ত্যাগের বার্তায় উজ্জ্বল ঈদুল-আযহা

দ মোবারক। বছর ঘুরে আমাদের জীবনে আবার ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল-আযহা। মহান আল্লাহ বছরে আমাদের জন্য দু'টি শ্রেষ্ঠ আনন্দের দিন উপহার দিয়েছেন। এর একটি ঈদুল ফিতর, অপরটি ঈদুল আযহা। দুই ঈদেরই রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ঈদুল আযহা ত্যাগ ও কুরবানীর বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত। এর সাথে জড়িত রয়েছে হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) এর মহান ত্যাগের নিদর্শন। এই ত্যাগের মূলে ছিল আল্লাহর প্রতি ভালবাসা এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন। মহান পিতা ও পুত্র আমাদের জন্য যে উদাহরণ রেখে গেছেন তার মর্মকথা হলো, আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে প্রয়োজনে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, এমনকি জীবন প্রদানেও আমাদের হতে হবে অকুণ্ঠচিত্ত। কিন্তু বর্তমান সময়ে সত্য ও ন্যায় তথা আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে ত্যাগ ও কুরবানীর যেসব চ্যালেঞ্জ আসে তাতে আমরা কতটা সাড়া দেই, সেই প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে।

ঈদুল-আযহা আমাদের সমাজে একই সাথে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের রূপ পরিগ্রহ করেছে। ইবাদত ও আনন্দের চেতনা এই উৎসবকে এক অনন্য বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল করেছে। ঈদ উৎসব থেকে আমরা আনন্দ-বিনোদনের এক পবিত্র চেতনা অর্জন করে থাকি। কিন্তু দুখের বিষয় হলো, আমাদের মিডিয়া ও সংস্কৃতি সেবিরা ঈদের এই পবিত্র চেতনাকে কাক্সিক্ষত রূপে ধারণ করতে পারছেন না। বরং অনেক ক্ষেত্রে ঈদের চেতনা বিরোধী আয়োজনে তাদের উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। ফলে ঈদের সংস্কৃতি আমাদের সমাজে যে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারতো তা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। বিষয়টিকে আমরা জাতীয় জীবনে এক সাংস্কৃতিক র্ট্যাজেডি হিসেবে অভিহিত করতে পারি। ঈদুল-আযহায় ধনী-গরীব নির্বিশেষে আমরা সবাই ঈদগাহে মিলিত হই। ঈদের নামাজের মাধ্যমে এক আল্লাহর ইবাদত করি এবং তার বিধিবিধান জানার মাধ্যমে এক ভ্রাতৃসমাজ গড়ার প্রেরণা লাভ করি। নামাজ শেষে আমরা হাসিমুখে কোলাকুলির মাধ্যমে ভেদাভেদ পরিহার করে মিলনের মালা গাঁথি। এরপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানী করে গোস্ত বণ্টনের সময়ও আমরা মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে থাকি। কোরবানীদাতা শুধু নিজেই কোরবানীর গোস্ত ভোগ করেন না, আÍীয় স্বজন, প্রতিবেশী এবং দরিদ্র মানুষের মধ্যে তা বণ্টন করে তিনি কোরবানীর ইবাদতকে পূর্ণ করেন। কোরবানীর এই চেতনা এক দরদী সমাজগঠনে আমাদের উদ্ধুদ্ধ করতে পারে। কিন্তু এ পথে আমরা কতটা এগিয়েছি, বর্তমান সমাজ-বাস্তবতায় বোধ হয় সেই প্রশ্নটি করাই যায়। প্রতিবছরই আমাদের জীবনে ঈদুল আযহা আসে। কিন্তু কোরবানী বা ত্যাগের এই ঈদের মর্মবাণী প্রাত্যহিক জীবনে আমরা কাক্সিক্ষতভাবে অনুসরণ করি কী? এ ক্ষেত্রে আমরা সচেতন হলে আমাদের অর্থনীতি, বাজারনীতি ও রাজনীতি এতটা নিষ্ঠুর হতে পারতো না। ত্যাগের বদলে আজ লুণ্ঠনের 
প্রবণতাই প্রবল। সহানুভূতি ও হৃদয়বৃত্তির বদলে আজ আগ্রাসন ও নিষ্ঠুরতার চিত্রই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সবের সাথেতো কোরবানীর চেতনার কোন মিল নেই। আজ আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, কোরবানী শুধু একটি উৎসবের নাম নয়, বরং আল্লাহর বান্দাহ হিসেবে ন্যায়-অন্যায়ের তথা কল্যাণ-অকল্যাণের দ্বনেদ্ব সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার নামই কোরবানী। এই চেতনায় সমৃদ্ধ হলেই ইনশাআল্লাহ স্বার্থক হয়ে উঠবে আমাদের কোরবানীর ঈদ।

সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক কক্সবাজারবাণী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন