টেকনাফে থেমে নেই সাগর পথে মালয়েশিয়াগামীদের মরণ যাত্রা

বিজিবির অভিযানে আরো ৩ দালালসহ ২৩ যাত্রী আটক

সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ
জীবিত কিংবা মৃত মালয়েশিয়া পৌঁছার কোন নিশ্চয়তা না থাকলেও টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাত্রা থেমে নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানকার বিভিন্ন পয়েন্টে রাত-দিন পাহারা দিয়েও ঠেকাতে পারছেন না সাগর পথে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের। জানা গেছে, সীমান্তে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় কিছু দালাল অল্প খরচে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর লোভনীয় অফার দিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে নিষিদ্ধ এই আদম ব্যবসা। ফলে ইতোপূর্বে টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অগনিত মালয়েশিয়া যাত্রী গভীর সাগরে অকাল প্রাণ হারিয়েছেন।
আবার কেউ কেউ বিদেশি বিভিন্ন নৌ বাহিনীর হাতে আটক হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। সাগর পথে মালয়েশিয়াগামীদের মধ্যে এমন এমন বহু হতভাগা রয়েছেন যারা দালাল চক্রের হাতে এখনো জিম্মি অবস্থায় আছেন। এই অবস্থায়, তাদের স্বজনদের বুকফাঁটা আর্তনাদ যখন চলছে ভোগান্তির শিকার পরিবারসমূহে, ঠিক তখনই গত মঙ্গলবার আরো একঝাঁক মালয়েশিয়াগামী ধরা পড়েছে টেকনাফস্থ দমদমিয়া চেকপোষ্টে কর্মরত বিজিবি সদস্যদের হাতে। জানা গেছে, এবার বিজিবির হাতে আটকের সংখ্যা ৩ দালালসহ ২৩ জন।
স্থানীয় বিজিবি জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টায় টাস্কফোর্সের সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজার থেকে টেকনাফগামী ২টি চট্টমেট্রো ছ ১১-১৪৯৮ ও  চট্টমেট্রো চ ১১-৩৭৬৮ হায়েস গাড়ি তল্লাশী চালিয়ে এদের আটক করতে সক্ষম হয়। এসময় সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা এসব লোকজনের কাছে খাদ্যসামগ্রী ও বেশকিছু ঔষধ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, আটককৃতরা হচ্ছে যথাক্রমে- গাড়ী চালক টেকনাফ নীলা ইউনিয়নের কাঞ্জরপাড়ার মোঃ হাবিবুল ইসলামের পুত্র মোঃ জিয়াবুল ইসলাম (২৭) ও উখিয়া উপজেলার পালংখালী এলাকার শামশুল আলমের পুত্র মোঃ ইব্রাহিম (২০), নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার দিঘলদী গ্রামের ফজর আলীর পুত্র মোঃ তাজুল ইসলাম (৩৫), মোঃ মতিউর রহমান নকিবের পুত্র মোঃ ফয়সাল নকিব (২০), মোঃ মান্নান ভুইয়ার পুত্র মোঃ আবদুর রহমান ভুইয়া (২৭), মৃত হোছেন মোল্লার পুত্র শাহজালাল (২৪), আবদুল কুদ্দুস ভুইয়ার পুত্র মোঃ রফিকুল ইসলাম (৩২), আবু তাহের নকিবের পুত্র মোঃ নেছার নকিব (২৪), একই জেলার পাউসাবাজার বইল্যারকান্দি এলাকার কবির হোসেনের পুত্র সোহেল (২৪), নইকাহন এলাকার আলতার পুত্র জামাল হোসেন (৩০), মোঃ আবদুর রব মিয়ার পুত্র খলিলুর রহমান (১৮), মৃত মোঃ আবুলের পুত্র মোঃ ইউনুছ (২৯), পাচড়ক্ষী এলাকার মোঃ মিলন মিয়ার পুত্র মোঃ ইসমাইল (২৪), অরজুল হকের পুত্র মোঃ শাহাজান উল্লাহ (১৭), হারিছ মিয়ার পুত্র মোঃ সানি আহমদ (১৯), মজুমপুর মাজেরচর এলাকার মোঃ সুলতান আহমদের পুত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম, উদুধী গ্রামের আমির আলীর পুত্র মোঃ রবিউল্লাহ (২০), মারওয়াদী এলাকার মোঃ আলাউদ্দিন খানের পুত্র মোঃ মোশারফ (২৫), মোঃ গিয়াস উদ্দিন খানের পুত্র মোঃ নাজমুল খান (২৬), মোঃ মখলেছের পুত্র মোঃ আলী (১৯), কাশেম আলীর পুত্র মোঃ  মোজাম্মেল (৩৩), আবুল হোসেনের পুত্র মোঃ শরিফুল ইসলাম (২৪), উচিতপুরা এলাকার মৃত আহসান আলীর পুত্র মোঃ সাইদুর রহমান (১৬)। এদিকে মালয়েশিয়াগামীদের আটকের খবরে তাৎক্ষনিক টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, ৪২ ব্যাটলিয়নের অপারেশন অফিসার এইচ কামরুল হাসান, বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মীর আহমদ, এনএসআই কর্মকর্তা মোঃ রফিক ঘটনাস্থলে ছুটে যান বলে জানা গেছে। 
আটককৃত মোঃ  মোজাম্মেল ও মোঃ নাজমুল খান জানান, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার দালাল মোঃ ইব্রাহিম ও টেকনাফের কিছু দালালের সহায়তায় তাদের বড় জাহাজে তুলে দেওয়ার জন্য জনপ্রতি ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল দালালদের। তৎমধ্যে দালালরা জনপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা করে আদাও করে। কিন্তু তাদের দূর্ভাগ্য বিজিবির হাতে ধরা পড়ায় আর ট্রলারে উঠা সম্ভব হয়নি। 
এব্যাপারে টেকনাফ ৪২ ব্যাটলিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল জাহিদ হাসান বলেন, আটককৃতদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ চিড়া,  গুড় ও পানীয় জল পাওয়া গেছে।  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মালয়েশিয়ার যাওয়ার জন্য টেকনাফে এসেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ফলে গাড়ীর চালক মোঃ ইব্রাহিম, মোঃ জিয়াবুল ইসলাম ও মোঃ তাজুল ইসলাম সহ আরো ৪ জনকে পলাতক দালাল দেখিয়ে থানায় একটি মানব পাচারের মামলা রুজু করা হয়েছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন