ভালোবাসায় ভরে থাক দাম্পত্য জীবন

সুজন ও নীলার বিয়ের বয়স মাত্র দুবছর। এরই মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসার টান যেন কমতে শুরু করেছে। আবেগ, অনুভূতিগুলোও আগের মতো নাড়া দেয় না দুজনকে। ঠিকমাতো কোনো কিছু একে অপরের কাছে শেয়ারও করা হয়।
অনেকদিন একসঙ্গে দূরে কোথাও বেরাতে যাওয়া হয় না। সন্ধ্যেবেলা বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় অনেক কথা বলা হয়। এখন শুধুই ব্যস্ততা। এখন শুধুই যেন ভালোবাসাহীনতা।
নীলা যেদিন তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরে, একা কিছুক্ষণ বারান্দায় বসে থাকে। কখনও ভাবে, ‘জীবন থেকে সুখের দিনগুলো কি হারিয়ে যাচ্ছে? শিশির কেন আগের মতো ভালোবাসে না, আগের মতো মিষ্টি মিষ্টি দুষ্টমি করে না। দুজনতো আগেও অনেক ব্যস্ত ছিলাম। সত ব্যস্ততার মাঝেও তো আমাদের মধ্যে ভালোবাসা ছিল, ছিল আন্তরিকতা। নাহ, আর এভাবে না। আজ সুজন বাসায় ফিরলে সরাসরি কথাগুলো বলতে হবে। ও কি চায় তা জানতে হবে।’
দা¤পত্য জীবনে নীলা-সুজনের মতো এমন সমস্যায় পড়েন অনেকেই। কিন্তু মুখিমুখি ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা না করায় এ সমস্যাগুলো কেবল বাড়তেই থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে মান-অভিমান ও চাপা কষ্ট। সব স¤পর্ক সব সময় একই গতিতে বয়ে যায় না। প্রতিটি স¤পর্কেই কম-বেশি টানপোড়ন থাকে। ব্যস্ততা, একে অপরকে গুরুত্ব কম দেয়া, আন্তরিকতার অভাব, ভালোবাসার অভাব, ধৈর্যের অভাব, অবিশ্বাস- এমন অনেক কিছুই আছে যা দা¤পত্য জীবনে অশান্তি ডেকে আনে। জীবনে সুখের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই দা¤পত্য জীবনকে সুখময় করে তুলতে এসব বিষয়ে একটু সতর্ক হওয়াই ব্যঞ্ছনীয়। তবে এক্ষেত্রে উদ্যোগী হতে হবে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই। দা¤পত্য জীবনকে সুখী ও ভালোবাসাময় করে তুলতে আপনি নিচের কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারেন। আশা করছি এই টিপসের অন্তত কোনো একটা আপনার জীবনে খুব কাজে আসবে-
দুটি মানুষ ভিন্ন দুটি পরিবেশ থেকে হঠাৎ করেই একসঙ্গে বসবাস শুরু করে। যারা আগে থেকেই একে অপরের পরিচিত থাকে তারা হয়তো নিজেকে মানিয়ে নিতে তেমন সমস্যা পড়েন না। কিন্তু যারা একেবারেই দুজন দুজনকে চেনে না, তাদের প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাই সাংসারিক জীবনে কিছু ছাড় দেয়া ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করা ভালো।স¤পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই সত থাকা উচিত। সত্য যত অপ্রিয়ই হোক না কেন তা প্রকাশ করাই ভালো। এতে জীবনের অনেক জটিলতা দূর হয়। 
একে অপরকে ক্ষমা করার মনমানসিকা থাকতে হবে। জীবন সঙ্গী যদি কোনো ভুল করেই থাকে তবে ঝোকের মাথায় বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একবার ভুল সংশোধনের সুযোগ দেয়া উচিৎ। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া থাকাটা খুব দরকার। একজন অন্যকে ভালোভাবে বুঝতে পারলেই না জীবন সুখের হয়।
যেকোনো স¤পর্কের মূল স্তম্ভগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘বিশ্বাস’। স¤পর্কের মধ্যে এই জিনিসটা না থাকলে সবকিছুই মেকি হয়ে যায়। তাই এমন কিছু কখনও করা উচিৎ নয় যাতে আপনার জীবন সঙ্গীর বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। একটুখানি অবিশ্বাস একটি স¤পর্ককে ভেঙে দিতে যথেষ্ট।
যত ব্যস্তই থাকুন না কেন দুজন দুজনের জন্য কিছু সময় বের করে নিন। সারাদিনের মজার কিছু ঘটনা শেয়ার করুন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে পরামর্শ নিন। সপ্তাহে না হলেও অন্তত মাসে একবার দুজনে মিলে কোথাও বেরাতে যান। স¤পর্কটাকে বন্ধুত্বে পরিণত করুন। মাঝে মাঝে দুজনেই কলেজ জীবন বা ছেলেবেলায় হারিয়ে যান। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনায় ধৈর্য ধরুন। কিছু সময় ও ঘটনা অপনার অনুকূলে নাও থাকতে পারে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ধৈর্য ধরুন। ধৈর্য ধরুন বিপদেও।
জীবন সঙ্গীকে বুঝতে চেষ্টা করুন। তার ভালোলাগা, পছন্দ-অপছন্দের দিকে মনোযোগী হন। কিছু হলেই স¤পর্কের ইতি টানার চিন্তা করবেন না। সঙ্গীকে নিয়ে সারাজীবন কাটানোর চেষ্টা করুন। সবকিছুই ফিকে হয়ে যায় যদি না স¤পর্কের মাঝে ভালোবাসা না থাকে। সুখী হতে হলে একে অপরকে অবশ্যই ভালোবাসুন। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসুন। ছোট ছোট বিষয় অনেক সময় অনেক বড় আনন্দ দেয়। তাই দুজনের বিশেষ দিনগুলো মনে রাখুন। উপহার দিন। শুভেচ্ছা বিনিময় করুন।
কিছু মানুষ আছে অল্পতেই খুব বেশি রেগে যায়। রাগ খুব ভয়ানক একটি জিনিস। রাগের মাথায় মানুষ এমন অনেক কিছুই করে ফেলে যার জন্য পরে আফসোস করে। তাই রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। খুব বেশি রাগ হলে সঙ্গী থেকে একটু দূরেই থাকুন এবং কথা কম বলুন। অন্যের কথা শুনে যাচাই না করেই সঙ্গীকে ভুল বুঝবেন না। যদি আপনার সঙ্গী স¤পর্কে কারো কাছে কিছু শুনে থাকেন তাহলে সরাসরি তাকে জিজ্ঞেস করুন। স¤পর্কের প্রতি এবং জীবনসঙ্গীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রাখুন। কারণ এদুটি জিনিস না থাকলে স¤পর্ক মূলহীন হয়ে পড়ে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন