কক্সবাজার সৈকতের বালি উত্তোলন করে বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের পার্শ্ববর্তী শহরের কলাতলীতে বাঁধ ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করতে প্রকাশ্যে ড্রেজার মেশিন দিয়ে সমুদ্রের বালি উত্তোলন করছে ডেপলপার কোম্পানী সাম্পান রিসোর্ট। দীর্ঘদিন ধরে ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মিলে দীর্ঘদিন ধরে বৈধভাবে সৈকতের বালি উত্তোলন
করে বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ করে আসছে। পরিবেশ আইন অমান্য করে অবৈধ ভাবে নির্বিচারে সৈকত থেকে বালি উত্তোলন করায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকা গুলো। সৈকতের বালি উত্তোলনের বিষয়ে খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আহম্মদ আলীর নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার সহ যৌথভাবে ভ্রাম্যমান আদালত। ওসময় অভিযানে নেতৃত্বদানকারী নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট গাড়ী থেকে বালি উত্তোলনকারীদের উদ্দোশ্যে বলেন,“ আপনারা জনস্বার্থে সড়ক রক্ষায় বালি উত্তোলন করছেন, তাই আপনাদের ছেড়ে দিলাম। ভবিষ্যতে এ ধরনের বালি উত্তোলনের প্রয়োজন পড়লে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে করবেন।” ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রকাশ্যে সৈকতে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালি উত্তোলনের দৃশ্যটি দেখেও ওই ডেভলপার কোম্পানীর বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়ায় উপস্থিত এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ওসময় অভিযানে নেতৃত্বদানকারী ম্যাজিষ্ট্রেট এটি বালি উত্তোলন নয় পানি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে উপস্থিত সাংবাদিক এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনেই রহস্যজনক ভাবে মন্তব্য করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে ভ্রাম্যমান আদালতটি চলে যান। এ ব্যাপারে অভিযানে নেতৃত্বদানকারী নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আহম্মদ আলীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “সাম্পান নামের আবাসন প্রকল্পের কিছু লোক সৈকতে মেশিন বসিয়ে একটি কাপড়ের বক্সে পানি ঢুকাতে দেখেছি। বক্সে পানি ঢুকালেও বালি ঢুকাতে দেখিনি, তাই তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ফিরে এসেছি। পানির সাথে যে বালি ঢুকানো হয়, তা আমার জানা ছিলনা”। পরে তিনি বালি উত্তোলনের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, বালি উত্তোলনের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরেুদ্ধে মামলা করা হবে। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কেন ব্যবস্থা নেয়নি তা তার জানা নেই। তবে বালি উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে হয়তো কেউ ম্যাজিষ্টেটকে ভূল বুঝিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রতিনিয়ত বালি উত্তোলন অব্যাহত থাকলেও এব্যাপারে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা উদাসীন থাকার ফলে চরম পরিবেশ ঝুকির মুখে রয়েছে পরিবেশ সংকটাপন্ন শহরের কলাতলী সমুদ্র সৈকত এলাকা। সরেজমিন পরিদর্শনকালে গতকাল মঙ্গলবার দুপর ১টা কলাতলী বিধস্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাম্পান নামের একটি আবাসন প্রতিষ্টান তাদের প্রকল্প রক্ষায় নিজের স্বার্থে কোন অনুমুতি ছাড়াই সৈকত থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে বলেও জানান তিনি। এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, স্থানীয় নফু মাঝি ও ডাঃ মতিনের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একদল শ্রমিক ডেভলপার কোম্পানী সাম্পানের বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণে সৈকতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে জিআই টেক্স বা বিশেষ ধরনের কম্বল কাপড়ের বক্সে নলের মাধ্যমে বালি ঢুকানো হচ্ছে। তখন বালিদস্যুরা আরো দ্বিগুণ উৎসাহে সৈকতের বালি তুলতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে সৈকত থেকে পানিসহকারে বালি তুলে বালির বাঁধ নির্মাণের কাজ নেন ডাঃ মতিন ও নফু মাঝি। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বিভিন্ন ব্যাক্তি ও বড় বড় প্রতিষ্টান বৈধ অবৈধ স্থাপনা নির্মানের জন্য সমুদ্রের বালি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করে আসছে। এসব প্রতিষ্টানের মধ্যে রয়েছে, রেংগস গ্রুপ, এ কে খান গ্রুপ, সি ক্রাউন, আরব বির্ল্ডাস, সিমিজু হ্যাচারী, কোরাল রীফ, সমুদ্র বিলাস, ব্রাক শিক্ষা সেন্টার, বেলী হ্যাচারী, ফ্লোরা হ্যাচারী, বিশ্বাস বির্ল্ডাস সহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্টান। ওসব প্রতিষ্টান কয়েক মাস পর পর বালি উত্তোলন করে থাকে। কারণ জি ও টেক্সটাইল নামের বিশেষ ধরনের কম্বল কাপড় দিয়ে (১০/১২ ফুট প্রস্থ ও ১৭০-২০০ ফুট দৈর্ঘের বক্স) তৈরী করা হয় এসব বালির বাধঁ। জি ও প্রতি বালি ধারণ ক্ষমতা ২০/৩০হাজার ঘনফুটেরও বেশী। সমুদ্রের ঢেউয়ের প্রচন্ড ধাক্কায় কয়েক মাস পর কাপড় ছিড়ে গিয়ে বালির বাঁধ পানির সাথে বিলিন হয়ে যায়। ফলে জমি ও প্রতিষ্টান মালিকরা পুনরায় বাঁধ নির্মাণ করে থাকেন।এসব অবৈধ বাঁধ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে কলাতলী ঘয়ামতলী এলাকার আবুল কালামের ছেলে হাবিবুল মতিন প্রকাশ ডাঃ মতিন ও নফু মাঝির এর নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জনের একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের রয়েছে ৪টি শক্তিশালী ড্রেজিং মেশিন ২টি ফাইলিং মেশিন। বাঁধ নির্মানের পুর্বে তারা ঝাউগাছ দিয়ে ফাইলিং করে গাইড ওয়াল তৈরী করে থাকে। সমুদ্রে জোয়ারের সময় ড্রেজিং মেশিন ঠেলা গাড়ীর উপর বসিয়ে বালি উত্তোলন করে থাকে। একাজের বিনিময়ে শ্রমিককরা দ্বিগুণ পরিমাণ পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। এব্যাপারে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদেরকে খবর দিলেও তারা ঘটনাস্থলে আসেননা। অথবা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ওসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড বন্ধ করতে আসলেও ম্যানেজ হয়ে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ফিরে যান। এতে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে সৈকতের বালি তোলার প্রেরণা পায়। ফলে কলাতলী এলাকার পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা আরো বেশী ঝুকিপূর্ণ হয়ে সংকটাপন্ন হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে, এমনই গুরুতর অভিযোগ স্থানীয় সচেতন মহলের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন