নাইক্ষ্যংছড়ির ইউপি চেয়ারম্যান ও তার কথিত ব্যক্তিগত সচিবের ধৃষ্টতা

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজেহাল 

মোহাম্মদ ইউনুছ
বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দীপক বড়–য়া পরিষদের কাজকর্ম সারেন তার ব্যক্তিগত সহকারী আবছারকে দিয়ে । এক সময়েকার উখিয়া বাজারের টাউট ও বিপদগামী যুবক আবছারকে দিয়ে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে
ভোট চুরি ও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য আবছারকে ভাড়া করেন । এই ধাপে সফল হলে দীপক বড়–য়া তার বিভিন্ন কর্মকান্ড ও অপকর্ম চালিয়ে নেওয়ার জন্য মাসিক বেতনে রেখে দেন টাউট এই আবছারকে । চেয়ারম্যান দীপক বড়–য়া পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার জেলা সদরে তার বাসায় নিয়মিত থাকেন । প্রায় সময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না  । এই সময় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সব রকম কাজ কর্ম করেন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব আবছার । ট্রেড লাইসেন্স,জাতীয়তা সনদ,জন্ম নিবন্ধন সনদ,গৃহ ট্যাক্স,বাজার ইজারা,টোল ট্যাক্স,বিচার,ভিজিডি,ভিজিএফ বিতরণ ও যাচাই -বাচাই ও আবছারই করে আসছেন বলে অভিযোগকারীরা জানান । ঘুমধুমের রেজু আমতলীর জামাল উদ্দিন (৫২) জানান,-চেয়ারম্যান দীপক বড়–য়া তার ইউনিয়ন পরিষদের কাজ,মামলাসহ বাড়ীর সর্ব প্রকার কাজের জন্য নির্ভর করেন আবছার নামের এই টাউটের উপর। সরকারীভাবে একজন সচিব পরিষদে পদায়িত থাকলেও তাকে পাশ কাটিয়ে দীপক বড়–য়া তার কাজকর্ম করেন বখাটে এই আবছারকে দিয়ে। বেশভুষায় ফিটফাট আবছার নিজেকে পরিচয় দেন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) হিসাবে। কথিত আছে আবছার চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর অবিকল নকল করে জন্ম নিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদ ইস্যু করেন ।  গত ২জুলাই (মঙ্গলবার) সকাল ১১.৩০ ঘটিকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ জামিল ভিজিডি কার্ডের বিষয়ে প্রাপ্ত একটি অভিযোগ তদন্তে নোটিশ প্রদান পূর্বক ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে কার্যালয়ে যান। পরিষদে চেয়ারম্যানের বসার কক্ষে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবছারকে কক্ষের ভিতরে দাড়িয়ে থাকতে দেখেন। আবছার পরিষদের কেউ নয় এই যুক্তি দেখিয়ে ইউএনও তাকে বাইরে যেতে বলা মাত্র ভীষণ চটে যান চেয়ারম্যান দীপক বড়–য়া। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন এবং ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস.আই বাচ্চুর উপস্থিতিতে তিনি ইউএনও’র উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলতে থাকেন- আবছার  আমার ব্যক্তিগত কাজ করে। তাকে বের করে দিতে হলে আমার অনুমতি নিতে হবে। চেয়ারম্যানের এহেন ঔদ্বত্যপূর্ণ আচরণে হতবাক হয়ে যান মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন ও ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস আই বাচ্চু।  তারা দীপক বড়–য়াকে শান্ত করতে চেষ্টা করতে থাকেন। চেয়ারম্যানের আচরণে উৎসাহিত  হয় টাউট আবছার। চেয়ারম্যানের সাথে সুর মিলিয়ে সেও চিৎকার করে গালিগালাজ করতে থাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা,ঘুমধুম পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জসহ বিচারে উপস্থিত জনসাধারন ও মেম্বার-মহিলা মেম্বার এর সামনে চরম নাজেহাল হন  নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জামিল । তদন্ত শেষে ভিজিডি তালিকায় প্রতিস্থাপিত ১৯ জন নতুন উপকারভোগীর মাঝে চাল বিতরণের সময়েও আবছারকে সচিবের সাথে বসে পুরো বিষয়টি তদারকি করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, -চেয়ারম্যান দীপক বড়–য়া একজন বহিরাগত যুবককে পরিষদের কাজে শুধু সম্পৃক্তই করেন এবং  তার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে তিনি আমার সাথে ঔদ্বত্যপূর্ণ আচরণও করেছেন। পরিষদে সচিব থাকা সত্বেও পরিষদের কাজ বহিরাগত ব্যক্তি দিয়ে করনো সম্পূর্ণ বেআইনী। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের কাজে আবছারকে সম্পৃক্ত করা ও তার নাক গলানোর বিষয়ে পরিষদের মহিলা সদস্যা ফাতেমা,সদস্য রহিমসহ ৪ জন সদস্য অভিযোগে যথাযথ ব্যবস্থার দাবী জানান । অন্যদিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের আব্দু রহিমের ছেলে ইব্রাহিম (৩০)সহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, চেয়ারম্যান দীপক বড়–য়ার দীর্ঘদিনের সহচর আবছারের আচরণে তারা ত্যাক্ত বিরক্ত। পরিষদের কাজকর্মে আবছারের নাকগলানো বন্ধে তারা সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন  । এই বিষয়ে চেয়ারম্যান দীপক বড়–য়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,- আমার লোককে ইউএনও বের করে দেওয়ার কে  । অন্য অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলে মোবাইল বন্ধ করে দেন । এর পর প্রায় ১ ঘন্টা তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি । এই বিষয়ে অভিযুক্ত দীপক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব আবছার বলেন,- ইউএনও তো অনেক ছোট ,বান্দরক্ষানের সাত থানার মালিক আগের ডিসি (জেলা প্রশাসক)কে তার কক্ষে একটা জায়গা লিজের বিষয়ে এক পর্যায়ে মারধর বাকী রেখেছি ,এমন বকাবকি করেছি । আমার দাদা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা অনেক  । তিনি বিএনপি’র লোক হলেও তার হাত ঢাকা পর্যন্ত । আমি চেয়ারম্যানের বিশ্বস্থ লোক তাই ,তিনি আমাকে দিয়ে পরিষদসহ তার সব কাজ করান । আর আমাকে দিয়ে কাজ করালে হিসাব ঠিকমত পান ।
ছবির ক্যাপশন ঃ ভিজিডি চাল বিতরণ তদারকি করছেন চেয়ারম্যানের স্বঘোষিত ব্যক্তিগত  পিএস আবছার। কাগজ ও কলম হাতে মধ্যস্থলে বসা ব্যক্তি আবছার  ।