নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের ৫পয়েন্ট দিয়ে চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সীমান্তের এসব পয়েন্ট দিয়ে জ্বালানি-ভোজ্য তেল, ঔষধ, গবাদি পশু ও ইয়াবা পাচার আশংকা জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৩৯-৪১ নং পিলারের মধ্যবর্তী একাধিক পয়েন্ট দিয়ে বিজিবি, পুলিশ ও কতিপয় রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের ম্যানেজ করে চোরাচালানীরা নির্বিঘেœ এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া সদরের রাজাপালং ইউনিয়নের করইবনিয়া, ডিগলিয়াপালং, ডেইলপাড়া, তুলাতলিপাড়া ও হাতিমোড়া পয়েন্ট পাহাড়ী এলাকা দিয়ে চোরাচালানীরা মিয়ানমারের সাথে পাচারকার্য চালাচ্ছে। গত প্রায় ৩মাস ধরে সীমান্তে এসব পয়েন্ট দিয়ে তুলনামূলক ভাবে চোরাচালান চলে আসলেও গত ১৫দিন ধরে রমজান মাসকে টার্গেট করে চোরাচালান ব্যবসা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। রাজাপালং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য ও স্থানীয় বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি মোরশেদ আলম ওরফে মুন্সি আলম ও তার ভাই রফিক উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের চোরাচালানী সিন্ডিকেট বাংলাদেশ থেকে ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, জীবন রক্ষাকারী ঔষধ সামগ্রী মিয়ানমারে পাচার করে যাচ্ছে। এদের নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্বে মিয়ানমার থেকে গরু, মহিষ, ছাগল ও ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার করে আনা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন বিশেষ করে উখিয়া সদরের সাপ্তাহিক হাটের দিন শনিবার ও মঙ্গলবারকে টার্গেট করে আগের দিন শুক্রবার ও সোমবার হাজার হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট ও শত শত গবাদি পশু পাচার হয়ে বাংলাদেশে আসছে। বিনিময়ে বিপুল পরিমাণের বাংলাদেশী মুদ্রার পাশাপাশি স্বর্ণালংকার, আমেরিকান ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও চোরাই পন্যের বিনিময়ে প্রতিদিন সীমান্তের এসব পয়েন্ট দিয়ে কয়েক হাজার লিটার জ্বালানি ও ভোজ্য তেল, ঔষধ পাচার করে দিচ্ছে চোরাচালানীরা। মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে প্রতি লিটার ভোজ্য তেল (পামঅলিন) বাংলাদেশী টাকায় ১১৫-১২০ টাকা, জ্বালানি তেল (কেরোসিন, ডিজেল) প্রতি লিটার ৯৫-১০০ টাকায় বাংলাদেশ সীমান্তের এসব পয়েন্টে গবাদি পশুর বাজার মূল্যের তুলনামূলক কম দামে এবং ইয়াবা ট্যাবলেট প্রতি পিচ ৬০-৭০টাকা চোরাচালানীরা পাইকারী ক্রয়-বিক্রয় করে পন্য বিনিময় করে থাকে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট অনেকে জানান।
দু’দেশের সীমান্তের উল্লেখিত চোরাচালানের পয়েন্টগুলো স্থানীয় ভাবে ঘাট নামে পরিচিত। সীমান্তের আমতলী বিজিবি, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ থেকে এসব কথিত ঘাট সাপ্তাহিক ভিত্তিতে অঘোষিত ও মৌখিক ভাবে ইজারা দেওয়া হয় চোরাচালানীদের। চলতি সপ্তাহের চোরাই পন্য বিনিময়ের উপর পরবর্তী সপ্তাহের ইজারা মূল্য নির্ভর করে বলে জানা গেছে। এসব ঘাট দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা গরু-মহিষ পিছু ৫শত টাকা, ছাগল পিছু ২শ৫০ টাকা, ইয়াবা লামসাম, ভোজ্য তেল ও জ্বালানি তেল প্রতি ভারে (প্রতি ভারে ২৫লিটার ওজনের দু’টি প্লাষ্টিক জারিকেন) ২শ টাকা হারে আদায় করা হয়। এসব টাকা বিজিবি-পুলিশদের মাঝে ভাগ করে দেয় চোরাচালানী চক্রের সিন্ডিকেট সদস্যরা। এছাড়াও স্থানীয় সরকার ও বিরোধী দলীয় যুব ও ছাত্র সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীরা এবং কতিপয় গ্রামপুলিশও এখান থেকে ভাগ পেয়ে থাকে।
রাজাপালং ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা মোরশেদ আলম ওরফে মুন্সি আলম ও তার ভাই মিয়ানমার সীমান্তে চোরাচালানীর সাথে স¤পৃক্ত নয় বলে দাবী করে উল্রেখিত সীমান্ত দিয়ে কোন ধরনের চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে না বলে জানান। তিনি কিছুদিন চোরাচালানের কথা স্বীকার করলেও এখন কিছু হচ্ছে না বলে দাবী করেন।
আমতলি বিজিবির নায়েক সুবেদার সরওয়ার হোসেন তার নিয়ন্ত্রণাধীন সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোন ধরনের চোরাচালান হচ্ছে না দাবী করে বলেন, এলাকার কেউ চোরাচালানীদের প্রশ্রয় দেওয়া বা চোরা কারবারীদের কাছ থেকে অনৈতিক কোন সুবিধা নেওয়ার বিষয় সত্য নয়। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিন সীমান্তে চোরাচালান বা চোরাচালানীদের কাছ থেকে পুলিশের নাম দিয়ে কেউ টাকা নেওয়ার কথা তার জানা নেই বলে জানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন