আরবে জীবন্ত ইসলামকে দেখেছি (২য় পর্ব)

এ এম জি ফেরদৌস
আল্লাহর ঘরের ভিডিও চিত্র আমরা টিভি পর্দায় নিয়মিত দেখি। কিন্তু বাস্তবে যখন আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর ঘরের সামন গিয়ে দাঁড়ালাম, তখন আমার মনে হয়েছে টিভির পর্দায় দেখা পবিত্র কাবা শরীফ আর বাস্তবে দেখা কাবা শরীফের মধ্যে অনেক ব্যবধান।
লক্ষ লক্ষ বনি আদম স্রষ্টার প্রতি কী পরিমাণ ভালবাসা থাকলে পাগলের মতো এভাবে ছুটতে পারে, তা ভাবতেই অবাক লাগে। হৃদয়ের ভাবাবেগ ও আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেওয়ার জন্য মানুষ যে কী পরিমাণ ত্যাগ কোরবানি দিতে প্রস্তুত, তা স্বচক্ষে না দেখলে কোনক্রমেই বোঝা সম্ভব নয়। ক্বাবা ঘরে হাজির হয়ে সব হাজীগণের মুখে এক আওয়াজ ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শরীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা নেয়ামাতালাকা ওয়াল মূলক’। (অর্থ: হে আল্লাহ, আমি তোমার দরবারে হাজির তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহা নেই... ইত্যাদি)।
নিখিল জাহানের রবের কাছে হাজির নিশ্চিত করার মানসে তার বান্দা উন্মাদের মত ছোটাছুটি করছে। নতযানু হয়ে কাকতি-মিনতি করে দোয়া পড়ে পড়ে পবিত্র কাবা শরীফের চতুরদিকে তওয়াফ করছে, আর মেহেরবান খোদার কৃপা দৃষ্টি কামনা করছে। হয্রে আসওয়াদ এবং কাবা শরীফের গিলাপে চুম্বন করার জন্য, সে যে কী পরিমাণ কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে প্রানান্ত চেষ্টা করতে হয়, তা বাস্তবে না দেখলে বোঝানো সম্ভব নয়। আর এ অবস্থায় আমি নিজেকে যদি দর্শক হিসেবে এমনটা ভাবি যে, পবিত্র কাবা শরীফের ভিতর থেকে মূল্যবান রিলিফ দেওয়া হচ্ছে, আর লক্ষ রক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষ যে রিলিফ পাওয়ার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করছে এবং যারা পাচ্ছে তারা রিলিফ নিয়ে খুশি মনে মাঠ ত্যাগ করছে। আর যারা পাচ্ছে না, তাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাদের যেন কোন ক্লান্তি নই, এখানেই প্রেমের মূল রহস্য নিহিত।
সৃষ্টি তার স্রষ্টাকে কী দিলো, আর স্রষ্টার নিকট থেকে কী নিলো এবং কী নিয়ে হাসিমুখে প্রত্যাবর্তন করল, এটাই হলো মহাব্বতের স্বার্থকতা। অন্তরের চক্ষু মেলে দেখলে আপনাতেই মনে হবে যে, আমি আমার মহান প্রতিপালককে দেখতে পাচ্ছি। যিনি আমাদের আকুলতা দেখছেন। আর যখনি হৃদয় মন আর শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠবে, তখন আপনাতেই বোঝায় সম্ভব আমি কী পেলাম।
সম্মানিত পাঠকদের অবগতির জন্য কিছু তথ্য দেয়া জরুরি। আপনি ওমরার নিয়তে গমন করলে ঢাকা বিমান বন্দরে এহারামের কাপড় পরিধান করে ওমরার উদ্দেশ্যে দু’রাকাত নামাজ পড়ে বিমানে ওঠা উত্তম। কেননা, বিমানে ওমরার কাপড় পরা খুবই কষ্টসাধ্য। জেদ্দায় অবতরণ করে আপনি সোজা চলে যাবেন হেরেম শরীফ অর্থাৎ পবিত্র মক্কা শরীফে (হেরেম শরীফ বলতে পবিত্র কাবাসহ মক্কা শরীফের কতিপয় স্থানকে বোঝায়)। বিশ্রাম স্থলে আপনার লাগেজে রেখে সোজা চলে যাবেন পবিত্র কাবা শরীফে। যেকোন গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে পারেন। ভেতরে ঢুকে পবিত্র কাবা ঘরের সামনে দু’রাকাত নামাজ পড়ে আপনি তওয়াফ শুরু করেন। ক্ষমা প্রার্থনা করার মতো অনেক দোয়া আছে, তা পড়ে পড়ে সতবার প্রদক্ষিণ করুন। যতবার হায্রে আসওয়াদ এর সোজা যাবেন ততবার ইশারা করে বা সরাসরি চুমু খাবেন। সাত পাক শেষ হলে, মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহ্তা’লার কাছে প্রার্থনা করে তওয়াফ শেষ করুন। চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন