তারেক আতঙ্কে সরকারের মন্ত্রীরা: মওদুদ

এম এ আহাদ শাহীন :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, তারেক রহমান যখন নিজে মনে করবেন তার আসা প্রয়োজন, তখনই তিনি দেশে ফিরবেন। একই সঙ্গে তারেক আইনি প্রক্রিয়ায় সরকারের সব ধরনের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে ফেরার আভাস পেয়ে সরকার আতঙ্কিত, মনস্তাত্ত্বিক চাপে ভুগছে। এজন্য একই ইস্যুতে সরকারের মন্ত্রীরা তিন-চার রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছেন।’
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের হল রুমে ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকার ও দুদকের অব্যাহত ষড়যন্ত্র এবং প্রতিহিংসার প্রতিবাদে’ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এনআরএফ) আয়োজিত নাগরিক সভায় তিনি একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে হবে না। টাকা নষ্ট করে  ইন্টারপোলকে ডাকার প্রয়োজন নেই। সময় হলে তিনি নিজেই আসবেন।’ মওদুদ বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন এবং সাহসের সঙ্গে আইনি মোকাবেলা করবেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে উজ্জীবিত করতে তারেক রহমানের মতো নেতার অনেক বেশি প্রয়োজন।’ তত্ত্ববধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি খারাপ কিংবা অগণতান্ত্রিক সরকার হয়ে থাকে, তাহলে তাদের মদদে ক্ষমতায় এসেছিলেন কেন? সেই ১/১১’র সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি কেন?’

বাংলাদেশে আজ মহাসঙ্কটে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘দেশে মধ্যপন্থি গণতান্ত্রিক শক্তি থাকবে কি থাকবে না শিগগিরই সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে লড়াই চলছে তা সফল না হলে দেশে যে রাজনীতির আবির্ভাব হবে তা দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে। মধ্যপন্থি গণতান্ত্রিক শক্তির বিজয়ের জন্য এখন তারেক রহমানকে দরকার। এ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও আরো শক্তিশালী রাখার জন্যই সময়মতো তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।’

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও ইন্টারপোলের সহায়তার নামে রাষ্ট্রের অর্থ নষ্ট করার দরকার নেই। সময় উপযোগী মনে হলে দেশের প্রয়োজনে তারেক রহমান নিজেই স্বেচ্ছায় দেশে ফিরবেন। আইনি প্রক্রিয়ায় সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক মামলা মোকাবেলা করবেন।’

এক এগারো ও বর্তমান সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করলেও এসব ঘটনার সঙ্গে তার সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে দাবি করেন মওদুদ।

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিংবা সংলাপ সব বিষয়েই প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা তিন ধরনের কথা বলছেন। সরকার সবকিছুতেই সমন্বয়হীন ও লক্ষভ্রষ্ট। সংলাপ কীভাবে হবে।’

আওয়ামী লীগ নেতারা যা বলেন দুদক ও আদালত তাই করেন বলে অভিযোগ করেন মওদুদ। তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে আনার কথা মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বলার পরই দুদক ও আদালত তা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বক্তৃতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, এটা খালেদা জিয়ার কথা, তারেক রহমানের কথা, এদেশের জনগণের কথা। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।’

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘তারেক রহমান অত্যন্ত সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক নেতা। বাংলাদেশ বর্তমানে যে অন্ধকার গলিতে কারাবন্দি সেখান থেকে ফিরতে দেশে আর একজন জিয়াউর রহমান দরকার। তারেক রহমানের কর্মে জিয়াউর রহমানের প্রতিফল স্পষ্ট। দেশের এই সঙ্কটে যোগ্য নেতৃত্বের ডালি সাজিয়ে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। সকল মামলা নির্যাতন প্রতিরোধ করে যুবশক্তির প্রতীক হিসেবে তাকে এদেশের দায়িত্ব নিতে হবে। এজন্য জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ঢাবির সাবেক প্রোভিসি আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ঢাবির শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. সদরুল আমীন, সাবেক সহসভাপতি ড. তাজমেরী এসএ ইসলাম, প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, বিএনপির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ মিয়া আলম, বিএনপির নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জাকির হোসেন ভূইয়া প্রমুখ।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমান ও সভা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন