হমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বই দুই প্রকাশকের বিরুদ্ধে শাওনের উকিল নোটিশ

কক্সবাজারবাণী ডেস্ক
প্রয়াত কথাসাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ‘অসত্য তথ্য সম্বলিত’ বই প্রকাশের অভিযোগে আমেরিকার জেকসন হাইটের মুক্তধারার সত্ত্বাধিকারী বিশ্বজিত সাহা এবং ঢাকার বাংলা প্রকাশের সত্ত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার মো. মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দিয়েছেন তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে বাজার থেকে ‘হুমায়ূন আহমেদের শেষ দিনগুলো’ শিরোনামে প্রকাশিত বইটি প্রত্যাহার করে ধংস করা এবং অসত্য বক্তব্য প্রকাশের কারণে হুমায়ূন আহমদের স্ত্রী শাওনের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।
অন্যথায় ওই দুইজনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এবং আমেরিকায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে  বলে জানানো হয়েছে নোটিশে। মেহের আফরোজ শাওনের পক্ষে নোটিশটি পাঠান বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। গত ২২ মে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এবং ২৫ মে ই-মেইলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নোটিশটি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এর ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।
তিনি বলেন, “ওই বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় মানহানিকর বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। যা আদৌও সত্য নয়। এ কারণে লিগ্যাল নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।” নোটিশে বলা হয়, ‘বইটির ৭১ ও ৮৮ নাম্বার পৃষ্ঠাসহ বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২ সালের ১২ জুন অপারেশনের পর প্লাস্টিকের চেয়ার থেকে পড়ে যান হুমায়ূন আহমেদ। এরপর তার শীরের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়। এ ঘটনার পর তাকে যখন হাসপাতালে নেয়া হয়, তখন চিকিৎসকের কাছে এ পড়ে যাওয়ার কথা গোপন করা হয়েছে। তার অবস্থা দিন দিন খারাপ হওয়ার এক পর্যায়ে ২১ জুন তিনি আর কথা বলতে পারেননি।’ বইয়ে লেখা ওই বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণের জন্য হুমায়ূন আহমেদের প্লাস্টিকের চেয়ারে বসা একটি ছবি ছাপানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ‘বইয়ে প্রকাশিত এ বক্তব্য আদৌও সত্য নয়। এটা লেখার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শাওনের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। শাওনকে হেয় করার জন্য এ ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে। ২১ জুন হুমায়ূন আহমেদ কথা বলতে পারেননি অভিযোগ সত্য নয়। ২১ জুনের পর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড.আব্দুল মোমেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কথা বলেছেন।’ ‘এছাড়া  হুমায়ূন আহমেদ চেয়ার থেকে পড়ে যাননি। প্লাস্টিকের চেয়ারে বসা ছবিটি ২০০৮ সালে ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকায় শুটিংয়ের (জোৎøা ও জননীর গল্প নাটকের শুটিং) সময়ের।’
নোটিশে আরো বলা হয়, ‘বইয়ে বলা হয়েছে-গত বছরের ২১ জুন সকাল ৯টা ১২ মিনিটে জ্যামাইকার একটি হাসপাতালে হুমায়ূন আহমেদকে ভর্তি করা হয় । সেখানে বিকেল ৫টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদকে তিনবার চেকআপ করানো হয়েছে। কিন্তু সার্বক্ষণিকভাবে শাওন হুমায়ূন আহমেদের পাশে ছিলেন না। শাওনকে বার বার ফোন করে আনা হয়েছে। বইয়ে প্রকাশিত এ বক্তব্যও সঠিক নয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শাওন হুমায়ূন আহমেদের পাশে ছিলেন।’ নোটিশে বলা হয়, ‘বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে-জ্যামাইকা হাসপাতালে ভর্তির পর হুমায়ূন আহমেদের পরিস্থিতর অবনতির পর শাওনের ধারণা হয়, হুমায়ূন আহমেদ আর ভালো হবেন না। এ ধারণার পর হাসপাতালে জমা দেয়া টাকা থেকে ২০ হাজার ৪৫২ দশমিক ৬৯ মার্কিন ডলার তুলে নেন শাওন। এ অভিযোগও সত্য নয়। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছে।  হাসপাতালে ভর্তির সময় এক লাখ ১৬ হাজার ৪১৫ মার্কিন ডলার জমা দেয়া হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল বাবদ ৯৫ হাজার ৯৬২ দশমিক ৩১ ডলার রেখে বাকি ২০ হাজার ৪৫২ দশমিক ৬৯ মার্কিন ডলার ফেরত দেয়। এ টাকা ফেরত দিয়েছে চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে।’
নোটিশে আরো বলা হয়, ‘হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর ২০ জুলাই জ্যামাইকার মুসলিম সেন্টারে জানাজা হয়। এ বিষয়ে বইয়ে বলা হয়, ওখানে হুমায়ূন আহমেদের ভাই জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী (ইয়াসমিন হক) উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু জানাজায় শাওন ও তার মা তহুরা আলী উপস্থিত থাকলেও বইয়ে তাদের কথা বলা হয়নি। এর মাধ্যমে বইয়ে হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শাওনের অবহেলার চিত্র ফুটিয়ে তোলার অপচেষ্টা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করা হয় ওকিল নোটিশে। ‘বইটির ৯৫ , ৯৬ ও ২৫২ নাম্বার পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পরে শাওন এবং মাজহারুল ইসলাম বিমানের প্রথম শ্রেণীর টিকেট ছাড়া দেশে আসতে রাজি হননি। এ কারণে হুমায়ূন আহমদের মরদেহ বাংলাদেশে আনতে দেরি হয়েছে। বইয়ে লেখা এ অভিযোগও সত্য নয়।’ ‘বইয়ে আরো বলা হয়েছে, হুমায়ূন আহমেদ যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তখন শাওন রাতে তার পাশে থাকতেন না। এ অভিযোগও সত্য নয়। বাস্তবতা হচ্ছে-যখন হুমায়ূন আহমেদ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন, তখন তার কাছে যেতে হলে মাক্স পরে যেতে হতো। এ পরিস্থিতিতে তার দুটি সন্তানকে কাছে নিয়ে থাকার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করেছিলেন। এ কারণে কিছু সময়ের জন্য হুমায়ূন আহমেদের কাছে থাকতে পারেননি শাওন।’
‘বইয়ের ২৬০ নাম্বার পৃষ্ঠায় বলা হয়, প্রথম অপারেশনের পরে হুমায়ূন আহমেদকে পানীয় ও ভারী খাবার খেতে দেয়া হতো বলে যে কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাও ভিত্তীহীন।’ ভিত্তিহীন এসব তথ্য দিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্তি করার একটা প্রয়াস বলে তাদের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠান শাওন। 
উল্লেখ্য গত ১৯ জুলাই নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান। এরপর থেকে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের অবহেলার এসব কথা প্রকাশ হতে থাকে। অবশেষে প্রায় এক বছর পর এসব ঘটনা প্রকাশে জড়িতদের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন