বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সীমানা বেষ্টনী ভেঙ্গে ৬শত হেক্টর এলাকা অরক্ষিত

বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

এম রায়হান চৌধুরী চকরিয়া
চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রায় ৬শত হেক্টর এলাকার অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পার্কের ৯শত হেক্টর আয়তন এলাকার মধ্যে ৩শত হেক্টর এলাকায় বেষ্টনী থাকলেও গত কয়েকবছরে রোদে শুকিয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ৬শত হেক্টর এলাকার বেষ্টনী।
পার্কের পেছনের অংশে বিশাল এলাকায় এই বাউন্ডারী বেষ্টনী ভেঙ্গে পড়ার কারনে পার্কে সংগ্রহ করা বন্যপ্রাণী গুলো পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অরক্ষিত হয়ে পড়া পার্কের নির্ধারিত বেষ্টনীতে ঢুকে একাধিক বন্যহাতির পাল দফায় দফায় তান্ডব চালিয়েছে। একারনে পার্কের সংশ্লিষ্টরাও বিষয়টি নিয়ে চরমভাবে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন।
সাফারি পার্কের বিট কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রতিষ্টার সময় ও নতুন করে জমি অধিগ্রহণের পর বর্তমানে পার্কের মোট আয়তন এলাকা হয়েছে ৯০০ হেক্টর। পার্কের অবকাঠামো নির্মাণের সময় শুরুতে ৬শত হেক্টর এলাকায় কাটা তারের বেড়া দিয়ে সীমানা বাউন্ডারী (বেষ্টনী) দেওয়া হয়। অর্থ বরাদ্ধের অভাবে অবশিষ্ট অংশে (৩শত হেক্টর এলাকায়) বেষ্টনী দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, বিগত কয়েকবছরে রোদে শুকিয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে নির্মিত ৬শত হেক্টরের মধ্যে ৩শত হেক্টর এলাকার বেষ্টনী নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বর্তমানে পার্কের প্রায় ৬শত হেক্টর এলাকা অলিখিতভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। 
পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা এবিএম জসীম উদ্দিন বলেন, অরক্ষিত ওই ৬শত হেক্টর এলাকায় নতুন করে সীমনা বাউন্ডারী ( বেষ্টনী) নিমার্ণের জন্য গতবছর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ চেয়ে সংশ্লিষ্ট উধর্বতন প্রশাসনের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্ধ প্রাপ্তি সাপেক্ষে বেষ্টনীর নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। 
সুত্র জানায়, উপজেলার ডুলাহাজারায় অবস্থিত দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রতিষ্টার পর সরকার বিপুল টাকা বিনিয়োগ করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে দেশ ও বিদেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করেন এই পার্কে। আফ্রিকান কুদু, ওয়াইলবিষ্ট, গয়াল, ভাল্লুক, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, বাঘ, সিংহ থেকে শুরু করে শত প্রজাতির তৃনভোজী প্রাণীর অবাদ বিচরণ রয়েছে পার্কের ভেতরে। তারমধ্যে খাচাঁয় বন্ধি রয়েছে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুকসহ কয়েক প্রজাতির প্রাণী। অবশিষ্ট প্রাণীগুলো এখানে রয়েছে উন্মুর্থভাবে। ফলে এসব প্রাণী পার্কের পেছনের অরক্ষিত বেষ্টনী অতিক্রম করে বাহিরে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পার্কের অরক্ষিত ওই এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত বন্যহাতির পাল অনায়সে পার্কের ভেতর ঢুকে ইতোমধ্যে একাধিকবার তান্ডব চালিয়েছে। পার্কের সংশ্লিষ্টরা ভেতরে বন্যহাতির এসব তান্ডবের ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করেছে। 
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ চট্রগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুল মাবুদ বলেন, সাফারি পার্কের ৬শত হেক্টর এলাকা বর্তমানে অরক্ষিত বিষয়টি সত্য। পার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য অবশ্যই সীমানা বাউন্ডারী নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, গতবছরের নভেম্বর মাসে পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ৫ কিলোমিটার এলাকায় বাউন্ডারী নিমার্ণের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্ধ অনুমোদন হয়েছে। আগামী অর্থবছর এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন