সরকারের নির্যাতনে জামায়াতের প্রতি মানুষের সহানুভুতি বড়ছে : আজাদ


মুকুল হায়দার: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা ৪৮ ঘন্টার হরতালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি পুলিশের ওপর আক্রমনসহ নানা ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আবারো জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে পুলিশকে টার্গেট করে আক্রমনের অভিযোগ এসেছে। ৭১ মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত ৪৮ ঘন্টার হরতালের কর্মসূচী দিয়েছিল। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুর রহমান আজাদ এমপি বিবিসির সাথে আলাপকালে বলছিলেন, তারা রাজনৈতিক কর্মসূচী অব্যাহত রাখবেন। 



আজাদ: যেহেতু মামলা হয়েছে এবং এর আইনি প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি, সেহেতু আমরা এটা আইনিভাবেই এর মোকাবেলা করছি এবং করে যাবো। আমারা মনেকরি, যেহেতু বিষটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনেই করা হচ্ছে। সুতরাং আমরা জনগনকে সাথে নিয়ে এ বিষয়টি রাজনৈতিকভাবেও মোকাবেলা করে যাবো। তারই ধারাবাহিকতায় আমার জনগণকে সাথে নিয়ে এঘটার প্রতিবাদ করছি, আন্দোলন করিছি। এবং এই আন্দোলনের অংশ হিসাবেই ৪৮ ঘন্টার হরতাল ডাকা হয়েছিল। এর পর আমরা পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করবো এবং আমাদের এ আন্দোল অব্যাহত থাকবে। 

বিবিসি: ৪৮ ঘন্টার হরতালে পুলিশের ওপর আক্রমনের একটা প্রবণতা দেখা গেছে। পুলিশকে আক্রমন এবং পুলিশকে লক্ষ করে গুলি করারও অভিযোগ উঠেছে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র-শিবিরের বিরুদ্ধে  এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি ?

আজাদ: এই অভিযোগ মোটেও সত্য নয়। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। সেই সাথে আমি বলতে চাই আমরা কখনোই পুলিশের ওপর আক্রমন করিনি। বরং বিগত ৪ বছর ধরে সরকারের নির্দেশে পুলিশ যেভাবে আমাদের ওপর আক্রমন চালিয়েছে সেটা নজিরবিহীন। আমাদের অফিস বন্ধ করা, মিছিলে গুলি চালানো, হামলা চালানো এবং আমাদের মৌলিক সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে যেভাবে আমাদের ওপর দলন নিপীড়ন চালাচ্ছে এর প্রতিবাদ করার সুযোগ আমাদের দিচ্ছে না। সেকারনে রাজপথে প্রতিবাদ করতে গিলে পুলিশই আমাদের ওপর আক্রমন করছে। কিন্তু আমরা কখনো পুলিশের ওপর আক্রমন করিনি। 

বিবিসি: এ সম্পর্কে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, পুলিশের ওপর আক্রমনের ঘটনা ঘটছে হরতাল সমর্থদের দিক থেকে। এটা টার্গেট কেন হচ্ছে ?

আজাদ: কারা করছে এটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। সরকার ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করুক তারা কারা ?  জাগায় জাগায় সরকারের এজেন্টরাই কিন্তু সাপোর্টাজ করছে। দেশের পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত এবং অস্থিতিশীল করার জন্য সরকারই এধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর কোথাও যদি পুলিশ জনপ্রতিরোধের মুখোমুখি হয় সেটার জন্যও মুলত সরকারই দায়ি। 

বিবিসি: জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী ছাত্র শিবিরের মিছিল মানেই সহিংসতা। এধরনের পরিস্থিতি গত দু’দিনে দেখা গেছে। ৩জন লোক মারা গেছে। 

আজাদ: আমরা সহিংসতায় বিশ্বাসী নই এবং আমারা কখোনো সহিংস রাজনীতি করিনি। আমরা গণতান্ত্রিক মুল্যবোধে বিশ্বাসী হয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমরা অতীতে সেভাবেই নির্বাচন করেছি এবং পার্লামেন্টেও প্রতিনিধিত্ব করছি। সুতরাং সহিংসতার অভিযোগ আমাদের ব্যাপারে সঠিক না। 

বিবিসি: জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে গত একবছরেরও বেশি সময় ধরে আপনারা বড় ধরনের আন্দোলন করে আসছেন। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকেও দেখা গেছে পুলিশকে টার্গেট করে আক্রমন হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। ফেব্রুয়ারিতে গিয়ে দেখা গেছে বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেছে। তো জামায়াতে ইসলামীর হরতাল হলেই মানুষের মাঝে একধরনের আতঙ্ক কাজ করে। এটা কি আপনারা মনে করেন ? 

আজাদ: আমরা আতঙ্ক মনে করছি না। বরং জনমনে পুলিশি আতঙ্ক এবং সরকারের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের আতঙ্ক কাজ করছে।  

বিবিসি: আপনারা কি মনে করেন না যে এতে আপনাদের ভাবমূর্তির সমস্যা হচ্ছে ?

আজাদ: আমরা মনেকরি, জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক  নিয়মতান্ত্রিক যে কর্মসূচী চলছে, এ কর্মসূচীর প্রতি মানুষে সমর্থন রয়েছে এবং সরকারের নির্যাতনের কারনে এ সহানুভুতি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেকারনে পূর্বের তুলনায় আমাদের কর্মসূচীর সাথে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততাও বেড়েছে।    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন