১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল ভারত

নিউজ ডেস্ক: ভারত ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ আক্রমণ করতে চেয়েছিল। পছন্দের সরকার বসানোর জন্যই ভারত এই পরিকল্পনা করেছিল বলে নিউইয়র্কের ক্যাপিটাল এক্সপ্রেসের সম্পাদক বি জে খসরুর লেখা নতুন বইয়ে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, বাংলাদেশের হস্তক্ষেপের কোন ইচ্ছা ভারতের নেই।
সোমবার পাকিস্তান অবজাভার পত্রিকায় হামিদ শাহীনের লেখা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জনাব খসরুর লেখা ‘দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু এন্ড দ্য সিআইএ লিংক’ বইটি শিগগিগর প্রকাশ হবে।

বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে কয়েকটি রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর জেনারেল জিয়াউর রহমান কার্যত শাসক হিসেবে আবির্ভুত হওয়ার পর তিনি ভারতের আসন্ন আক্রমণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অবিহত করেছিলেন। জনাব খসরুর নতুন বইয়ে বলা হয়, তখন নয়াদিল্লি তার পছন্দের সরকার বসাতে চেয়েছিল বাংলাদেশে। ভারতের আক্রমণের আশঙ্কা তখন এত বেশি ছিল যে, জেনারেল জিয়াউর রহমান বেতার ভাষণে জাতিকে হামলা মেকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

জনাব খসরুর বইয়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় ঢাকায় মানুষের মনোভাব যেমন ছিল তখন (১৯৭৫) মনোভাব ছিল পুররোপুরি উল্টো। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিরোধী ও ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব ছিল। ১৯৭৫ সালের ঘটনাবলীর পর পুরোপুরি পাকিস্তানপন্থী, ইসলামপন্থী, আমেরিকাপন্থী ও পশ্চিমাপন্থী মনোভাব তৈরি হয়।

ভারতের আক্রমণ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ের জন্য জেনারেল জিয়াউর রহমান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব নজরুল ইসলামকে পাঠিয়েছিলেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে। নজরুল ইসলামকে বলা হয়েছিল, চীন ও পাকিস্তানে ভারতের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে বাংলাদেশের মনোভাব যুক্তরাষ্ট্র যন অন্যদের অবহিত করে যাতে করে মুসলিম দেশের সমর্থন পাওয়া যায়। নজরুল ইসলামও ঢাকায় মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আরভিং জি. চেসল’র সঙ্গে দেখা করে এই কথাই জানিয়েছিলেন।

একই সময়ে ভারতের কলকাতায় যুক্তরাষ্ট্রের কানসাল জেনারেল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব অশোক গুপ্ত ও ইস্টার্ন কমান্ডের উপপ্রধান জে এফ আর জ্যাকবের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করেন। অশোক গুপ্ত বলেছিলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি তখন উদ্বেগজনক। তখনো লড়াই চলছিল। ঢাকায় ভারত বিরোধী স্লোগান শোনা যাচ্ছিল।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এ এম সায়েমের মুখ্য সচিব মাহবুবুল আলম চাষী ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ই. বুস্টারকে টেলিফোন করে যে কোন বহিঃআক্রমণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত বুস্টার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে তা জানিয়েছিলেন। জবাবে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়ার কথা জানিয়ে দিতে ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসকে নির্দেশনা দিয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্তায় উল্লেখ করা হয়, তারা স্বাধীন বাংলাদেশকে সমর্থন করে এবং আগের সকারগুলোর মতোই ঘনিষ্ঠ ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে। বাংলাদেশের উদ্বেগে তারাও সহানুভুতিশীল।

৮ নভেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াই বি চ্যাবন অথবা পররাষ্ট্র সচিব কেওয়াল সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের উচ্চ পর্যায়ের মনোভাব জানতে এবং বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা জানাতে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, বাংলাদেশের কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোন ইচ্ছা ভারতের নেই। বাংলাদেশের সরকার কীভাবে চলবে তা বাংলাদেশের বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের কোন নীতি ভারতের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলে বা স্বার্থহানিকর হলে ভারত উদ্বিগ্ন হবেই।

ভারতের আক্রমণের আশঙ্কায় ২৩ নভেম্বর রাতে জিয়াউর রহমান দ্বিতীয় বার আতঙ্কিত হয়েছিলেন। সেদিন রাত সাড়ে ১২টায় তিনি বেতার অফিসে গিয়েছিলেন ‘চরম দুঃসময়ে’ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাতে।

বাংলাদেশের সামরিক শাসক এই আশঙ্কাকে এতই গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে, ভারতের আক্রমণ প্রতিরোধে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলীর সমর্থন পেতে গোপনে পাকিস্তানে দূত পাঠানো হয়েছিল। সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন