প্রেম-ভালবাসার এক ভিন্ন মাত্রা

ডেস্ক রিপোর্ট :
চীনের শাংহাই-এ জীবনসঙ্গী বেছে নেয়ার অন্যরকম এক মেলা হতে যাচ্ছে। সেখানে জমায়েত হওয়া অবিবাহিত পুরুষরা, সুন্দরীদের ভেতর থেকে বেছে নিয়েছেন তার পছন্দের সঙ্গীকে। একই ভাবে যুবতীরাও খুঁজে নিয়েছে তার স্বপ্নের পুরুষকে।  ১৮০০০-এরও বেশি নর-নারী এ মেলায় অংশগ্রহণের জন্য আগে থেকে নাম নিবন্ধন করিয়ে রেখেছিল।
মেলাটি আয়োজন করা হয়েছে প্রশস্ত একটি শপিং মলের ভেতরে। মেলায় অংশগ্রহণকারী উপস্থিত জনতার সামনে দু’টি বিলবোর্ডে অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। শনিবার সকালে বৃষ্টিপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে আগ্রহীরা মেলার ভেন্যুতে উপস্থিত হয়। মেলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যেই উপস্থিত জনতা রীতিমতো ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে অবিবাহিতদের তালিকা পর্যবেক্ষণ শুরু করে। পছন্দসই কাউকে সম্ভাব্য সঙ্গী মনে হলেই প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো টুকে নেয় তারা; যেমন বয়স, উচ্চতা, শিক্ষা, বাৎসরিক আয়, নিবাস ইত্যাদি। কেউ নোটবুকে লিখে নেয়, কেউ মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে পুরো তালিকারই ছবি তুলে নেয়।

অপর একটি হলে ১০০’রও বেশি নারী-পুরুষকে সুসজ্জিত টেবিলে মুখোমুখি বসিয়ে দেয়া হয়। এদের বয়স ২০ থেকে ৩০-এর কোঠায়। তারা সবাই ‘স্পিড ডেটিং’-এ যোগ দিতে এসেছে। সমপ্রতি বিষয়টি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চীনে। হঠাৎ হলের লাউডস্পিকারে খ্যাতিমান গায়িকা নোরা জোনসের সুরেলা কণ্ঠে একটি প্রেমের গান বেজে ওঠে। কিছুক্ষণ পরেই অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক ‘৮ মিনিটের দ্রুত ডেটিং’-এ সবাইকে স্বাগত জানায়। ৮ মিনিট সময় পার হলে উপস্থাপক ছেলেদেরকে নিজ আসন ছেড়ে ২ আসন বামে বসতে বলে। এভাবে চলতে থাকে। অনেক অংশগ্রহণকারীদের জন্য এটাই তাদের জীবনের প্রথম ডেট। ছেলেদের মধ্যে এক অংশগ্রহণকারী ইচিন পাই (২০) কানাডার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে দেশে বেড়াতে এসেছে সে। তার মতে, বিষয়টি ফলপ্রসূ... অনেকটা গবেষণার মতো।

এর আগে তার কখনও কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল না। ইচিন আরও বলে, হাই স্কুলে উঠতি বয়সী টিনেজারদেরকে প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে নিরুৎসাহিত করা হয় এবং তাদের স্কুলের পড়াশোনায় মনোসংযোগ করার তাগিদ দেয়া হয়। একজন নারী একজন পুরুষের কাছে কি প্রত্যাশা করে সেটা জানতেই সে মেলায় এসেছে। সে বলে, ‘মেয়েদের  সঙ্গে কথা বলার পর আমি এখন বিষয়টি বুঝতে পেরেছি; যেসব ছেলে তার পিতামাতার ওপর নির্ভরশীল মেয়েরা তাদের পছন্দ করে না।’ চেনআই ইনকর্পোরেটেড এই স্পিড ডেটিং ইভেন্টটি আয়োজন করে। কোম্পানিটি একই সঙ্গে চীনের সব থেকে বড় ম্যাচ-মেকিং ওয়েবসাইট। তাদের ওয়েবসাইটে ৫ কোটি ৮০ লাখ নিবন্ধিত ব্যবহারকারী আছে এবং নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে মাসে ১০ লাখ করে। এর  প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সুং লি সাবেক ব্যাংক-বিনিয়োগকারী। তিনি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। তার মতে ১৯৭৯ সালে চীন সরকারের এক সন্তান নীতি বাস্তবায়নের ফলস্বরূপ এ সময়ের তরুণদের সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা খুবই কম, যা ডেটিংয়ের ক্ষেত্রে নিতান্তই জরুরি। ১৯৮০ সালের পরে যেসব শিশুর জন্ম হয়েছে তাদের কোন ভাইবোন নেই। ফলে তারা এমন একটি পরিবেশে গড়ে উঠেছে যেখানে বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গে ভাববিনিময়ের কোন সুযোগ ছিল না। মেলায় অংশগ্রহণকারী অনেকে এখানে এসেছেন কেননা তাদের সাহায্যের প্রয়োজন। তাদের মতে পরিবার ও কাছের বন্ধুবর্গ ব্যতিরেকে প্রেমের সম্পর্ক হতে পারে এমন নতুন কারও সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলাই মুশকিল। যারা তাদের ২০-এর কোঠা পূর্ণ করতে চলেছেন এমন অনেকে, বিশেষ করে মেয়েরা বিয়ে করার জন্য চরম চাপের মধ্যে থাকে। স্পিড ডেটিংয়ে অংশগ্রহণকারী ২৬ বছর বয়সী চেলসি’র মা তাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘তুমি এখনও সিঙ্গেল কেন? তোমার কি সমস্যা আছে?’ এলিসের পাশে বসা তার সমবয়সী মে’র কণ্ঠেও একটি কথা। তার বাবাও নাকি তাকে একই প্রশ্ন করে। মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে চেলসি বলে, প্রায় সবার ঘটনাই একই ধরনের। আমি যদিও সিঙ্গেল হওয়ার কারণে স্বাধীনতা উপোভোগ করতে পারছি তারপরও আমি জানি যে এ বয়সে আমার একটা প্রেমের সম্পর্ক থাকা উচিত। মে বিয়ে করতে চায় ৩০ বছর পুরো হওয়ার আগে। চেলসি, মে দু’জনই বললো, তারা কেউই নারী সমাজের উচ্ছিষ্ট অংশ হিসেবে থাকতে চায় না।

এবারের মেলার চমকপ্রদ একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় ছিল। সেটা হলো, মেলায় অংশগ্রহণকারী অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের সঙ্গে প্রায় সমসংখ্যক পিতার উপস্থিতি। অনেককে মেলায় অংশগ্রহণকারী তাদের সন্তানের নাম লেখা পোস্টার নিয়ে ভেন্যুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এমনকি অনেক পিতামাতা তাদের ছেলেমেয়েকে স্পিড ডেটিং টেবিলে নিজেরাই সঙ্গে করে নিয়ে যান। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন