নতুন নতুন ইস্যুতে আড়ালে পড়ে যাচ্ছে জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু

কক্সবাজারবাণী: সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়া, যুবলীগের অপকর্ম, বিল বোর্ড ইস্যু সহ নানা রাজনৈতিক ইস্যুর কারণে আড়ালে পরে গেছে আলোচিত ঘটনাগুলো। অতি জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও গণমাধ্যমে এ ইস্যুগুলো এখন আর তেমন গুরুত্বই পাচ্ছে না। এমনকি এ নিয়ে যাদের সোচ্চার থাকার কথা সেই বিরোধী দলও এ বিসয়ে মুখ খুলছে না। 
হলমার্কের অবৈধ ঋণসহ ব্যাংকিং খাতের লুটপাট, বিরোধী রাজনীতিক ইলিয়াস আলী গুম, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারহীনতা, শেয়ার কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগ, থাকাকালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ফারুক তালুকদারকে টাকাসহ আটক গুরুত্তপূর্ণ ইস্যুগুলো হারিয়ে গেছে।

মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে বড় বির্পযয় হয় শেয়ারবাজারে। প্রায় ৩৫ লাখ বিনিয়োগকারী সব হারিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পুঁজি হারিয়ে দুজন আত্মহত্যা করেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্যানুযায়ী, শেয়ারবাজার থেকে রের্কড ৪০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সারা দেশের মানুষের দাবি ছিল শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতাদের বিচার করা। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ইব্রাহিম খালেদের তদন্তে জড়িতদের নাম উঠে এলেও কাউকেই বিচারের আওতায় আনা হয়নি।

আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি। কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কর্মর্কতার ডায়েরি সূত্রে মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির ঘুষ-কমিশনের কথা ফাঁস হয়। বিষয়টি পদ্মা সেতুর মূল অর্থায়নকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতে আসার পর তারা ব্যবস্থা নিতে বলে। কিন্তু সরকারের নানা টালবাহানায় বিশ্বব্যাংক কঠোর অবস্থান নেয়। বাড়তে থাকে দূরত্ব। সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টানাপড়েন কমানোর পরির্বতে এক পর্যায়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে বসে। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী।

অন্যদিকে, বেশ কিছুদিন উপদেষ্টার পদ থেকে দূরে ছিলেন ড. মসিউর রহমান। বর্তমানে তিনি আবার সক্রিয়। বিশ্বব্যাংক সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেয়। পরে এডিবি, জাইকাসহ অন্য দাতাসংস্থাও সরে দাঁড়ায়।

জটিলতার অবসান এখনো হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এ সেতুর কাজ শুরুই করতে পারেনি সরকার। অথচ নির্বাচনী ইশতেহারে অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন। এ সরকারের আমলে আরেকটি আলোচিত বিষয় রেলমন্ত্রী থাকাকালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ফারুক তালুকদারকে টাকার বস্তাসহ বিজিবি সদর দফতরের গেটে আটক করা। গাড়ির চালক স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন, এই টাকা মন্ত্রীকে ঘুষ দেওয়ার জন্য রেলের পূর্বাঞ্চলের জিএম বস্তায় করে নিয়ে আসেন। চাকরি দেয়ার কথা বলে এ ঘুষ নেওয়া হয়। অনেক জল ঘোলা করার পর রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। কিন্তু চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটিও যেন এখন আর কারও মনে নেই।

নজিরবিহীন আরেকটি ঘটনা রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে এমন ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানকে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি। সরকারের গত সাড়ে চার বছরে শুধু হলমার্ক নয়, ব্যাংকিং খাতের পুরোটাই ছিল নানা কেলেঙ্কারিতে ভরা। বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যাংকিং খাত লুটে নেয়ার ঘটনাও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক নামর্সবস্ব কোম্পানিকে বিপুল অর্থ ঋণ দিয়েছে, যা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে। সরকার হস্তক্ষেপ করার পরও এখন পর্যন্ত ইউনিপে টু ও ডেসটিনির গ্রাহকরা তাদের অর্থ ফেরত পাননি।

আরও দুটি আলোচিত ঘটনা হলো বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী গুম এবং সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উন্মোচন না হওয়া। এসব ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো রয়ে গেছে। গত বছর ১৭ এপ্রিল রাতে বাসায় ফেরার পথে রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলী। ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের সন্ধান মেলেনি। প্রধান বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় একজন নেতার গুম হওয়ার ঘটনা তখন দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। বিএনপিও কিছু দিন কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু এখন বিষয়টি একেবারেই ধাপাচাপা পড়ে আছে।

দেড় বছরেও উদঘাটন হয়নি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য। মামলার তদন্ত নিয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও নেমে এসেছে হতাশা। ডিএনএ প্রতিবেদনের দোহাই দিয়ে সময় পার করছে তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব।

সরকারও কৌশলে বিব্রতকর ইস্যুগুলো এড়িয়ে চলছে। মূলত একটি ইস্যুর শেষ না হতেই আরেকটি এসে আগের ঘটনাকে চাপা দেয়ায় কোনোটিরই সুরাহা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, এ পরিস্থিতি মোটেও সুখকর নয়। কারণ এতে অপরাধী পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। নতুন বার্তা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন