সাগরের অব্যাহত ভাংগনে শাহপরীরদ্বীপ মূল ভুখন্ড থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

টেকনাফ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ সীমান্ত জনপদ মৎস জোন হিসাবে খ্যাত এবং সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট শাহপরীরদ্বীপ বঙ্গোপসাগরের অব্যাহত ভাংগনে দেশের মূল ভূখন্দ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। শাহপরীরদ্বীপ টেকনাফ সীমান্ত উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ৭,, ও ৯ ওয়ার্ড। এ ৩টি ওয়ার্ডে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। ১০ হাজার ৫ শত ভোটার সংখ্যা। ১৯টি গ্রাম নিয়ে শাহপরীরদ্বীপ গঠিত। ভৌগলিক দিক থেকে শাহপরীরদ্বীপের পূর্বে বিস্তীর্ন নাফনদী ও দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর এবং উত্তরে সমতল ভূমি। এখানে সীমান্ত বাণিজ্যের করিডোর ও সেন্টমার্টিনদ্বীপের সাথে যোগাযোগের জন্য ৪কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যায়ে ১টি জেটি রয়েছে।
এছাড়া চোরাচালান দমনে বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়ি ও কোষ্টগার্ডের অফিস রয়েছে। এছাড়া আরো রয়েছে, মৎস্য আহরন, লবণ, শুটকী, পান, সুপারী ও মরিচ উৎপাদনে বেশ খ্যাত । পাশাপাশি এজনপদের অধিকাংশ কর্মজীবি মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাস জীবনে থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ বিদেশ থেকে পাঠাচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকে জমা হচ্ছে প্রবাসীদের প্রদত্ত রেমিটেন্স। সরকার শাহপরীরদ্বীপ থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেলে ও এর প্রতি কোন গুরুত্ব দিচ্ছেনা। স্বাধীনতা পূরবর্তী সময়ে শাহপরীরদ্বীপের রক্ষা বেড়ীবাঁধ নির্মানের নামে চলছে, হরিলুট ও বিমাতামূলক আচরন। এ সময়ে সরকার আসে সরকার যায়, শাহপরীরদ্বীপ বাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন আসেনী। বরংচ তারা বঞ্চনা ও গঞ্জনার শিকার হয়েছে মাত্র। ১৯৬০ সালের অতীতে শাহপরীরদ্বীপের বানিজ্যিক এলাকা হিসাবে খ্যাত সেই বদরমোকাম আজ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের ভক্ষে চলে গেছে। এক সময় মিয়ানমারের আকিয়াবের সাথে ব্যবসা বানিজ্যে কেন্দ্র বিন্ধু হিসাব পরিচিত। সৎ  ও যোগ্য এবং দেশ প্রেমিক নেতৃত্বের অভাবে শাহপরীরদ্বীপ আজ অবহেলার শিকার। শাহপরীরদ্বীপ বাসীর প্রানের প্রধানদাবী ছিল, বঙ্গোপসাগরের ভাংগন থেকে শাহপরীরদ্বীপবাসীকে রক্ষা করা। নির্বাচন আসলে প্রার্থীদের তারা ভোটাদিকার প্রয়োগ করত। নির্বাচিত হবার পর নেতারা প্রদত্ত তাদের প্রতিশ্রতি ভূলে যায়। এভাবে শাহপরীরদ্বীপের জনগণ বরারই প্রতারনার শিকার হয়ে আসছে। ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে প্রলসংকরী ও জলোবাসে শাহপরীরদ্বীপ রক্ষাকারী বেড়ীবাঁধ বিধ্বস্থ লন্ড ভন্ড হয়ে গিয়েছিল। সরকার বেড়ীবাধ মেরামতের জন্যে কোটি কোটি টাকা এবং কাজের বিনিময় খাদ্য বরাদ্ধ দিলে ও অর্থ দ্বীপবাসীর কোন উপকারে আসেনী। বরংচ সরকারের প্রদত্ত অর্থ লোটপাট করে একশ্রেণী আমলা ও নেতা আখের গোছিয়েছে। ২০০৮ সালে মহাজোট তথা আঃ লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শাহপরীরদ্বীপ রক্ষা বেড়ীবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ কাজে পৃথক পৃথকভাবে কোটি কোটি টাকা দিলেও ইহা কোন কাজে আসেনী দ্বীপবাসীর। যেমন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ উপকূলীয় এলাকা ৬৭,৬৭ (এ) ৬৭ (বি) ও ৬৮ নম্বর পোল্ডারের আওতায় ৬০ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধে মধ্যে ২০ কিলোমিটার জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্যে থাকলেও ১কিলোমিটার বাঁধ সাগরে বিলীন হয়ে যায়। ১৯৯০ সালের ২৯ এপ্রিলের পর থেকে শাহপরীরদ্বীপের ৬৮ নাম্বার পোল্ডারের বেডিবাঁধ কোন সংস্কার করা না হলে ও ১৯৯৬ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৬০ কোটি বরাদ্ধ দিয়েছিল। ২০০৮ সালে ৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ৭ কোটি ২১ লাখ টাকা, হোয়াইক্যং ৬৭ ও ৬৭ (বি) নম্বার পোল্ডার জরীজীর্ন বেড়িবাঁধ সংস্থকারের জন্য ২০১০ সালে ৫ কোটি টাকা, ২০১১ সালে ৪ কোটি টাকা ও টেকনাফ সদরের ৬৮ নম্বর পোল্ডারের ভগ্ন বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য ২০০৮ সালে ২৮ লাখ টাকা, ২০০৯ সালে ২৪ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ২০ লাখ টাকা ২০১১ সালে ৭৪ লাখ টাকা, ব্যায় করা হলে ও সাগর ও নাফনদীর ভাংগনে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভাংগন রোধ থেকে রক্ষা করা যায়নি। জলবায়ু পরির্বতন ও উচ্চ জোয়ারের প্রভাব এবং টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সুদুর প্রসারী পরিকল্পনার অভাবে মান্দাতœার আমলের নির্মিত রেড়িবাঁধ সাগরের ভাংগন প্রদত্ত অর্থ কোন কাজে আসছেনা। উল্লেখ্য, শাহপরীরদ্বীপপের ১৯ পাড়ার মধ্যে জালিয়া পাড়া, ক্যাম্প পাড়া, পশ্চিম পাড়া, বাজার পাড়া, ঘোলার পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, উত্তর পাড়া ও উত্তর মাঝের পাড়া চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে পশ্চিম পাড়া, দাংগার পাড়া ও উক্তর পাড়ায় এখন সাগরের জোয়ার ভাটা চলছে। গত ২৭, ২৮ ও ২৯ মে, পূর্নিমার জোয়ারের প্রভাবে শাহপরীরদ্বীপ হতে হারিয়াখালী পর্যন্ত সাগরের লবনাক্ত পানীতে ভরপুরও সড়ক যোগাযোগ  বিচ্ছিন্ন। টেকনাফ থেকে হারিয়াখালী পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ হলেও  সেখান থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত নৌযোগাযোগ। শাহপরীরদ্বীপ সাগরের ভাংগনের ফলে যোগাযোগ ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেড়ে গিয়েছে। এর আগে যোগাযোগ ভাড়া ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বর্তমানে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। দৈনিক ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ টেকনাফের সাথে যাতায়াত করে থাকেন। জরুরী ডেলিভারী রোগী সহজে আসতে পারেনা। কচুবনিয়অ হারিয়াখালী, মগ পাড়া, ঘোলাপাড়া, চরম ঝুকির মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে পশ্চিম পাড়া ২টি মসজিদ বিলীন হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালে শাহপরীরদ্বীপ রক্ষা ও উন্নয়ন পরিষদ নামে একটি প্রতিষ্টান স্থাপিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানের একমাত্র দাবী শাহপরীরদ্বীপকে সাগরের ভাংগন থেকে রক্ষা করা। সভাপতি মোঃ জাহেদ হোসেন ও সাধারণ স¤পাদক আলহাজ্ব মোঃ হাশেম (সি,আইপি) জানান, আমরা শাহপরীরদ্বীপবাসীর দীর্ষদিনের প্রানের দাবী একমাত্র দ্বীপ রক্ষা কর্মসচী বাস্তবায়নে আমরা এখন ঐক্যবন্ধ। শাহপরীরদ্বীপ বেড়ীবাঁধ উন্নয়ন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলবে ভবিষ্যতে আমরা তাদেরকে ব্যালটের মাধ্যমে তার জবাব দিব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন