ক এসব অসাধুরা শুধু নয়, রমজানের আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে এবছরও কক্সবাজার থেকে শতকোটি টাকারও বেশি ইয়াবা  পাচারের আশংকা দেখা দিয়েছে। নিরাপদ কৌশলে এসব ইয়াবা পাচারের জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তুতিও স¤পন্ন হয়েছে। এজন্য সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে গোপনে সমঝোতার কথা শোনা যাচ্ছে। নারী নেত্রী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষিকা, ড্রাইভার ও কথিত সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত কয়েকটি চক্র সিন্ডিকেট করে সপ্তাহ খানেক সময়ের মধ্যে এসব ইয়াবা পাচার করতে পারে বলে তথ্য পাওয়া গেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সীমান্তের একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্রের কাছে।
সূত্র জানায়, রমজানের ঈদ আসন্ন। তারপর ঈদ পরবর্তী বিভিন্ন উৎসব। বিগত বছর গুলোতে এরকম ঈদ মৌসুমে ইয়াবা পাচারকারীরা নিরীহ মহিলা, বেকার যুবকসহ বিভিন্নভাবে ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার করলেও এবছর এবছর গণমাধ্যমের বাড়াবাড়ির কারণে তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে। ফলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ঈদের আগের দিন রাত অর্থাৎ চাঁদরাতে টেকনাফ-কক্সবাজার থেকে ইয়াবার বেশ কয়েকটি বড় চালান পাচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 
জানা গেছে, এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা নিজেদের ঈদ প্রস্তুতি ও ছুটি নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। তাই এ বছর তারা ওই সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে। এজন্য কক্সবাজার শহরের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল- রেস্তোরায় দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। সিদ্ধান্ত মতে চক্র গুলো শতকোটি টাকারও বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার করার প্রস্তুতি নিয়েছে। 
ইয়াবা পাচারে গঠিত চক্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিষয়টিকে। সে লক্ষ্যে চক্রে স¤পৃক্ত করা হয়েছে, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, কক্সবাজার জেলা কমিটির আজিজ নামের এক বিতর্কিত প্রভাবশালী, শীর্ষ দু’টি দলের ১০ জন নারী নেত্রী। যাদেরকে প্রতিনিয়ত মাঠে-ময়দানের রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা যায়। স্কুল শিক্ষিকা, টেকনাফ, উখিয়া, হ্নীলা, মরিচ্যা, রামু ও কক্সবাজারের ২০ জন জনপ্রতিনিধি, দক্ষ ড্রাইভার, একটি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও কয়েকজন কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি। 
সুত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থল বন্দর ও নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট হয়ে সর্বগ্রাসী এই মাদকগুলো কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও নৌপথ হয়ে প্রথমে আসবে কক্সবাজারে। এরপর বিভিন্ন মডেলের আলিশান প্রাইভেট গাড়ি, বন্দরের পণ্যবাহী ট্রাক, লবণ বোঝাই ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রো, রোগীবাহী এম্বুলেন্স, বিভিন্ন এনজিও সংস্থার গাড়ি এমনকি কথিত ভিআইপিদের গাড়ির পাশাপাশি কক্সবাজার-ঢাকা রুটে চলাচলরত অভ্যন্তরীণ বিমানযোগে ছড়িয়ে পড়বে দেশের আনাচে-কানাচে। এছাড়া কন্টিনেন্টাল ক্যুরিয়ার সার্ভিস, সুন্দরবন ক্যুরিয়ার সার্ভিস, এসএ পরিবহন ও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে মাছ বোঝাই মিনিট্রাকেও এসব ইয়াবার চালান বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্র মতে, যেখানেই পাচার হোক না কেন, ভয়ংকর এই মাদকটি প্রথমে আসবে কক্সবাজারে। তৎমধ্যে আসন্ন পর্যটন মৌসুম ও ঈদুল ফিতরের চাহিদা মেটাতে স্থানীয় রাখাইন পল্লীসহ ছোট-বড় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত সংখ্যক ইয়াবা মজুদ করবে। এর কয়েকটি বড়ছোট চালান টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে না থামিয়ে সরাসরি চট্টগ্রাম ও ঢাকায় চলে যাবে বলে জানা গেছে। এরপর হাত বদল হয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের নামী-দামী আবাসিক হোটেল, ফ্ল্যাট বাড়ি, বিপথগামী অভিনেতা-অভিনেত্রী, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, বকে যাওয়া যুবক-যুবতী, স্কুল-কলেজের নেশাগ্রস্থ শিক্ষার্থী ও এক শ্রেণির দূর্নীতিবাজ ও বিকৃত মানসিকতার আমলাদের দপ্তরে পৌঁছে যাবে। আর যে চালান কক্সবাজারে ‘যাত্রা বিরতি’ করবে, সেখান থেকে বেশিরভাগ ইয়াবা শহরের বিভিন্ন তারকা মানের হোটেল ও বাসা-বাড়িতে উঠবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। 
এদিকে ইয়াবা পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে টেকনাফ ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক জানান, ইয়াবা পাচারকারী চক্র যতই শক্তিশালী হোক বিজিবির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ইয়াবা পাচার রোধে বিজিবির পক্ষ থেকে অভিযান আরো জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে ইফতার, তারাবির নামায ও সেহেরী সময় নজরদারী আরো বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জানান, জেলা পুলিশ ইতোমধ্যেই ইয়াবা পাচারকারী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযান অব্যাহত রাখছে। জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ট্যাবলেটটি আকারে ছোট হওয়ায় আসলে খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি দৃষ্টি গোচর হয় না। তবে পুলিশ যেভাবে নতুন কৌশল ও ফাঁদ পেতেছে, এতে পাচারকারী যতই প্রভাবশালী কিংবা চতুর হোক না কেন, ধরা পড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। 

মিয়ানমার সীমান্তে ৩৭ কারখানা: 
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে বিজিবির পাঠানো মিয়ানমারে ইয়াবা তৈরির কারাখানা সংক্রান্ত গোপন তালিকাটি যুগান্তরের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, মিয়ানমারের কোচিন প্রদেশে রয়েছে ১০টি ইয়াবা কারখানা। এসব কারখানা নিয়ন্ত্রণ করে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কোচিন ডিফেন্স আর্মি। এ কারখানায় ১৩ ধরনের ইয়াবা উৎপাদিত হয় বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এছাড়া দুর্গম নামখাম এলাকায় ২টি কারখানা রয়েছে। এ দুটি কারখানা নিয়ন্ত্রণ করে পানহেসি কেও মেও ইয়াং মৌলিয়ান গ্র“প। মিয়ানমারের কুনলং এলাকায় হাউ স্পেশাল পুলিশ ট্র্যাক্ট গ্র“পের অধীনে আছে বড় আকারের একটি ইয়াবা কারখানা। ব্রিগেড টাঙ্গাইয়ান এলাকায় ম্যাংপ্যাং ও মংঘা বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্র“পের নিয়ন্ত্রণে আছে ৩টি কারখানা। লয় হাসোপুসুর ও মংসু এলাকায় রয়েছে ১টি। এটির নিয়ন্ত্রণ ইয়ানজু গ্র“পের হাতে। মিয়ানমারের নামজ্যাং এলাকায় আছে ২টি কারখানা। সান ন্যাশনাল পিপলস লিবারেশন ও কাই সান চৌ ঝ্যাং গ্র“পের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে এ কারখানা দুটি। এছাড়া মাহাজা এবং হোমং এলাকায় এ গ্র“পের অধীনে আরও ২টি কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। কাকাং মংটন এলাকায় ইউনাইটেড আর্মির নিয়ন্ত্রণে আছে ৩টি কারখানা। এ গ্র“পের অধীনে মিয়ানমারের মংসাট এলাকায় ২টি, দুর্গম ট্যাচিলেক এলাকায় ৩টি, বিদ্রোহী গ্র“পের নিয়ন্ত্রণে থাকা মংপিয়াং এলাকায় ১টি, মং ইয়াং এলাকায় ২টি ও পংস্যাং এলাকায় ২টি কারখানা আছে। মিয়ানমারের মাও ক্যামাই এলাকায় সান ন্যাশনালিস্ট পিপলস আর্মির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে আরও ২টি কারখানা। এছাড়া মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) দ্বারা কোকান এলাকায় পরিচালিত হচ্ছে আরও একটি ইয়াবা কারখানা। 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকা :
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৩১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর নামের তালিকাসহ একটি বিশেষ প্রতিবেদন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়ে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত-২ অধিশাখার সাবেক উপ-সচিব খান মোহাম্মদ বিলাল স্বাক্ষরিত তালিকাটি পাঠানো হয় দু’বছর আগে ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনের ৬নং অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে ২০০০ সালে টেকনাফের বাসিন্দা রমজান আলী ওরফে একটেল রমজান এবং শুক্কুর ওরফে বার্মাইয়া শুক্কুরের মাধ্যমে দেশে ইয়াবা ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটে। পরবর্তীকালে এদের পদাংক অনুসরণ করে ইয়াবা ব্যবসা করে অনেকেই এখন কোটিপতি। তালিকার ১ ও ২ নম্বরে আছেন যথাক্রমে মোস্তাক আহমদ ও দিদার হোসেনের নাম। এরা টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে। এর পরে ৭ নম্বরে আছেন জাহেদ হোসেন ওরফে জাকু। এর পরে ১৫ নম্বরে নাম আছে পিচ্চি আনোয়ারের নাম। ১৬ নম্বরে যার নাম আছে তিনি টেকনাফ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সফিক মিয়ার জামাই। তালিকার ২৪ নম্বরে থাকা একরামুল হক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় একরামুলের পরিচয় লেখা তিনি টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। তালিকার ২৫ নম্বরে থাকা আনোয়ার। এছাড়া তালিকায় ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে অন্য যাদের নাম রয়েছে তারা হলেনÑ মৌলভী বোরহান, সিরাজ মিয়া, সামসুন্নাহার ওরফে জ্যোতি, আবদুল¬াহ হাসান, নুরুল আমিন, সৈয়দ আলম, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, জহির, জাফর নূর আলম, আবদুুর রহমান, তৈয়ব মিয়া, কবির আহমেদ ওরফে ইয়াবা কবির, ইব্রাহিম, আলম, নূর মোহাম্মদ, জামাল, ছোটন, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল¬াহ, জাকির হোসেন ও রমজান ওরফে একটেল রমজান। 
বিত্তহীন থেকে কোটিপতি যেসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখনো অধরা: 
নুরুল হুদা, লেদা এলাকার আরেক আলোচিত ইয়াবা ব্যবসায়ী। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে রঙ্গিখালীর পর লেদা এলাকায় রাস্তার পাশে নব-নির্মিত যেসব রাজকীয় বাড়িগুলো চোখে পড়ার মত সেগুলোর মালিক সে নিজে ও তার কয়েকজন নিকটাত্মীয়। জানা গেছে, এই নুরুলহুদার ডজন ডজন গাড়িসহ হাজার কোটি টাকার সহায় স¤পত্তি হয়েছে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে। অথচ কয়েক বছর আগে সে ছিল এলাকার অতিনগন্য একজন সাধারণ মানুষ। অ™ভুত ব্যাপার হচ্ছে, বৈধ উপার্জন ছাড়া ইয়াবা ব্যবসা করে ধর্নাঢ্য হয়ে উঠা উক্ত নুরুল হুদার বাড়ির প্রবেশপথে এখন ৫/৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা, চব্বিশ ঘন্টা ইউনিফর্ম পড়া পাহারাদার আছে ৪/৫ জন। 
টেকনাফ বড় হাবিব পাড়ার ছিদ্দিক, হাসান এবং আমিনও এখন কোটিপতি। তাদের বাড়িঘর দেখলে মনে হবে এ যেন রাজপ্রাসাদ। অথচ কিছুদিন আগেও তাদের খুব একটা বেশিকিছু ছিল না। মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা হাজী ফজল আহমদের ছেলে আবদুর রহমানের বয়স এখনও ২৬ পার হয়নি। বছর দুয়েক আগেও তিনি কর্মহীন বেকার হয়ে এলাকায় ভবঘুরে ছিলেন। এখন তিনি চড়েন নতুন মডেলের ঝকঝকে একটা নোয়া মাইক্রোবাসে। তাদের থাকার জায়গায় রাতারাতি গড়ে তোলা হচ্ছে দোতলা বিলাসবহুল বাড়ি। এলাকার বাসিন্দা জানায়, আবদুর রহমান এরমধ্যে এলাকায় প্রচুর আবাদী জমিও কিনেছেন। টেকনাফের নাফ কুইন মার্কেটে ২০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। অভিযোগ, ইয়াবা ব্যবসার কাঁড়ি কাঁড়ি কাঁচা টাকাই আবদুর রহমানকে রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক বানিয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অর্থ বিনিয়োগ করছেন। এছাড়া কিছুদিন আগে আবদুর রহমান তার এক বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান করেছেন। এলাকাবাসী জানিয়েছে, জাঁকজমকপূর্ণ ওই বিয়েতে অন্তত ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বিয়েতে বোনের জামাইকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি। টেকনাফের মৌলভীপাড়ায় আবদুর রহমানের আরেক ভাই একরামও প্রাসাদোপ্যম বাড়ি নির্মাণ করছেন। অথচ তাদের পিতা ফজল আহমদ একসময় ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষিকাজে জড়িত ছিলেন। আবদুর রহমান ও একরাম দুজনের বিরুদ্ধেই ইয়াবা চোরাচালানের মামলা রয়েছে। প্রকাশ্যে সবসময় ঘোরাফেরা করলেও পুলিশের খাতায় তারা পলাতক আসামি। তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে আবদুর রহমান বলেন, তিনি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। এতবেশি ধনস¤পদও তার নেই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে কয়েকটা মামলা দেয়া হয়েছে।
লেইট্যা আমির, মৌলভীপাড়ার আরেক কোটিপতি আমির আহমদ ওরফে লেইট্যা আমির। এলাকাবাসী জানায়, ৫/৬ বছর আগেও তার পরিবার রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু হঠাৎ করে তারা যেন হাতে আলাদীনের চেরাগ পেয়েছেন। হাবিব উল্ল¬াহর ছেলে আমির আহমদ বিপুল পরিমাণ জমিজমার মালিক। চলাফেরা করেন দামি গাড়িতে। টেকনাফ বাজারে বড় বড় কয়েকটি পাইকারি দোকানের মালিকও তিনি। আমির আহমদের বিরুদ্ধেও একাধিক ইয়াবা পাচারের মামলা রয়েছে। কিন্তু সেও অধরা। অমির আহমদ বলেন, তার লবণ চাষের ব্যবসা আছে। তিনি কোটিপতি নন। তার বিরুদ্ধে কোন মামলাও নেই। 
ইয়াবা পাচার মামলার অন্যতম পলাতক আসামি আবদুল গনি। বছর দুয়েক আগেও তারা বাঁশ ও বেতের ব্যবসা করতেন। কিন্তু এখন দৃশ্যপট বদলে গেছে। সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্ল¬ট কিনেছেন তিনি। চড়েন দামি গাড়িতে। এলাকায় প্রচুর জমিও হয়েছে। বিজিবির উদ্ধার করা ইয়াবা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হলেও তিনি প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছেন। আর পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য নূরুল হকের ছেলে গনির মোবাইল ফোনে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। 
মোহাম্মদ আলী, এ গ্রামের আরেক কোটিপতির নাম মোহাম্মদ আলী। তার পিতা হাজী কালা মিয়া। তার বিত্তবৈভব নিয়ে এলাকায় নানা কথা প্রচলিত আছে। কেউ বলেন, মোহাম্মদ আলী টাকার বালিশে ঘুমায়। কেউ বলে মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে টাকার বস্তা আছে। তবে মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি মোটেও কোটিপতি নন। কৃষিকাজ করে তার সংসার চলে। বৃহ¯পতিবারও নাফ নদী থেকে সাড়ে ৫ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এ ইয়াবা চালানের মালিক মোহাম্মদ আলী। পরে মোহাম্মদ আলীকে আসামি করে মামলা করা হয়। মোহাম্মদ আলী বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে। 
ফরিদুল আলম, সম্প্রতি মৌলভীপাড়ায় কোটি টাকা দামের জমি কেনা নিয়ে আলোচনা চলছে। যিনি জমি কিনেছেন তার নাম ফরিদুল আলম। তার পিতার নাম মৃত আমীর হোসেন। স্থানীয় বাসিন্দা জানায়, একসময় ফরিদুলের পরিবার লবণ চাষ করে সংসার চালাত। কিন্তু রহস্যজনক আয়ের বদৌলতে ফরিদুল বর্তমানে কোটি টাকার স¤পদের মালিক বনেছেন। ফরিদুলের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় একাধিক ইয়াবা পাচার মামলা রয়েছে। সম্প্রতি বিজিবি ও পুলিশের দায়ের করা ইয়াবা পাচার মামলায় আবুলকে আসামি করা হয়েছে। অবশ্য আবুল ও স্থানীয় বিএনপির তরফে বলা হচ্ছে, শাসক দলের ইশারায় হয়রানির উদ্দেশ্যে এসব মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে। এ গ্রামের আরও যারা অল্প সময়ের মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে বিত্তশালী হয়ে উঠেছেন তাদের মধ্যে উলে¬খযোগ্য হলেন লাল মিয়ার ছেলে আবুল কালাম ওরফে কালা। তিনি একসময় পিতার লবণ ব্যবসা দেখাশুনা করতেন। তিনি অল্প সময়ে গাড়ি, বাড়ি ও প্রচুর পরিমাণ জমিজমার মালিক হয়েছেন। 
মৌলভীপাড়ার পাশের গ্রাম নাজিরপাড়া। সরজমিনে ঘুরে এ গ্রামেও বেশ কয়েকজন কোটিপতির নাম জানা গেছে। অথচ এরা অল্প কিছুদিন আগেও ছিলেন সহায়-সম্বলহীন। নাজিরপাড়ার কোটিপতি হিসেবে যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন-
জিয়াউর রহমান, ৭ বছর আগেও বেকার যুবক ছিলেন জিয়াউর রহমান। তার পিতার নাম মোঃ ইসলাম। কিন্তু এখন তার দুর্দিন নেই। তিনি চলাফেরার জন্য এখন একাধিক নোয়া মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। গ্রামেই আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন। তার মালিকানায় রয়েছে কয়েক ডজন সিএনজি অটোরিকশা। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অনেক পুরনো। পুলিশের খাতায় তিনি ইয়াবা পাচার মামলার আসামি। তার নিজস্ব সিএনজি অটোরিকশা ও নোয়া মাইক্রোবাসগুলো ইয়াবা পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয় এমন তথ্য দিয়েছে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। জানা গেছে, নোয়া মাইক্রোবাসগুলোতে একাধিক নাম্বারপ্লে¬ট ব্যবহƒত হয়। সুবিধামতো নম্বরপ্লে¬ট বদল করে ইয়াবা পরিবহন করা হয়। 
ছাগল হাসু, এক সময় ছাগলের ব্যবসা করতেন হাসু। এজন্য এলাকায় তিনি ছাগল হাসু নামে পরিচিতি। তবে ছাগল হাসু এখন এলাকার অন্যতম কোটিপতি। থানা সূত্র জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ইয়াবা চোরাচালানের একাধিক মামলা রয়েছে। তবে শুধু ইয়াবা ব্যবসা নয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাজিরপাড়া ও মৌলভীপাড়ার কয়েকটি চোরাচালান ঘাটও নিয়ন্ত্রণ করেন। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালানের পাশাপাশি তিনি অবৈধ মদ-বিয়ার বাংলাদেশে আনেন। আবার বাংলাদেশ থেকে ফেনসিডিল-গাঁজা ও সুখিবড়ি (সরকারি জš§বিরতিকরণ পিল) মিয়ানমারে পাচার করেন। ছাগল হাসু বলেন, তিনি মোটেও ইয়াবা ব্যবসায়ী নন। তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
চাঁন মিয়া ওরফে পোয়া চাঁন মিয়া, নাজিরপাড়া এলাকায় আগে চাঁন মিয়া নামের একজন বয়স্ক চোরাকারবারী থাকত। চেনার সুবিধার জন্য এলাকাবাসী তার নাম দেয় পোয়া চাঁন মিয়া। স্থানীয় ভাষায় ‘পোয়া’ অর্থ ছোট। এই পোয়া চাঁন মিয়ার কত টাকা আছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর কৌতূহলের শেষ নেই। টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের পাশে তার বিলাসবহুল বাড়ির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অথচ পোয়া চাঁন মিয়ার বৈধ কোন আয়ের উৎস নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নাজিরপাড়া সীমান্ত দিয়ে ‘সুখী বড়ি’সহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় মূল্যবান ওষুধ পাচার করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা চোরাচালানের অভিযোগে একাধিক মামলা থাকলেও তাকে পুলিশ ¯পর্শ করে না। 

শীর্ষ ৪ ডিলার :
মিয়ানমারের এসব কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা ট্যাবলেট বাংলাদেশে পাচারের জন্য বাংলাদেশেরই কিছু লোক ডিলারের দায়িত্ব নিয়েছে। যারা সারাবছর বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের পুরো নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে থাকে। এদের মধ্যে নেতৃত্ব পর্যায়ে রয়েছে ৪ জন। এরা হলেনÑ টেকনাফ এলাকার শফিউর রহমানের ছেলে আলম। তিনি ইয়াবা ব্যবসার সুবিধার্থে রীতিমতো মিয়ানমারের মংডু জেলার ম্যাংগোলা গ্রামে বাসাবাড়ি করে বসেছেন। বছরের প্রায় ছয় মাসই থাকেন সেখানে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আলম ইয়াবা ট্যাবলেটের প্রধান এজেন্ট। অন্য ডিলাররা হলেনÑ আকিয়াব জেলার মংডু থানার ফয়েজপাড়া গ্রামে বসবাসকারী কেফায়াত আলীর ছেলে মোঃ সৈয়দ, গজুবিল গ্রামে বসবাসকারী মৃত খল আহম্মেদের ছেলে কালাশোনা ও বড়গজুবিলং গ্রামে বসবাসকারী আবদুল মোতালেবের ছেলে মোহাম্মদ নূর। 
টেকনাফের ১৭ এজেন্ট :
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ৪ এজেন্টের কাছ থেকে বিভিন্ন রুট হয়ে ইয়াবা আসে টেকনাফের ১৭ ব্যক্তির কাছে। এরা হলেনÑ শাহপরীর দ্বীপ গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে ইসমাইল, পুরাতন পাল¬ালপাড়ার বাসিন্দা হাজী আবু জাকেরের ছেলে সাব্বির আহমেদ ও আইয়ুব আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন, চৌধুরীপাড়া গ্রামের এজাহার কোম্পানির ছেলে শফিকুল ইসলাম, ফয়সাল ও মৌলভী জহির আহম্মেদের ছেলে জহিরুল ইসলাম বাবু, কুলালপাড়া গ্রামের মৃত শহর মুলুকের ছেলে জাবেদ ইকবাল, ডেলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে নূরুল আমিন, কেকোপাড়ার বাসিন্দা জাহিদ হোসেন জাকুর ছেলে রাফচাঁন, আলিয়াবাদ গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে রেজাউল করিম ভোলা, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মোঃ শাহ, চৌকিদারপাড়ার কবির চৌকিদারের ছেলে ইব্রাহিম, চৌধুরীপাড়ার এজাহার কোম্পানির ছেলে আবদুল আমিন, মৃত আবেদীন সওদাগরের ছেলে জাহিদ হোসেন জাকু এবং চট্টগ্রামের হালিশহরের কর্ণফুলী হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা অবু বক্কর ওরফে ইয়াবা বক্কর। 
অরক্ষিত ২০ পয়েন্ট :
টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২০ টি পয়েন্ট অরক্ষিত। এসব পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার চালান বাংলাদেশে ঢুকছে। অরক্ষিত এসব পয়েন্ট হল, টেকনাফ উপজেলার নাইট্যংপাড়া, কাইয়ুকখালীপাড়া, মৌলভীপাড়া, হ্নীলা ফুলের ডেইল, চৌধুরী পাড়া, রঙ্গিখালী, খারাংখালী, নাজিরপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, সাবরাং, নওয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং। এছাড়া উখিয়া উপজেলার বালুখালী, ঘুমধুম, ধমনখালী, রহমতবিল, নাইক্ষ্যংছড়ি ও উপজেলার তুমব্র সীমান্ত পয়েন্ট। এসব পয়েন্টের পাশাপাশি টেকনাফ স্থলবন্দর ও শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে ট্রলারে আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান। 
বিজিবির বক্তব্য :
টেকনাফের ৪২ বর্ডার গার্ডের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ হাসান বলেন, সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো বিজিবির অন্যতম প্রধান কাজ। গত বছর টেকনাফ বিজিবি ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। দেশের অন্যতম মাদক পাচার রুট হিসেবে টেকনাফে ব্যাপকভাবে মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে বিজিবি। ইয়াবা পাচার রোধে চিহ্নিত পয়েন্টে টহল জোরদারসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ইয়াবা শনাক্ত করতে ডগ স্কোয়াড নামানো হয়েছে। যেসব পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা আসে সেসব পয়েন্টে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন