বিধি ছাড়াই চলছে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র

কক্সবাজারবাণী ডেস্ক: ঢাকাসহ সারাদেশে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে দুই হাজারের মত। যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নিরাময় কেন্দ্রের অনুমোদন নেই। এসব কেন্দ্রে চিকিৎসার পাশাপাশি মাদকের রমরমা ব্যবসাও চলছে। তরুণ সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে এসব নিরাময় কেন্দ্র। মাদকাসক্ত নিরাময়ে তারা কাজ করলেও মূলত মাদক ব্যবসাই প্রধান লক্ষ্য। এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রতি মাসে রোগী প্রতি ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়া হয়।
আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে নির্দিষ্ট প্যাকেজ রয়েছে। সেখানে রোগী একদিন বা তিন মাস থাকলেও একই টাকা পরিশোধ করতে হয়।  কিন্তু সে তুলনায় রোগীদের যত্ন ও খাওয়ার মান রক্ষা করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। মিরপুরের বাসিন্দা লায়লা জাহান রুমা আমাদের সয়ম ডটকমকে জানিয়েছেন, তার ভাই দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকাসক্ত। এপর্যšত্ম ৬বার তাকে বিভিন্ন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। তার সুস্থতার জন্য প্রতিবারই লাখ লাখ টাকা খরচ করে তাদের পরিবার এখন প্রায় নিঃস্ব।

তিনি জানান, নিরাময় কেন্দ্রে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি অত্যšত্ম বেদনাদায়ক। কিন্তু তারপরেও প্রিয়জনের সুস্থতার কথা ভেবে সে কষ্ট পরিবারের সদস্যরা সহ্য করে থাকেন। রোগীকে পুরোপুরি পশুর মত বেঁধে অথবা কখনো কখনো ইনজেকশন পুশ করে টেনে হিচড়ে নেয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, অনেক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে রোগীদের ওপর চরমভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। 

পুনজীবন নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক জহিরুদ্দিন ব্রাদার আমাদের সময় ডটকমকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনের কথা শোনা যায়। যেসব রোগী অতিরিক্ত নেশাগ্র¯ত্ম থাকে তারা অনেক সময় কথা শুনতে চায় না তখন তাদের বকাঝকা বা প্রেসার দেয়া হয়। তবে শারীরিক নির্যাতন করে নিরাময় সম্ভব নয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম আমাদের সময় ডটকমকে বলেছেন, কাউন্সিল ছাড়া মাদকাসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। শারীরিক নির্যাতন বা শক্তি প্রয়োগের ফলে এসব রোগীদের ভেতর জেদ বসে যায়। তখন তারা বাইরে এসে আবারো নেশা করতে শুরু করে। তিনি বলেন, মনোবিজ্ঞান জোর পূর্বক কোন কিছু আদায় করার পক্ষে মত দেয় না। মাদকাসক্তদের জন্য নিরাময় কেন্দ্রে এবং বাড়িতে কাউন্সিলের ব্যবস্থা করতে হবে। 

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, মাদকাসক্ত নিরাময়ের জন্য সরকারের কোন নীতি না থাকায় শুধুমাত্র ব্যবসার মনোভাব নিয়ে গজে উঠেছে অসংখ্য নিরাময় কেন্দ্র। সরকার যদি এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে তাহলে এসব নিরাময় কেন্দ্র থেকে অনেকেই উপকৃত হতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে কিভাবে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা হয় সে বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন