রামুতে আশংকাজনক হারে বাড়ছে শিশুশ্রম

রামু প্রতিনিধি: কক্সবাজারের রামু উপজেলায় আশংকাজনক হারে বাড়ছে শিশুশ্রম। শ্রম আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও দারিদ্রতা ও প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার কারণেই শহর-গ্রাম সবখানেই বাড়ছে শিশুশ্রমিক। গৃহকর্মী থেকে শুরু করে নির্মাণকাজ, গাড়ির হেলপার, হোটেল-রেস্তোরাসহ ওয়ার্কশপে ওয়েল্ডিংয়ের মতো ঝঁকিপূর্ণ কাজে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে শিশ্রশুশ্রমিকরা। নামমাত্র শ্রম মজুরি নিয়ে উপজেলার এগার ইউনিয়নে প্রায় ১৫ হাজার শিশু অপরিণত বয়সই শ্রম বিক্রির করছে। অনেক সময় অমানবিক ভাবে ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করেও পায় না শ্রমের ন্যায্যমূল্য। দরিদ্র পরিবারের শিশুরা পরিবারের অভাব মেটাতে শ্রম বিক্রিতে নেমেছে। বর্তমানে এর সংখ্যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হয় এরা। রামুর শ্রমবাজারে শিশু শ্রমিকদের অবস্থা দিন দিন অবনতি ঘটছে।

জানা গেছে, শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার না করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিধিনিষেধ থাকলেও কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না শিশুশ্রম। গৃহকর্মী থেকে শুরু করে ভবন নির্মাণ কাজে, হোটেল-রেস্তোরা, ওয়ার্কশপ, ওয়েল্ডিংয় ও ইটভাটায় ইট পুড়ানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে শিশু শ্রমিকরা। যাত্রীবাহী গাড়ি টেম্পু-জীপ-পিকআপ ও বাসের হেলপার হিসেবে বেশির ভাগই কাজ করছে শিশুরা। বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও সমভাবে শ্রম বিক্রি করছে। এতে শিশুশ্রমিকরা স্বাস্থ্য সুরায় তিকর শ্রম বিক্রি করে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। অভাবের তাড়নায় এসব শিশুদের মা-বাবা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহনের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য না পাঠিয়ে নাম মাত্র মূল্যে গৃহস্থ কাজে কিংবা এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। সারা দিন হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। কর্মক্ষেত্রে নিজেদের কোন স্বাধীনতা থাকেনা। কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী বঞ্চিত হয় হোটেল-রেস্তোরার শিশুশ্রমিকরা। তারা ভোর ৬টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত কাজ করেও ন্যায্য মজুরি পায় না। নেই চাকরির নিশ্চয়তা। যে কোনো সময় চলে যায় তাদের চাকুরি। হয়ে পড়ে মুহুর্তেই বেকার।

রামু উপজেলার প্রায় ২৮ টি ইট ভাটায় কমপক্ষে ৫ শতাধিক শিশু ইটভাটায় ইট পুড়াতে ঝুঁকিনিয়ে কাজ করছে। বয়স্ক শ্রমিকের পাশাপাশি ইট ভাটায় কর্মরত শিশু শ্রমিকদের জামালপুর, সিলেট, সাতক্ষিরা থেকে ইটভাটার মালিকরা ইট পুড়ানোর মৌসুমে অগ্রিম টাকা দেয়ার চুক্তিতে নিয়ে আসেন।

রামু প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা দর্পণ বড়–য়া জানান, শ্রম আইনে ১৪ বছরের কম বয়সের শিশুদের শ্রম বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলেও মানা হচ্ছে না সেই আইন। অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় শিশুশ্রমিকদের। সংশিষ্ট প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় চরম ভাবে লঙ্গিত হচ্ছে শিশুশ্রম আইন। রামু উপজেলার এগার ইউনিয়নের দরিদ্র পরিবারের সন্তান যারা প্রাথমিক শিার পাঠ গ্রহণের সুযোগ পায় না অথবা অল্পতেই প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে এরকম কমপক্ষে ১৫ হাজার শিশু অপরিণত বয়সেই শ্রম বিক্রি করছে।

রামু উপজেরা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল জানান, গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের শিশুরাই অভাবের তাড়নায় অপরিণত বয়সে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। শিশুশ্রম একেবারে নিষিদ্ধ করা যাবে না। অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে শিশু শ্রমিকরা যেন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ না করে। শিশুদের মৌলিক অধিকার যেন নিশ্চিত থাকে, সেদিকে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর রাখতে হবে পাশাপাশি সচেতন মানুষদের এব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন