অনুসন্ধানী প্রতিবেদন- শেষ পর্ব> উখিয়া-টেকনাফে গডফাদার ইয়াহিয়াদের ভোটারদের প্রত্যাখান

# সব অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের দাবি
# দুদক ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা

ফরিদুল মোস্তফা খান (আমাদের সময় ডটকম): সিনেমা কিংবা রূপ কথার দুঃচরিত্রের গল্পকেও হার মানানো চট্টগ্রাম-টেকনাফের মাফিয়া গডফাদার রোহিঙ্গা বংশো™ভুত শিল্পপতি আনিসুর রহমান ইয়াহিয়া ও তার পরিবারকে প্রত্যাখান করেছেন উখিয়া-টেকনাফের সচেতন জনগণ। এজন্য গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার পুত্র লাঙ্গল প্রতিকের তাহা ইয়াহিয়াকে উচিত শিক্ষা দিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। ভোটের দিন তাহা ইয়াহিয়ার পক্ষে উখিয়া-টেকনাফের নির্বাচনী কেন্দ্র সমূহে কোন এজেন্টই ছিলনা তা বড় কথা নয়, দু’ উপজেলার কোন এলাকা এমনকি ইয়াহিয়াদের গ্রামের বাড়ি শাহপরীরদ্বীপও তাদের কোন অস্থিত্ব ছিলনা। ফলে নির্বাচনে চোরাচালানি গডফাদার ইয়াহিয়ার পুত্র নজির বিহীন পরাজয় বরণ করে নিজের জামানত বাজেয়াপ্তের গন্তব্যে পৌঁছেছেন। এতে করে গত দুই যুগের ইতিহাসে উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় চোরাকারবারি ইয়াহিয়া সম্রাজ্যে চরম ধ্বস নেমেছে বলেও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী মনে করেছেন।
তারা বলেছেন, ভোটের আগের কয়েকদিন প্রতিবেদকের ধারাবাহিক অনুসন্ধানি তিন পর্বের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদে এলাকার সচেতন ভোটাররা চোরাচালানে বাংলাদেশের দাউদ ইব্রাহিম খ্যাত ইয়াহিয়ার প্রাক পরিচিতি জেনে গেছেন। এ কারনে তারা দেশদ্রোহি ইয়াহিয়ার পুত্র তাহা ইয়াহিয়াকে সামাজিকভাবে বয়টকের পাশাপাশি তার পিতার সকল কুর্কীতির অনুসন্ধানি প্রতিবেদনগুলো তড়িৎ তদন্ত শেষে প্রচলিত আইনে তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এজন্য উখিয়া-টেকনাফের ভোটাররা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় সচেতন জনগণ আশংকা প্রকাশ করেছেন, জরুরী অবস্থায় নিজের কুকর্মের জন্য বেশ কয়েকটি ব্যাংক একাউন্ট জব্দ ও পলাতক থাকা চোরাচালানি গডফাদার ইয়াহিয়া স্ব-পরিবারে বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈধ ব্যবসার আড়ালে রাষ্ট্রদ্রোহি হরেক অবৈধ ব্যবসা করে কাড়িকাড়ি টাকার মালিক বনে যাওয়া রাজনৈতিক খোলস পাল্টানো চোরাকারবারি আনিসুর রহমান ইয়াহিয়া কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের দেশবিদেশ পত্রিকা কিনে ও লোক দেখানো দান-খয়রাত করে গত ১৯৯৬ সাল থেকে উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ওই সময় তিনি প্রথমে বিএনপি’র প্রার্থী পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দু’ উপজেলার আনাচে-কানাচে বেশ জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছিলেন। তাই গত কিছুদিন আগেও দেশের সর্বশেষ সীমান্তে অবস্থিত উক্ত সংসদীয় আসনে ইয়াহিয়া ছিলেন সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জন্য একটি বড় ধরনের ফ্যাক্টর। স্থানীয় প্রবীনরা বলেছেন, নিজের কুর্কীতি আড়াল করে কোন রাজনৈতিক দল নয়-উক্ত সংসদীয় আসনে ব্যক্তি ইয়াহিয়াই ছিলেন এক সময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ফলশ্রুতিতে যত সংসদীয় নির্বাচন আসুক না কেন, সুচতুর ইয়াহিয়া চেষ্টা করেছিলেন যেভাবেই হোক একবার হলেও জীবনে এমপি নির্বাচিত হয়ে যেতে। এ কারনে ইয়াহিয়া কখনো নিজেকে তারেক রহমানের বন্ধু আবার কখনো বিএনপি’র টিকেটে সর্বশেষ সবকিছুতে ব্যর্থ হয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের ক্লিন ইমেজের পুত্র তাহা ইয়াহিয়াকে জাতীয় পার্টির টিকেটে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। 
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অন্য সব নির্বাচনে ইয়াহিয়ার উদ্দেশ্য যাই ছিলনা কেন, এবারের নির্বাচনে পুত্রকে দাঁড় করিয়ে দেয়ার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল মহাজোট প্রার্থী এলাকার জনপ্রিয় নেতা এমপি বদির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বড় ধরনের ধান্ধা করা। এ কারনে তিনি নাকি এমপি বদি’র প্রতিপক্ষ বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদাবাজি করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এই নির্বাচনে ইয়াহিয়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করেছেন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, নির্বাচনের আগে প্রতিবেদকের কয়েকটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশ এবং নির্বাচনে নিজেদের নিশ্চিত ভরাডুবি জেনে তারা একটা টাকাও খরচ করেননি। নির্বাচনে ইয়াহিয়ার পক্ষে আটঘাট বেঁধে কাজ করা স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের পর ইয়াহিয়ারা কয়েকদিন নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাসহ প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা খরচ করেছিলেন। কিন্তু ৫ জানুয়ারির আগে আকস্মিকভাবে গণমাধ্যমে তাদের অপকর্মের গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ইয়াহিয়ারা মুহুর্তেই নিজেদের গা লুকিয়ে পুত্র তাহা’র সমর্থনকারীদের ভুলে যেতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, ইয়াহিয়ারা মহাজোট মনোনীত প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্বাচনী এলাকায় যে বাজেট নিয়ে নেমেছিলেন, মুহুর্তেই সেখান থেকে টাকা-পয়সা খরচ করা বন্ধ করে দেন। ফলে ভোটের দিন দু’ উপজেলার কোন কেন্দ্রে চোরাচালানি ইয়াহিয়ার পুত্র তাহা’র কোন এজেন্টই ছিলেন না। জানা গেছে, প্রতারক ইয়াহিয়াদের পক্ষে নির্বাচনে যারা কাজ করেছিলেন এক পর্যায়ে তারাও চরম বেকায়দায় পড়ে ভোটের দিন নিজেদের বাড়িঘর থেকে বের হননি। তাহা ইয়াহিয়ার লাঙ্গল প্রতিকের বেশকিছু দলীয় সমর্থক জানান, চোরাকারবারি ইয়াহিয়ারা যে আসলেই খারাপ লোক তা তারা এবারের নির্বাচনে প্রমাণ করে ছাড়ছেন। তারা বলেন, ইয়াহিয়ার যদি নির্বাচন করার ইচ্ছেই না থাকত, তাহলে তিনি কেন শুধু শুধু জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিক বরাদ্দ নিয়ে দল ও নিজের সমর্থকদের সাথে প্রতারণা করেছেন?
সূত্র মতে, ইয়াহিয়াদের এই প্রতারণা ও ধান্ধাবাজির কারনে জাতীয় পার্টির ভাবমুর্তিও ক্ষুণœ হয়েছে নির্বাচনী এলাকায়। এজন্যই স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা দলীয় ভাবেও তাহা ইয়াহিয়া তথা চোরাকারবারি ইয়াহিয়াদের শাস্তির দাবি জানিয়ে দলের শীর্ষ নেতা হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলেন, উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় নির্বাচনী টিকেট এনে প্রতারণা না করলে ব্যক্তি তাহা ইয়াহিয়া নয়, স্থানীয় ভোটাররা অন্তত জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকে কমপক্ষে ২০/৩০ হাজার ভোট দিতেন। কিন্তু নিন্দনীয় বিষয় হচ্ছে, ইয়াহিয়ারা প্রথমে নির্বাচন করবে বলে ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা গুলো আত্মসাত করে গা ডাকা দেয়।
অসহায় পিতা-পুত্রের গল্প ঃ-
নির্বাচনের দিন ৫ জানুয়ারি। সকাল থেকেই যথা নিয়মে সব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। ফলে উক্ত সংসদীয় আসনের সবকটি ভোট কেন্দ্রে মহাজোট প্রার্থীর সরব উপস্থিতি ও তার নিজস্ব ভোটাররা লাইন ধরে ভোট দিচ্ছেন। চর্তুদিকে অবাধ, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও পর্যবেক্ষকরা স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করছেন যথা নিয়মে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ইতিপূর্বে বেশ ঢাকঢোল পিটানো লাঙ্গল প্রতিক তাহা ও তার পরিবারের সকলেই আত্মগোপনে। দু’ উপজেলার সবকটি ভোট কেন্দ্র এমনকি চোরাচালানি ইয়াহিয়াদের গ্রামের বাড়িতে খবর নিয়েও মিলছিল না তাদের সন্ধান। রাস্তায় কোথাও তাহা ও ইয়াহিয়াদের পোষ্টার সম্বলিত একটি গাড়িও চোখে পড়ছিল না। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটের দিন ও এর আগে প্রকাশিত কয়েকটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে নিজেদের অপকর্মের গোমর ফাঁস হয়ে পড়ায় চোরাচালানি ইয়াহিয়া ও তাহা’রা নিরব আতংকে ভুগছিলেন। এ কারনে তারা মুখ ফুটিয়ে কাউকে কিছু বলতে না পারলেও নিজেদের অর্ন্তলজ্জায় নিজেরা নির্ধারিত ভোটের দিনও স্থানীয় ভোটারদের সামনে যেতে ভয় পেয়েছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে বিষয়টি মনে হয়েছিল, কেবল যুদ্ধ পরাজয় বরণ করা দু’ রাজার প্রজা হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা। এই অবস্থায় নিজেদের প্রিয়জনও কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া ইয়াহিয়া ও তার পুত্র তাহা হয়ে পড়েন অসহায়। এক পর্যায়ে চরম অসহায় পিতা-পুত্র-ভোটের দিন দুপুরের দিকে অজ্ঞাত স্থান থেকে নানা আবুল-তাবুল অজুহাত তুলে নির্বাচনে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাহার করে সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু স্থানীয় ভোটাররা বিষয়টি হাস্যকর হিসেবে নিয়ে বলাবলি করেন, আছার খাওয়ার পর কোন বলি যদি বলেন আমি আর খেলব না, তাহলে বিষয়টি নেহায়েত পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কাজেই স্থানীয় ভোটাররা নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আকস্মিকভাবে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাহারের ঘোষনায় তাহা ও ইয়াহিয়াদের পাগল ও ধান্ধাবাজ বলে গালাগালি করে বলেন, তারা নির্বাচন প্রত্যাহার করেননি, আসলেই স্থানীয় ভোটাররা চোরাকারবারি ইয়াহিয়াদের প্রত্যাখান করেছেন।
ইয়াহিয়া ও তাদের মদদকারীদের শাস্তির দাবি ঃ-
অপকর্মের গোমর ফাঁস ও নির্বাচনে জনগণের উচিত শিক্ষা নিয়ে লাপাত্তা মাফিয়া ডন ইয়াহিয়া ও তাদের মদদকারীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। তারা বলেন, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মতো ঘৃনিত অপকর্মের দীর্ঘদিন পর সংশ্লিষ্ট যুদ্ধাপরাধিদের যদি দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তি হয়, তাহলে স্বাধীনতার পরে দেশের অস্ত্রসহ দেশের সব বড় বড় চোরাচালানে সম্পৃক্ত ইয়াহিয়াদের বিচারে আইনের বাঁধা কোথায়? কাজেই পাপ যদি বাপকে না ছাড়ে তাহলে দীর্ঘদিন পরে হলেও চোরাচালানি মাফিয়া ডন ইয়াহিয়াদের শুধু বিচার নয়, তৎকালীন সময়ে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করা দরকার। এতে করে প্রকৃত অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির পাশাপাশি দেশে নতুন করে ইয়াহিয়াদের মতো ভয়ংকর কোন অপরাধির উত্থান ঘটবে না। ফলে আইনজ্ঞরা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় বৃহৎ স্বার্থে ইয়াহিয়াদের অবৈধ সকল সহায় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত পূর্বক তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক চোরাচালানে বাংলাদেশের গডফাদার শিল্পপতি উক্ত আনিসুর রহমান ইয়াহিয়ার অজানা আরো অনেক কুকীর্তির তথ্য এসেছে প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে। সেখানে তার অস্ত্র, মাদক, পতিতা ও চোরাচালানে তার অন্যতম সহযোগিদের তথ্য উপাত্ত, রাজস্ব ফাঁকি, সন্ত্রাস লালন-পালন, রোহিঙ্গা কানেকশন সহ বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। যা অনুসন্ধান শেষে প্রকাশিত করা হবে। চোখ রাখুন গণমাধ্যমে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন