আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান হেফাজতের

ডেস্ক রিপোর্টঃ আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার রুখে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। রোববার সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে প্রধামন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলা হয়, যখন অর্ধনগ্ন নারীকে বিজ্ঞাপনে প্রচার করা হয়, রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সৈয়দ শামসুল হক,
হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন আহমদ প্রমুখ লেখক সাহিত্যিকগণ যখন গল্প-উপন্যাসের নামে নারীকে নিয়ে যৌনসুড়সুড়িমূলক কাহিনী লিখেন, দেশে যখন সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নারীকে চূড়ান্তভাবে অপমান করা হয় তখন কী নারী জাতির অপমান হয় না। যুবলীগ নেতা কর্তৃক ৪ বছরের শিশু ধর্ষিত হলে তখন নারীর অপমান কী পরিমাণ হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন ?

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অনেকদিন আগে ধারণকৃত গ্রামের এক ওয়াজ মাহফিলে গ্রাম্য লোকদের বোধগম্য আঙ্গিকে আল্লামা আহমদ শফীর একটি উক্তিকে খণ্ডিত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে নারীসমাজের মাঝে আলিম-ওলামা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি ও মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কয়েকটি পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আদাজল খেয়ে নেমেছে। অথচ সেই মাহফিলে তিনি শালীন ও মার্জিত জীবন-যাপনে পুরুষদের প্রতি জোরালো তাগিদ দিতে গিয়ে কথাগুলো বলেছেন।

হেফাজতের বিবৃতির বাকি অংশ আমাদের সময় ডটকমের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো: 

হেফাজতে ইসলামের আমীর, দেশের শীর্ষ আলিম ও আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে প্রধামন্ত্রীর বিষোদগার এবং আলিম-ওলামার চরিত্র হননের প্রতিবাদ জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আল্লাহ, রাসূল ও ইসলামের অবমাননাকারী কতিপয় নাস্তিক ব্লগার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনকে নস্যাত করতে শুরু থেকে কিছু বিপথগামী জ্ঞানপাপী, ধর্মবিদ্বেষী বুদ্ধিজীবি, কথিত সুশীল এবং নীতিভ্রষ্ট সাংবাদিক নানান কল্পকাহিনী প্রচার করে আলিম-ওলামার চরিত্র হননে লিপ্ত রয়েছে।

নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষক সরকারের বৃত্তিভোগী এসব কুলাঙ্গার কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে একের পর মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে সক্ষম হলেও এক সময় তাদের সকল প্রপাগান্ডা যে সর্বৈব মিথ্যাচার তা সাধারণ মানুষের কাছে দিবালোকের মতোই পরিষ্কার হয়ে উঠে এবং জনগণ কর্তৃক তারা প্রত্যাখ্যাত হয়। 

বিশেষ করে ৫ মে শাপলা চত্বরে আলিম-ওলামা ও নবীপ্রেমিক নিরীহ মুসলমানদের ওপর রাতের আঁধারে পরিচালিত গণহত্যার পর কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া একের পর আজগুব, ভিত্তিহীন ও জঘন্য প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক নিয়োজিত এসব দালাল সাংবাদিকতার নামে সমাজে মিথ্যাচারের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তাদের অপপ্রচারে জনগণ বিভ্রান্ত হওয়া দূরের কথা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে দেশের মানুষ আলিম-ওলামার নেতৃত্বে ব্যাপকভাবে ঐক্যবদ্ধ আর এটাই ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠীর মাথার ব্যথার বড় কারণ।

আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, শত শত বছর ধরে উপমহাদেশের মুসলমানদের ঈমান-আকীদা, জীবনধারা ও ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষা ও সংস্কারে কওমী মাদরাসার বিরাট অবদান রয়েছে; এটি ঐতিহাসিক সত্য। আলিম-ওলামা, পীর-আউলিয়া, দরবেশ-বুজর্গদের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ইসলামের আগমন ঘটেছে এবং তাদের ত্যাগ-তিতীক্ষা ও পরিশ্রমের ফলেই আজ এদেশে ৯২% মানুষ মুসলমান। এদেশের কোটি কোটি মানুষের ঈমান, ইসলাম, তাহযীব-তামাদ্দুন ইসলামী সংস্কৃতি এবং বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তাদের শিক্ষার সোনালি ফসল। 

তিনি বলেন, অনেকদিন আগে ধারণকৃত গ্রামের এক ওয়াজ মাহফিলে গ্রাম্য লোকদের বোধগম্য আঙ্গিকে আল্লামা আহমদ শফীর একটি উক্তিকে খণ্ডিত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে নারীসমাজের মাঝে আলিম-ওলামা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি ও মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কয়েকটি পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আদাজল খেয়ে নেমেছে। অথচ সেই মাহফিলে তিনি শালীন ও মার্জিত জীবন-যাপনে পুরুষদের প্রতি জোরালো তাগিদ দিতে গিয়ে কথাগুলো বলেছেন।

ঠিক একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী মায়ের জাতিকে অপমান করা হয়েছে বলে যে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন তা একই ষড়যন্ত্রের অংশ। এবং এতে প্রমাণিত হয় সরকার নিজেই হেফাজতে ইসলামকে বাগে আনতে ব্যর্থ হয়ে এবং সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রায়ে প্রত্যাখ্যাত হবার ফলে দিশেহারা হয়ে আলিম-ওলামার চরিত্র হননে কিছু এজেন্টকে মাঠে নামিয়েছে।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য একচোখো ও স্থুল ও মতলবী উক্তির একজন প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা সঙ্গে কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ। আমরা জনগণকে এসব অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, এসব অপপ্রচারে লিপ্ত, কায়েমী স্বার্থবাদী কতিপয় সাংবাদিক উদ্দেশে বলতে চাই, সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা চর্চা করুন। হলুদ সাংবাদিকতা এবং মিথ্যাচার বন্ধ করে সত্য ও সততার পথে আসুন। আল্লাহ, রাসূল, আলিম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে অতীতে যারাই মাঠে নেমেছে জনগণকে তাদেরকে রেহায় দেয়নি। সময় থাকতে সংশোধন হতে না পারলে নিজেদের কৃতকর্মের চড়া মাসুল গুণতে হবে। একই সঙ্গে আমি যেসব ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তাদেরকে এই হীনকর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।