এইবার ছবির নাম চুদুরবুদুর “ঢাকা টু কলকাতা”

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের ‘চুদুরবুদুর’ নিয়ে কলকাতা গরম হয়ে উঠেছে। কলকাতার দেওয়ালে দেওয়ালে এ শব্দ লেখা পোস্টার শোভা পাচ্ছে। ‘চুদুরবুদুর’ শব্দটি নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছিল বাংলাদেশের সংসদ। পরে টকশো, মিডিয়া ও মানুষের মুখে মুখে।
নবারুণ ভট্টাচার্যের উপন্যাস অবলম্বনে সুমন মুখোপাধ্যায়ের ছবি
‘কাঙাল মালসাট’ ছবির পোস্টারে লেখা থাকছে, ‘নো চুদুরবুদুর’।
আর সেই সঙ্গে ব্যাকআপ হিসেবে থাকছে ‘চুদুরবুদুর’ গালি কি না সেই নিয়ে বাংলাদেশের সংসদে বিতর্ক সংক্রান্ত খবরের পেপারকাটিংয়ের ছবি।
পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকার ওই কাটিংয়ে যেখানে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্মল দাস জানিয়েছিলেন, ভদ্র সমাজে তেমন ব্যবহার না হলেও শব্দটিকে প্রকৃত অর্থে কিছুতেই অশ্লীল বলা যাবে না। উল্টোপাল্টা কাজ করা, নড়বড়ে থাকা ইত্যাদি অর্থেই শব্দটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় দাবি করছেন, বাংলাদেশের ঘটনাটা জানার আগেই আমরা ঠিক করেছিলাম ছবির বেশ কয়েকটি উক্তি প্রচারে ব্যবহার করব। তার মধ্যেই এটা ছিল।-আনন্দবাজার

সুমন এটাও স্বীকার করছেন, একটা চিন্তাও ছিল, হয়তো রাজ্যের সেন্সর বোর্ড এ পোস্টার অনুমোদন করবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুমোদন মিলেছে। তাই আমরাও শব্দটা ব্যবহার করছি। অর্থাৎ শব্দটির সঙ্গে যে গালাগালির অনুষঙ্গ জড়িয়ে রয়েছে, সেটা একেবারে অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, যে কোনো শব্দেরই নিজস্ব প্রতিবেশ থাকে। তার বাইরে ব্যবহার হলেই তা ধাক্কা দেয়। তাই সংসদের মধ্যে চুদুরবুদুর শব্দটি উচ্চারিত হওয়ায় বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল।
এমনিতে নবারুণের উপন্যাস এবং সুমনের ছবি, দু’জায়গাতেই তথাকথিত ইতর শব্দের ছড়াছড়ি রয়েছে।
এমনকি, ‘কাঙাল মালসাট’ নিয়ে সেন্সর বোর্ডে যে বিতর্ক হয়, তাতে আরও নানা বিষয়ের সঙ্গে গালাগালির বাহুল্যও অন্যতম কারণ ছিল। পোস্টারটি নিয়েও তাই স্বভাবতই উদ্বেগ ছিল সুমনের।
এ নিয়ে রাজ্য সেন্সরবোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, পোস্টারটি সেন্সরশিপের জন্য পাঠানো হয়েছিল এবং তাকে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
শব্দটি অশ্লীল নয়, জানা গেছে বলেই কি ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সেন্সর বোর্ড কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে ‘চুদুরবুদুর’ সম্বলিত বিজ্ঞাপনটিকে খুবই সাহসী বলে মনে করছেন রাজ্যের একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মকর্তা শৌভিক মিশ্র।
তিনি বলেন, বিজ্ঞাপন দেখেই কোনো ব্র্যান্ড সম্বন্ধে জনমানসে একটা ধারণা তৈরি হয়।
সেটা সেই পণ্যের চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জেনেশুনেই করা হয়। তাই কোনো ব্র্যান্ড যুব সমাজকে, কেউ বা বিতর্কিত বিষয়কে কেন্দ্র করে বিজ্ঞাপন বানায়।

বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ রাম রায় অবশ্য বলেন, বিজ্ঞাপন বিজ্ঞপ্তি নয়। তাই বিজ্ঞাপন কারও রুচিকে আঘাত করছে কিনা সে দিকে লক্ষ রাখা উচিত।
সম্প্রতি সেখানকার একটি নাট্যদল ‘চুদুরবুদুর’ নামে একটি নাটকও মঞ্চস্থ করেছে।
নাট্যদলের অভিনেতা বিশ্বজিৎ দাসও অবশ্য দাবি করছেন, শব্দটি নিয়ে বিতর্কের আগেই তারা নাম ঠিক করে ফেলেছিলেন। এখন শব্দটার পরিচিতির দৌলতে যদি নাটকটা বাড়তি জনপ্রিয় হয়, তবে তাতে আপত্তি নেই।
বিপণন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিতর্কিত নামকরণ চিরদিনই দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করার অন্যতম হাতিয়ার।
চুদুরবুদুরকে যারা গালিজাতীয় শব্দ বলে মনে করেন এবং যারা করেন না, দুধরনের মানুষই এর প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন। তবে তিনি এও মনে করিয়ে দিয়েছেন, বহুল ব্যবহারে শব্দের ধার কমে যেতে পারে।
যেমন, ‘বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় লন্ডনে জর্জ বার্নাড শর ‘পিগম্যালিয়ন’ নাটকের চরিত্র এলাইজা ডুলিটলের মুখে ‘ব্লাডি’ শব্দটা আলোড়ন ফেলেছিল।
অভিনেত্রী প্যাট্রিক ক্যাম্পবেলের মুখে সেই সংলাপটুকু শুনতে দর্শকেরা ভিড় করতেন। শব্দটা শোনা হয়ে গেলেই উঠে চলে যেতেন। কিন্তু আজ কি আর শব্দটির সেই ধার আছে?
অবশ্য ‘কাঙাল মালসাট’ ছবির পরিচালক সুমন আশাবাদী। তিনি বলেন, আমার তো মনে হয় শব্দটার প্রভাব বাড়বে। এই শব্দ নিয়ে বিতর্কটা যাদের জানা, তারা নতুন মজা নিয়ে ছবিটা দেখতে আসবেন।

- See more at: http://coxmirror.com/archives/11425#sthash.eHijvXq4.dpuf

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন