ফের দখলে হোটেল-মোটেল জোনের ৩০ কোটি টাকার সরকারি জমি

উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে নাটকীয়তা

ডেস্ক রিপোর্ট
উচ্ছেদের মাত্র ১ মাস ২০ দিনের মাথায় গত শনিবার রাতে ফের দখল হয়ে গেছে কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের প্রায় ৩০ কোটি টাকার সরকারি জমি।
শনিবার রাতে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার মৃত ফজল আহমদের পুত্র মাহমুদ হাসান রাসেল এর নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একদল লোক হোটেল-মোটেল জোনের সুগন্ধা পয়েন্ট সড়কের দক্ষিণ পাশের প্রায় ৬০ শতক জমি টিনের ঘেরা দিয়ে দখল করে নেন। রাতে ট্যুরিস্ট পুলিশ দখল কাজে বাধা দিলে দখলবাজরা পালিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে আবারো তারা ওই জমি দখলে নেয়। এ বিষয়ে ট্যুরিষ্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাকির হোসেন মাহমুদ জানিয়েছেন, তিনি রাতে দখলবাজদের ধাওয়া করেছেন এবং কিছু যন্ত্রপাতিও জব্দ করেছেন। ঘটনাটি রাতেই কক্সবাজার সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে তিনি অবহিত করেছেন বলে জানান।
রবিবার দুপুরে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন জানিয়েছেন, সরকারি স¤পদ রক্ষায় প্রশাসন সব সময় সজাগ। অবৈধ দখল উচ্ছেদে বিকালের মধ্যেই অভিযান চালাতে তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিবেন বলে জানান। এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কাজী আবদুর রহমান জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। বিকালে অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযান চালাতে তিনি কক্সবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অফিসার ইনর্চাজকে বলেছেন। তবে কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহজাহান জানিয়েছেন, দখলদার পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। তারা উচ্চ আদালতের একটি রায় নিয়ে হাজির হয়েছেন বলে তিনি জানান। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ে সরকারী জমি দখলের কোন নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাতো নেই। এ বিষয়ে ইউএনও এবং ডিসি’র সাথে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কক্সবাজার ট্যুরিষ্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাকির হোসেন মাহমুদ বলেন, ‘সুগন্ধা পয়েন্টের অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য প্রস্তুতি নিতে ইউএনও আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সময় মতো প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান হয়নি’
সর্বশেষ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের টানাটানিতে ওই উচ্ছেদ অভিযান আর হয়নি। এতে কোটি কোটি টাকার সরকারী জমি বেহাত হয়ে যাওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ আছে, ভূমি অফিসের এক শ্রেণীর দূর্ণীতিবাজ কর্মচারীর যোগসাজসে কোটি কোটি টাকার সরকারী জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। ওই সব কর্মচারীর ইন্ধনেই সরকারী জমি দখল করেছেন মাহমুদ হাসান রাসেল। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই কর্মচারীরা দখল উচ্ছেদ করা হবে না মর্মে আশ্বাস দেয়ার পর তিনি ফের ওই জমি দখল করেন।
এর আগে গণমাধ্যমে ২১ এপ্রিল “হোটেল-মোটেল জোনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য-বাতিল প্লটে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক” শিরোনামে এবং ২৮ এপ্রিল “বাতিল প্লটে স্থাপনা নির্মাণ চলছেই –” শিরোনামে সচিত্র তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের পর গত ২ মে বৃহ¯পতিবার বিকালে মাহমুদ হাসান রাসেলের অবৈধ দখল আংশিক উচ্ছেদ করেন কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রশাসন। কক্সবাজার সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কাজী আবদুর রহমান এর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে ওই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল। ওই সময় ট্যুরিষ্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জ জাকির হোসেন মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে এক পর্যায়ে অবৈধ স্থাপনার একাংশ নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নেয়ার মুচলেখা দিয়ে সেদিনের মতো রক্ষা পান দখলদার মাহমুদ হাসান রাসেল। কিন্তু মুচলেখার শর্ত অনুযায়ী অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেননি তিনি। বরং এক মাস ২০ দিন পর এসে গত শনিবার টিনের ঘেরা দিয়ে পুরো জমিই দখল করে নেন রাসেল।
এ বিষয়ে জানতে মাহমুদ হাসান রাসেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জমিটি বন্ধোবস্তি পেতে আমি প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। এর মধ্যে এটি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলাও দায়ের করেছি। মামলা আমাদের পক্ষে।’ কিন্তু উচ্চ আদালত জমিটি দখল করে নিতে আদেশ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না তা দেয়নি। তবে যে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকতে বলেছেন।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে সরকারের বাতিল করা প্লটে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মার্কেট ও দোকান ঘর নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। একই সাথে ভূমিগ্রাসী চক্র দখল করে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারী জমিও। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে প্রশাসনের অভ্যন্তরে থাকা কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে মার্কেট ও দোকানপাট নির্মাণ চলছে। ইতোমধ্যেই সেখানে খাবার হোটেল, শুটকি মার্কেট ও বিভিন্ন ধরণের দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কের দু’পাশের জমিও দখল করে নেয়া হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন