পেকুয়ায় কর্মসৃজন প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগ

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় অতি দরিদ্রের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচী প্রকল্পের শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্য উপকরণ ক্রয়ের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ২৫লাখ টাকার ও বেশি লোপাটের অভিযোগ পাওয়া
গেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। বরাদ্দের সিংহভাগই প্রকল্পের তদারকী কমিটির সংশ্লিষ্টরা নিজেরাই ভূঁয়া বিল-ভাউচার তৈরী করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এর সাথে আঁতাত করে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
           পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থ বৎসরে সরকারের অতি দরিদ্রের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচীর ১ম পর্যায়ের কাজ গেল বছরের ডিসেম্বরে সমাপ্ত হয়েছে। ১ম পর্যায়ে পেকুয়ার সাত ইউনিয়নে ৩০ প্রকল্পের অধীনে ১হাজার ৭শত ৮৩ জন শ্রমিক নিয়োগ করে ১কোটি ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, ১ম পর্যায়ে পেকুয়ার সাত ইউনিয়নে মোট বরাদ্দের দশ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় কর্মসংস্থান কর্মসূচীতে কাজ চলাকালীন নিয়োজিত শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্য নানা উপকরণ ক্রয়ের জন্য। সে হিসেবে ১ম পর্যায়ে শ্রমিকদের উপকরণ বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১২লাখ ৪৮হাজার একশত টাকা।
        কর্মসংস্থান কর্মসূচীর শ্রমিক পেকুয়া সদর ইউনিয়নের নুরুল আবছার, জামাল, আবুল কাসেম, মহি উদ্দিন, মগনামা ইউনিয়নের হোছাইন, আলমগীর দিলু আরা বেগম, রাজাখালী ইউনিয়নের আবদুল কাদের, মো: বাদশা, জামাল হোসেন, মুফিজসহ আরো বহু শ্রমিক জানিয়েছেন, নিজেরাই বাজার থেকে মাটি কাটার বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করে কর্মসংস্থান কর্মসূচীতে তারা ১ম ও ২য় পর্যায়ে দৈনিক ১৭৫ টাকা মজুরীর ভিত্তিতে কাজ করেছেন। তাদেরকে উপকরণ ক্রয়ের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা কোন ধরণের অর্থ দেয়নি। শ্রমিকরা আরো জানিয়েছেন, সরকারীভাবে যে কর্মসংস্থান কর্মসূচীতে উপকরণ ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ থাকে সে বিষয়টি তাদের কেউ জানায়নি। 
      জানা যায়, ৪০দিনের কর্মসূচীর ২য় পর্যায়ের কাজ পেকুয়ার সাত ইউনিয়নের চলতি মাসের ১জুন সমাপ্ত হয়েছে। এ পর্যায়ে সাত ইউনিয়নে ৩১টি প্রকল্পের অধীনে ১হাজার ৮‘শ ২৮জন শ্রমিকদের দৈনিক কাজের মজুরীর জন্য ১কোটি ২৭লাখ ৯৬হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। শ্রমিকদের উপকরণ ক্রয়ের জন্য  মূল বরাদ্দ থেকে ১২লাখ ৭৯ হাজার ৬‘শ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, পেকুয়ার সাত ইউনিয়রে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীতে ১ম ও ২য় পর্যায়ে উপকরণ ক্রয়ের জন্য ২৫ লাখ টাকার ও বেশি বরাদ্দ থাকলেও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে গোপনে আঁতাত করে উপকরণ ক্রয়ের পুরো বরাদ্দই নিজেরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পেকুয়ার মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল মোস্তাফা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ইউনিয়ননে শ্রমিকদের জন্য উপকরণ ক্রয় করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।   
     এ ব্যাপারে জানতে পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম মিয়াজীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রকল্পের অর্থ লোপাটের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার জানিয়েছেন, কর্মসংস্থান প্রকল্পের শ্রমিকদের উপকরনের অর্থ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানরা শ্রমিকদের জন্য উপকরন ক্রয় করেছে কিনা তারাই ভাল জানবে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। 
      পেকুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইচ চেয়ারম্যান মো: ইদ্রিছ বাদশা অভিযোগ করেছেন, কর্মসংস্থান কর্মসূচীর শ্রমিকদের উপকরণ ক্রয় না করেই প্রকল্প কমিটির সংশ্লিষ্টরা সরকারী বিপুল পরিমাণ অর্থ আতœসাৎ করেছেন। তিনি বিষয়টিকে ‘গুরুতর দূর্নীতি’ আখ্যা দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের নিকট তদন্ত করে সরকারী অর্থ লোপাটের বিষয়টি উদঘাটনের জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন।