মহেশখালী দ্বীপ আদম পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট

সিবিএন: কক্সবাজারের সমুদ্র উপকুলীয় দ্বীপ মহেশখালী উপজেলার সর্বত্র মালয়েশিয়া আদম পাচারের হিড়িক পড়েছে। পাচারকারী চক্ররা এলাকার বেকার যুবকসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণীর সহজ সরল মানুষকে আর্কষনীয় বেতনের চাকুরীর প্রলোভনে ফেলে এ কাজে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মহেশখালী দ্বীপের চারপাশে সাগরবেষ্টিত হওয়ার পাশাপশি আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিলিপ্ততার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি মালয়েশিয়া আদম পাচারকারী চক্রের একাধিক দালাল ও তাদের গডফাদাররা এসব জনশক্তি ঝুকিপূর্ণ সাগরপথে পাচারের জন্য মহেশখালীকে তাদের নিরাপদ টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে।
নতুন করে পাচারকারীরা এ পথকে বেছে নেওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণসহ সচেতন মহলকে চরম ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। পাচারকারী চক্ররা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের রোহিঙ্গা বসতি পূর্ন স্থানে মিয়ানমার থেকে আগত সিন্ডিকেট সদস্যদের আশ্রয় রেখে মালেশিয়ায় আদম পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে উপজেলার কুতুবজোমের ঘটিভাঙ্গার পশ্চিমের প্যারাবন,বারিয়া পাড়ার সাম্পানঘাট,গোরকঘাটার সী-বীচ সংলগ্ন নাজিরার টেক,আদিনাথ জেটিও শাপলাপুরের জেম ঘাট,মুদিরছরাসহ বিশাল সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা জুড়ে শক্তিশালী একটি আদম পাচারকারী চক্র মালেশিয়ায় আদম পাচারের নিরাপদ স্থান হিসাবে ব্যবহার করে এ কাজ আনোয়াসে চালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানাযায়, মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা, চরপাড়ার বর্মপাড়া,ঘোনা পাড়া,কুতুবজোম ও ঘটিভাংগার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মুখোশধারী জনপ্রতিনিধির সম্বনয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সাগর পথে মালেশিয়ায় আদম পাচার কাজে জড়িত। তাদের রয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ফিশিং ট্রলার। এসব ফিশিং ট্রলার দিয়ে উক্ত চক্রটি গত দু’ মাসে অন্তত বিশটির অধিক চালান ট্রলার যোগে সাগর পথে আদম পাচার করছে। সম্প্রতি এই চক্রটি গত এক সপ্তাহ আগেও ২০/২৫ জনের একটি আদমের চালান সাগর পথে মালেশিয়ায় খালাস করে বলে জানা গেছে। মালেশিয়া পাচার কাজের সহায়ক হিসাবে বঙ্গোপসাগরের অদুরে ফিশিং ট্রলি ব্যবহার করে জন প্রতি ট্রলার ভাড়া ২০’হাজার টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া পৌছে দেয়া মাত্র তাদের আতœীয় স্বজন কর্তৃক জনপ্রতি ৩’লক্ষ টাকা পরিশোধ করার চুক্তিতে মহেশখালী থেকে মানব পাচার করে সাগর পথে মালেশিয়া নিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা অনায়াশে। তাদের সাথে চকরিয়া কক্সবাজার,টেকনাফ ও ঢাকার একটি প্রবাভশালী সিন্ডিকেট জড়িত বলে কেহ তাদের বিরোদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। মালেশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার পর পাচার করা সদস্যদের অভিভাবকদেরকে এক প্রকার জিম্মী করে ৩’লক্ষ টাকা আদায় করে। ৩’লক্ষ টাকা বাংলাদেশে পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাদেরকে কাজ কর্ম থেকে বিরত রেখে টাকা দিতে অপারগ হলে তাদেরকে পাহাড়ে বিভিন্ন ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ মালেশিয়া কারাগারে আটকে দিয়ে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠানো হবে হুমকি প্রদান করে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। ফলে অনেক বাবা-মা তাদের ছেলেদের বাচাঁতে শেষ সম্বল হিসেবে থাকার ঘরটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। সাগর পথে অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের সুযোগে একদিকে যেমন সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে বেশী টাকা কামানোর আশায় গভীর বঙ্গেপসাগরে নৌ-দূর্ঘটনার শিকার হয়ে সাগরে সলিল সমাধি হচ্ছে গ্রামের অসংখ্য সহজ সরল ও সাধারণ মানুষ। সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া আদম পাচার বেড়ে যাওয়ায় এলাকার সচেতন মহল রীতিমত উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হয়ে পড়েছে। পাচারকারী চক্ররা মালয়েশিয়া যাওয়ার নতুন পাচারের পথ হিসেবে পানি পথকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। আর এ জন্য টার্গেট করা হয়েছে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা। এসব এলাকার বাড়ি-ঘরে বিভিন্ন স্থান থেকে অচেনা লোকজনকে মজুদ রেখে গভীর রাতে তাদেরকে ট্রলারে তুলে দেওয়া হয়। আদম পাচারকারী চক্রটি বিভিন্ন কায়দায় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে ম্যানেজ করে গ্রামের জনপ্রতিনিধিদের কমিশনের মাধ্যমে এ কাজ নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সমুদ্র তীরবর্তী উপকূল জুড়ে আদম পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী উক্ত সিন্ডিকেট সদস্যদেরকে তদন্ত পূর্বক আইনের আওতায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনেক অজনা তথ্য ও এই পাচার কাজে জড়িত বড় বড় রাঘব বোয়ালদের নাম তা বেরিয়ে আসবে বলে সচেতন মহলের অভিমত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন