ফলপ্রসূ সংলাপ না হলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

সাদ্দাম হোসেন : 
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান না হলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আর তার পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ ও দুঃখজনক- এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করলেও এর কোনো সমাধান না খুঁজে এ সংকট সৃষ্টির জন্য এখনও পরস্পরকেই দোষারোপ করছেন প্রধান দুদলের নেতারা।  


জাতীয় সংসদে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তির পর থেকেই এর বিরোধীতা করে আসছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দাবি আদায়ে একের পর এক হরতাল, অবরোধ, সমাবেশসহ নানান কর্মসূচি দিয়ে আসছে দলটি। এদিকে, অনির্বাচিত কারও কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্তে এখনও অটল সরকার। ফলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সমাধানে এখনও কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি কোনো পক্ষ। পরস্পরের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক ও হঠকারি আচরণের অভিযোগ তুলছেন দু'পক্ষই। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিরোধী দল দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করছে। দেশের সম্পদ ধ্বংস করছে। দেশে তারা সংকট সৃষ্টি করছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংলাপ প্রসঙ্গে সরকারের আচরণ জনগণের জন্য বিভ্রান্তিকর এবং বিরোধী দলের জন্য হতাশাজনক। তত্ত্বাবধায়ক প্রসঙ্গ ছাড়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই আসে না।
ফখরুল বলেন, সংলাপের ব্যাপারে সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করতে নানা সময় নানা কথা বলছে। তারা কখনও বলছে সংলাপ চায় আবার কখনও বলছে তত্ত্বাবধায়ক প্রসঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। তারা যুক্তি তুলে ধরছে বিশ্বের কোথাও তত্ত্বাবধায়ক নেই। আমরা কোনো এজেন্ডা ছাড়া আলোচনা করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তত্ত্বাবধায়ক প্রসঙ্গ ছাড়া আলোচনার প্রশ্নই আসে না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই সরকারই দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। সংলাপ প্রসঙ্গে সরকারের আন্তরিকতা না থাকায় হতাশ হয়ে আন্দোলনের পথই বেছে নিতে হচ্ছে।

রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই আমরা সংগ্রামের মধ্যে আছি। নিয়মতান্ত্রিক ও সংবিধান সঙ্গতভাবে আন্দোলন করছি। সরকার যখন অগণতান্ত্রিক আচরণ করে তখন প্রতিবাদ না করে পারা যায় না। সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ কোন গণতান্ত্রিক আচরণ? পল্টন ময়দান, মুক্তাঙ্গন সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সভা-সমাবেশ করছি। সেটাও আর করতে দেওয়া হচ্ছে না। বলেন, বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

সরকারই সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এমন অভিযোগ করে বিরোধীদলীয় চিফ হ্ইুপ জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, তারাই সভা সমাবেশ করতে বাধা দিচ্ছে, ১৪৪ ধারা জারি করছে। সরকারই দেশে সংকট সৃষ্টি করছে তারাই এর সমাধান করবেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দেশে কোনো সংকট থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায় হয় না।

এদিকে, যেকোনো নেতিবাচক ও অগ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি এড়াতে সমঝোতার মাধ্যমে সংকট নিরসনের কথাই বারবার বলছেন পর্যবেক্ষরা। 
এ ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনবিদ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ২০০৬ সালে খালেদা জিয়া ঠিক একই ভাষায় কথা বলেছেন। শুধু পক্ষ পরিবর্তন হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে এই সংকটের। কিন্তু আলোচনাই যদি না হয় তাহলে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

নামমাত্র সংলাপে না বসে, যৌক্তিক আলোচনার মধ্যদিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে সচেষ্ট থাকতে হবে সব দলকেই- এমন মšত্মব্যও করেন এই আইনবিদ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন