সুখে থাকার গোপন রহস্য!!

nirob-sarika
ডেস্ক রিপোর্ট
সুখী মানুষে পরিণত হবার সত্যি কি কোনও গোপন ফর্মুলা আছে? সত্যি বলতে কি, আছে! এবং সেই গোপন রহস্যটা লুকিয়ে আছে আপনার মাঝেই। এই ছোট্ট জীবনটাতে আমরা সকলেই চাই সুখী হতে, কিন্তু পারি কি? সুখ কোনও বস্তু তো নয় যে বাজার থেকে কিনে আনলেন আর হয়ে গেলো। সুখ একটা অনুভব, যা নিজের মাঝেই তৈরি হয়। আর এই অনুভব আপনার মাঝে তখনই তৈরি হবে, যখন আপনি নিজের অন্তরকে তৈরি রাখবেন সুখের জন্য। আর নিজেই খুঁজে নেবেন সুখের এক টুকরো আলো।

সন্তুষ্ট থাকুন নিজের প্রাপ্যে-
আমাদের সমস্ত অ-সুখের সূত্রপাত হয় নিজের মাঝে এক রকমের অপূর্ণতা থেকে। এটা নেই, সেটা নেই, এটা কেন পেলাম না, ওটা কেন হলো না, কেন আরও সুন্দর নই, কেন আরও বিত্ত নেই… ইত্যাদি হাজারো আফসোস দিয়ে পূর্ণ থাকে আমাদের অন্তর। এত পূর্ণ যে সেখানে সুখের জন্য আর জায়গাই অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন যে কি আপনার কাছে কি আছে? নিজের যা আছে, সেটাকেই মন দিয়ে দেখুন। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করবেন যে প্রাপ্তির লিস্টিটা নেহাত খাটো নয়। অলীক বস্তুর আশায় সময় নষ্ট না করে নিজের যা আছে সেটা নিয়েই বেঁচে থাকতে শিখুন।

বাদ দিন অহেতুক দুঃখ বিলাস-
হ্যাঁ, দুঃখ একটা বিলাসিতাই। এবং তাও কেবল অলস মানুষদের জন্য। কারণ একজন কর্মঠ মানুষ নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য পরিশ্রম করা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, দুঃখ নিয়ে বিলাস করার সময় তার অন্তত নেই। এই যে ইন্টারনেটে বসে এই লেখা পড়ছেন, আপনি বাংলাদেশের সেই ৩০ শতাংশ মানুষদের একজন যারা কিনা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পায়। তাহলে একবার ভেবে দেখুন তো, কত ভাগ্যবান আপনি!! নিজের দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষের চাইতে আপনি বেশি সৌভাগ্যশালী। ঠিক মত খেতে পারছেন, ঘুমাতে পারছেন, মাথার ওপরে ছাদ আছে… পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষের সেই সুবিধাটুকুনও নেই। সুতরাং ভেবে দেখুন একবার, কি ভীষণ ভাগ্যবান আপনি। জীবন থাকলে, কষ্ট থাকবেই। দুঃখ- কষ্ট- ব্যথা না থাকলে আর জীবন কিসের? কিন্তু সেগুলো আছে বলেই সারাক্ষণ গোমড়া মুখে থাকতে হবে বা কপাল চাপড়ে কাঁদতে বসতে হবে, তার কোনও মানে নেই। সেটা কেবল বোকা মানুষেরাই করেন।

যে চলে যাচ্ছে, তাকে যেতে দিন-
জীবন থাকলে সম্পর্ক থাকবে। আর সম্পর্ক থাকলে ভাঙ্গা- গড়াও থাকবে। আমাদের জীবনের সবচাইতে বড় কষ্টের ব্যাপারটা হচ্ছে প্রিয় মানুষগুলো থেকে বিচ্ছেদ। কখনও মৃত্যু, কখনও দূরত্ব… বিচ্ছেদের কারণ যাই হোক না কেন, প্রিয় মানুষের বিরহ আমাদের আচমকাই শুন্য করে ফেলে। হয়তো প্রাণপণে চেষ্টা করি তাকে ঠেকাবার। কিন্তু লাভ হয় কি? একদমই তো না! আর তাই, যে চলে যাচ্ছে তাকে যেতে দিন। আটকে রাখার চেষ্টা করে কোনও লাভ নেই, কেননা মৃত্যু হোক বা দূরত্ব- কোনটার সাথেই যুদ্ধ করে জিততে পারবো না আমরা। যে চলে যেতে চায় তাকে কি ধরে রাখা যায়? ধরে যখন রাখতেই পারবেন না, তখন কষ্ট আর না বাড়িয়ে যেতে দিন।

আগামীকালের অপেক্ষা নয়, বাঁচুন আজকেই-
যা হয়ে গেছে, সেটাকে বদলাবার ক্ষমতা কারো নেই। আর এই কথাটা ভুলে যাবেন না কখনও যে জীবনের রিওয়াইনড করার কোনও ব্যবস্থা নেই। চাইলেই জীবনকে নতুন করে শুরু করা যায় না, কিংবা এক ঘণ্টা পিছিয়ে নিয়ে অতীতে ফিরে যাওয়া যায় না। আর তাই আমাদের অবশ্যই বর্তমানকে মেনে নিতেই হবে, আর বাঁচতে হবে বর্তমানেই। অনেকেই আছেন, আগামীকালের আশায় বেঁচে থাকেন। আগামীকাল এটা করবো, সেটা হবে ইত্যাদি হাজারো পরিকল্পনা নিয়ে তাদের বাস। কেউ কেউ হয়তো নিজেকে বর্তমানে কষ্ট দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সাশ্রয় করেন। কিন্তু আগামীকাল কি আসবে? আপনি নিশ্চিত জানেন আগামীকাল সম্পর্কে? আমরা কেউই কিন্তু জানিনা ! তাহলে কেন জীবনকে অপেক্ষা করিয়ে রাখা? জীবনটা বর্তমানেই, তাই উপভোগ করে নিন সবটুকু।

লোভ করবেন না –
পৃথিবীতে সবাইকে সব কিছু পেতেই হবে, এমন কোনও কথা আছে? আপনি হয়তো বিশাল ধনী হতে চান, কিংবা হতে চান কোনও নায়িকার মতন সুন্দর। নিজেকে আপনার হয়তো খুব কুৎসিত লাগে, কিংবা খুব গরীব মনে হয়- তাই না? আচ্ছা, একবার ভাবুন তো- কি করবেন আপনি বিশাল ধনী হয়ে, কিংবা খুব সুন্দর হয়ে? এই সমস্ত কিছু কি মৃত্যুর পর সাথে নিয়ে যেতে পারবেন? খুব ধনী বা সুন্দর হওয়াটাই জীবনে বড় নয়, বড় হচ্ছে মানুষ হিশাবে আপনি কেমন একমাত্র সেটাই। যারা আপনাকে সত্যি ভালবাসবে, তারা কিন্তু এই একটা গুণের জন্য ভালবাসবে। আর যারা ভালবাসবে অর্থ কিংবা সৌন্দর্যের খাতিরে, তেমন মানুষের ভালোবাসা না পাওয়াই ভালো।

বাড়িয়ে দিন সহযোগিতার হাত –
নিজের জন্য তো সবাই বাঁচে। কখনও অন্যের জন্যও বেঁচে দেখুন। বিশেষ করে নিজেকে যখন খুব দুঃখী আর একলা মনে হবে, তখন। অন্য কারো দিকে বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত, অন্য কারো কষ্ট কমাতে সাহায্য করুন। যদি সফল হন, দেখবেন যে নিজের মাঝে ১০০ ওয়াটের সুখের আলো জ্বলে উঠেছে। অন্য কারো উপকারে আসতে পারছেন আপনি… দেখবেন এর চাইতে বেশি আত্মতৃপ্তি আর কিছুতেই নেই। একবার করেই দেখুন না!

আস্থা রাখুন সৃষ্টিকর্তার ওপরে –
কিচ্ছু যায় আসে না আপনি কোন ধর্মের অনুসারী, কিংবা আল্লাহ- ঈশ্বর- ভগবান ইত্যাদি কোন নামে নিজের সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে থাকেন আপনি। যায় আসে কেবল এটাতেই যে তাঁর ওপরে আপনার আস্থা আছে কিনা। পৃথিবী কায়েম আছে এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই। জীবনে যত ঝড় ঝাপটাই আসুক না কেন, আস্থা রাখুন নিজের সৃষ্টিকর্তার ওপরে। দেখবেন নিজের মাঝে খুঁজে পেয়েছেন অন্য রকম একটা মুক্তি। ভিন্ন রকম একটা সুখ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন